ঢাকা ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

ফেরিঘাটে গিজগিজ করছে মানুষ, স্বাস্থ্যবিধির করুণ হাল

  • আপডেট সময় : ০২:১২:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১
  • ১২৮ বার পড়া হয়েছে


মাদারীপুর প্রতিনিধি : গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১১টা। বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছাল রো রো ফেরি শাহ্ পরান। ফেরিতে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আর তিনটি ছোট পিকআপ ভ্যান ছাড়া গিজগিজ করছে মানুষ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা থেকে এভাবেই বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা।
গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুটি ফেরি যাত্রী বোঝাই করে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসে। ফেরি দুটিতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার যাত্রী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বাংলাবাজার ঘাট থেকেও যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়ার উদ্দেশে দুটি ফেরি ছাড়া হয়।
বাংলাবাজার ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফেরি ছাড়া হচ্ছে না। যখনই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরি ছাড়া হয়, তখনই ওই ফেরিতে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। যাত্রীদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এর ফলে করোনার লকডাউনের স্বাস্থ্যবিধি মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে সীমিত আকারে তিন থেকে চারটি ফেরি জরুরি ভিত্তিতে আসা যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। রোববার সকাল আটটায় কুঞ্জলতা ও সাড়ে আটটায় কুমিল্লা নামের দুটি ছোট ফেরি শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর শিমুলিয়া থেকেও সকাল আটটায় ফরিদপুর নামের একটি ছোট ফেরি সকাল সাড়ে নয়টায় বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছায়। এতে কমপক্ষে দেড় হাজার যাত্রী ছিলেন। এরপর সোয়া ১১টায় বাংলাবাজার ঘাটে আসে রো রো ফেরি শাহ্ পরান। এ ফেরিতেও প্রায় সাড়ে তিন হাজার যাত্রী ছিলেন।
সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে দেখা যায়, ঘাটে বেশির ভাগ ফেরিই নোঙর করে রাখা। উভয় ঘাট থেকে তিন থেকে চারটি ফেরি চলাচল করছে। চলাচলরত ফেরিগুলোয় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ছাড়াও ছিল হাজার হাজার যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে করোনা নিয়ে নেই কোনো সচেতনতা। যাত্রীরা একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো। কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে নেই মাস্ক। ঘাট এলাকায়ও নেই করোনা নিয়ে কোনো ধরনের সচেতনতা। ফেরিতে যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাহিন্দ্র করে ভেঙে ভেঙে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
ঘরমুখী যাত্রীরা জানান, মাহিন্দ্র ও অটোরিকশায় বাংলাবাজার ঘাট থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৮০০ টাকা। মাহিন্দ্র ও অটোরিকশায় কমপক্ষে আটজন বহন করা হচ্ছে। মোটরসাইকেলে বরিশাল পর্যন্ত ২ জনের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা, খুলনা ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাদারীপুরে ৩০০ থেকে ৪০০, ভাঙ্গা ৬০০, ফরিদপুরে ১ হাজার ৫০০ আর গোপালগঞ্জে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে খুলনাগামী যাত্রী হেনা বেগম বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়া ঘাটে দুই ঘণ্টা বসা ছিলাম। ভিড় ঠেলে ফেরিতে উঠতে গিয়ে আমি পন্টুনে পড়ে যাই। মানুষের চাপ আর পায়ের আঘাতের কষ্ট নিয়েও হাল ছাড়ি নাই। ফেরিতে উঠে পার হইছি। এখন ভাড়া বেশি হলেও ভালোভাবে বাড়ি যাইতে পাড়লে হয়।’
