নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দিদের মুক্তির দাবিতে চতুর্থ বারের মতো ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আগামী রবিবার ও সোমবার (১২ ও ১৩ নভেম্বর) অবরোধ পালন করবে দলটি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত। বাংলাদেশের মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়, নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে চায়। অদ্ভুত এক শাসন চলছে বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। মানুষকে একমাত্রিক আলোচনা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ এসব না মানলেই তাকে গায়েব করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। এসময় তৃতীয় দফার অবরোধে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণে দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানান রুহুল কবির। এদিকে একই সময় অর্থাৎ আগামী রবিবার ও সোমবার ৪৮ ঘণ্টা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফায় এই অবরোধের ঘোষণা দেন দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
বিবৃতিতে অলি আহমদ বলেন, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছে। ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারকে নির্বাসিত করেছে। দেশের অর্থনীতিকে ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। বিরোধী দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, গায়েবি মামলা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। টাকা পাচার অব্যাহত রয়েছে এবং দুর্নীতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বিএনপির প্রবীণ নেতাদের জেলে আটকিয়ে রেখেছে। অনেকের মিথ্যা মামলায় সাজাও দিয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এই সকল বিরোধী দলের নেতারা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত। জনগণের মানবাধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, ন্যায়বিচারের অধিকার এবং সর্বোপরি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করছে। মানুষকে এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে চেষ্টা করছে। এটাই তাদের একমাত্র অপরাধ। উল্লেখ্য, সর্বশেষ অবরোধের কর্মসূচিও এলডিপির পক্ষ থেকে প্রথমে ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে বিএনপিসহ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলো একই কর্মসূচি দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশ হামলার অভিযোগ করে ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতাল ডাকে বিএনপি। পরে সেই হরতালে সমর্থন জানান জামায়াতে ইসলামী। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিনদিন সর্বাত্মক অবরোধ ডাকে দল দুটি। পরে দ্বিতীয় দফায় ৫ থেকে ৬ নভেম্বর এবং তৃতীয় দফায় ৮ থেকে ৯ নভেম্বর অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত।
ঢাকার বাড্ডায় বাসে আগুন
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা তৃতীয় দফা অবরোধের মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে রাইদা পরিবহনের বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম জানান। তিনি বলেন, বাসটি পোস্তাগোলা থেকে উত্তরার দিকে যাচ্ছিল। আগুন দেওয়ার পরই বারিধারা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অপরদিকে মগবাজারে ‘বাসে আগুন দিতে যাওয়া’ স্বেচ্ছাসেবক দলের দুইজনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন- হাতিরঝিল থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবাদুল ব্যাপারী (৩৭) এবং সদস্য সবুজ মিয়া (২৭)। তবে তাদের কখন, কোথায়, কীভাবে আটক করা হয়েছে সে ব্যাপারে কিছু জানাননি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল ফারুক। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় দফার অবরোধ চলছে। এই কর্মসূচির শুরু থেকেই দেশের বিভ্ন্নি স্থানে বাসে আগুন ও ভাঙচুরের খবর আসছে।
বগুড়ায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে ২ ট্রাকে আগুন
বগুড়া সংবাদদাতা জানান, বগুড়ায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের নাগরকান্দি এলাকায় এবং পৌনে ১০টার দিকে সদরের মানিকচক বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মানিকচক বাজারের ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ বলেন, অবরোধের কারণে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীর ট্রাকটি। রাত পৌনে ১০টার দিকে দুই যুবক মাথায় হেলমেট পড়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে পেট্রল বোমা টাইপের কিছু একটা নিক্ষেপ করে। এতে ট্রাকটির চালকের বসার জায়গা ও কাগজপত্র পুড়ে গেছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে, পুলিশ যাওয়ার আগেই শ্রমিকরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এর আগে, রাত পৌনে ৯টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের নাগরকান্দি এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ট্রাক চালকের সহকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, লালমনিরহাট থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। নাগরকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা ট্রাক থামাতে বলে। পরে আমাদের ট্রাক থেকে নামিয়ে মারধর করে ও ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সাব অফিসার মোমিনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় একঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়।
শ্রীপুরে কাভার্ডভ্যানে আগুন
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ২ নম্বর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে কাভার্ডভ্যানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা যায়। এ সময় স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানটিতে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখা যায়। জানতে পেরে পাশের একটি দোকানে অবস্থান করা ভ্যানটির চালক দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। এরপর আশপাশের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে নেভানোর আগেই কাভার্ডভ্যানটির কেবিনের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে আমিসহ বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে যাই। গাড়িটাতে কারা আগুন দিয়েছে তা জানতে পারিনি। তবে খুব দ্রুত আগুন বড় আকারে ছড়িয়ে পড়া দেখে মনে হয়েছে পেট্রল দিয়ে ধরানো হয়েছিল। এ বিষয়ে কাভার্ডভ্যান চালকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। তবে এখনো এ বিষয়ে খবর পাননি বলে জানিয়েছেন মাওনা হাইওয়ে থানা-পুলিশ। থানার পরিদর্শক (ট্রাফিক) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এমন ঘটনার খবর পাইনি। খোঁজ নিব।’