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আসা বরিশালগামী যাত্রী আলী হাওলাদার বলেন, তীব্র রোদ আর গরমে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠতে পারেন। এমন কষ্ট জানলে ঢাকা থেকে আসতেন না।
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ। তবে লাশবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য সকালে দুটি ছোট ফেরি ছাড়া হয়েছে। সেখানে কিছু মোটরসাইকেল ও কিছু যাত্রী ওঠানো হয়। শিমুলিয়া থেকে দুটি ফেরি বাংলাবাজার ঘাটে আসে। এ ফেরিতে প্রচুর যাত্রী ছিলেন। ওপার থেকে এত যাত্রী নিয়ে ঘাটে এলে কী করার থাকে?
দুপুর ১২টায় বাংলাবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আশিকুর রহমান বলেন, সকাল থেকে ৩০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স দুটি ফেরিতে তোলা হয়। এ ছাড়া রোগীবাহী কয়েকটি গাড়িও ফেরিতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘাটে দিনের বেলায় ফেরি না চলায় বাংলাবাজার ঘাটের টার্মিনালে ৫৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। ফেরি কর্তৃপক্ষ ফেরি না ছাড়লে যানজট কমবে না।
পারাপার ঠেকাতে বিজিবি মোতায়েন : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল ঠেকানো ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে দেশের প্রধান দুই ফেরিঘাটে (পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকেই বিজিবি সদস্যরা ফেরিঘাট এলাকায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে ফেরি পার হচ্ছিল। শনিবার ফেরি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। তাই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, শনিবার রাত থেকেই বিজিবি মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছে। একটি টিম ধলেশ্বরী সেতুর সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে। তারা কোনো জরুরি যানবাহন ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। বাকি সদস্যরা শিমুলিয়া ঘাট ও আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। রাতে বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতায় শনিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটাকে বাংলাদেশে করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বলছেন। করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় প্রথমে ২১ এপ্রিল ও পরে তা বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর সেটি বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। ঈদ সামনে আসায় ছুটি ঘোষণা করলেও সবাইকে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আন্তঃজেলা বাস ও নৌ যোগাযোগও বন্ধ করা হয়েছে। তবু নানাভাবে বিকল্প উপায়ে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ। ফেরিঘাটে প্রচ- ভিড়। যা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অবস্থায় বিজিবি মোতায়েন করা হলো।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ফেরিঘাটে গিজগিজ করছে মানুষ, স্বাস্থ্যবিধির করুণ হাল

আপডেট সময় : ০২:১২:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১


মাদারীপুর প্রতিনিধি : গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১১টা। বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছাল রো রো ফেরি শাহ্ পরান। ফেরিতে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আর তিনটি ছোট পিকআপ ভ্যান ছাড়া গিজগিজ করছে মানুষ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা থেকে এভাবেই বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা।
গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুটি ফেরি যাত্রী বোঝাই করে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসে। ফেরি দুটিতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার যাত্রী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বাংলাবাজার ঘাট থেকেও যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়ার উদ্দেশে দুটি ফেরি ছাড়া হয়।
বাংলাবাজার ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফেরি ছাড়া হচ্ছে না। যখনই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরি ছাড়া হয়, তখনই ওই ফেরিতে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। যাত্রীদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এর ফলে করোনার লকডাউনের স্বাস্থ্যবিধি মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে সীমিত আকারে তিন থেকে চারটি ফেরি জরুরি ভিত্তিতে আসা যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। রোববার সকাল আটটায় কুঞ্জলতা ও সাড়ে আটটায় কুমিল্লা নামের দুটি ছোট ফেরি শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর শিমুলিয়া থেকেও সকাল আটটায় ফরিদপুর নামের একটি ছোট ফেরি সকাল সাড়ে নয়টায় বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছায়। এতে কমপক্ষে দেড় হাজার যাত্রী ছিলেন। এরপর সোয়া ১১টায় বাংলাবাজার ঘাটে আসে রো রো ফেরি শাহ্ পরান। এ ফেরিতেও প্রায় সাড়ে তিন হাজার যাত্রী ছিলেন।
সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে দেখা যায়, ঘাটে বেশির ভাগ ফেরিই নোঙর করে রাখা। উভয় ঘাট থেকে তিন থেকে চারটি ফেরি চলাচল করছে। চলাচলরত ফেরিগুলোয় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ছাড়াও ছিল হাজার হাজার যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে করোনা নিয়ে নেই কোনো সচেতনতা। যাত্রীরা একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো। কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে নেই মাস্ক। ঘাট এলাকায়ও নেই করোনা নিয়ে কোনো ধরনের সচেতনতা। ফেরিতে যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাহিন্দ্র করে ভেঙে ভেঙে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
ঘরমুখী যাত্রীরা জানান, মাহিন্দ্র ও অটোরিকশায় বাংলাবাজার ঘাট থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৮০০ টাকা। মাহিন্দ্র ও অটোরিকশায় কমপক্ষে আটজন বহন করা হচ্ছে। মোটরসাইকেলে বরিশাল পর্যন্ত ২ জনের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা, খুলনা ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাদারীপুরে ৩০০ থেকে ৪০০, ভাঙ্গা ৬০০, ফরিদপুরে ১ হাজার ৫০০ আর গোপালগঞ্জে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে খুলনাগামী যাত্রী হেনা বেগম বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়া ঘাটে দুই ঘণ্টা বসা ছিলাম। ভিড় ঠেলে ফেরিতে উঠতে গিয়ে আমি পন্টুনে পড়ে যাই। মানুষের চাপ আর পায়ের আঘাতের কষ্ট নিয়েও হাল ছাড়ি নাই। ফেরিতে উঠে পার হইছি। এখন ভাড়া বেশি হলেও ভালোভাবে বাড়ি যাইতে পাড়লে হয়।’
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আসা বরিশালগামী যাত্রী আলী হাওলাদার বলেন, তীব্র রোদ আর গরমে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠতে পারেন। এমন কষ্ট জানলে ঢাকা থেকে আসতেন না।
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ। তবে লাশবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য সকালে দুটি ছোট ফেরি ছাড়া হয়েছে। সেখানে কিছু মোটরসাইকেল ও কিছু যাত্রী ওঠানো হয়। শিমুলিয়া থেকে দুটি ফেরি বাংলাবাজার ঘাটে আসে। এ ফেরিতে প্রচুর যাত্রী ছিলেন। ওপার থেকে এত যাত্রী নিয়ে ঘাটে এলে কী করার থাকে?
দুপুর ১২টায় বাংলাবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আশিকুর রহমান বলেন, সকাল থেকে ৩০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স দুটি ফেরিতে তোলা হয়। এ ছাড়া রোগীবাহী কয়েকটি গাড়িও ফেরিতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘাটে দিনের বেলায় ফেরি না চলায় বাংলাবাজার ঘাটের টার্মিনালে ৫৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। ফেরি কর্তৃপক্ষ ফেরি না ছাড়লে যানজট কমবে না।
পারাপার ঠেকাতে বিজিবি মোতায়েন : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল ঠেকানো ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে দেশের প্রধান দুই ফেরিঘাটে (পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকেই বিজিবি সদস্যরা ফেরিঘাট এলাকায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে ফেরি পার হচ্ছিল। শনিবার ফেরি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। তাই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, শনিবার রাত থেকেই বিজিবি মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছে। একটি টিম ধলেশ্বরী সেতুর সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে। তারা কোনো জরুরি যানবাহন ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। বাকি সদস্যরা শিমুলিয়া ঘাট ও আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। রাতে বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতায় শনিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটাকে বাংলাদেশে করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বলছেন। করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় প্রথমে ২১ এপ্রিল ও পরে তা বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর সেটি বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। ঈদ সামনে আসায় ছুটি ঘোষণা করলেও সবাইকে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আন্তঃজেলা বাস ও নৌ যোগাযোগও বন্ধ করা হয়েছে। তবু নানাভাবে বিকল্প উপায়ে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ। ফেরিঘাটে প্রচ- ভিড়। যা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অবস্থায় বিজিবি মোতায়েন করা হলো।