ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ফুটবল খেলায় গ্রামের মানুষের অনেক কথা শুনতে হয়েছে স্বপ্নাকে

  • আপডেট সময় : ১২:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

রংপুর প্রতিনিধি : প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারা। এই দলে রয়েছেন রংপুরের মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না। ভারতের বিপক্ষে দুই গোলসহ এই টুর্নামেন্টে তিনি মোট চার গোল করেছেন। তার এই সাফল্যে আনন্দে ভাসছে স্বজনরাসহ এলাকাবাসী। জয়ের পর রাতেই মিষ্টি বিতরণ ও বিজয় র‌্যালি করা হয়। স্বপ্নার বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুরিনী ইউনিয়নের পালিচড়া এলাকার জয়রাম গ্রামে। তার বাবা বর্গাচাষি মোকছার আলী এবং মা গৃহিণী লিপি বেগম। এলাকাবাসী বলেন, প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলে তাদের গ্রামের মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্নাও খেলেছেন। এ কারণে তাদের আনন্দ অনেক বেশি। এখন সারা দেশ তথা গোটা বিশ্ব পালিচড়া গ্রামটি নতুন করে চিনবে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় বলে জানান তারা।
স্বপ্নার মা লিপি বেগম মেয়ের সাফল্যে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘স্বপ্না ফুটবল খেলুক, এটা এলাকার মানুষ ও স্বজনরা চাইতো না। তারা বলতো, মেয়ে, তাও আবার অজপাড়া গ্রামের মেয়ে কেন ফুটবল খেলবে? কিন্তু স্থানীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় হারুন আমার কাছে এসে বলেন স্বপ্নাকে ফুটবল কোচিং করাবেন। আমি প্রথমে রাজি হইনি। পরে রাজি হই। এখন তো আমার মেয়ে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে এনেছে। তার জন্য পালিচড়া গ্রামসহ দেশবাসী আজ গর্বিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি কোনও কাজ করতে পারেন না। আমি ধান শুকানোর কাজ করে সংসার চালাই। আমার তিন মেয়ে, কোনও ছেলে নেই। অনেক কষ্ট করে তাদের বড় করেছি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। স্বপ্না ফুটবল খেলুক তা প্রথম দিকে চাইতাম না। কারণ, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা নানান কথা বলতেন। আজ সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়েছে। সাফ ফুটবলে খেলে জয় ছিনিয়ে এনেছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে!’
প্রতিবেশী আলেয়া বেগম ও মমতাজ বেগম বলেন, ‘স্বপ্না পালিচড়া তথা বাংলাদেশের গর্ব। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত। দোয়া করি সে অনেক দূর এগিয়ে যাক।’ স্বপ্নার সতীর্থ আসমা, রাখি ও মরিয়মসহ অনেকে বলেন, ‘আমাদের অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে স্বপ্না দেখিয়ে দিয়েছে, সাধনা করলেই সফল হওয়া যায়। তার মতো আমরাও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতে চাই। সেজন্য কঠোর অনুশীলন করছি। স্বপ্নাকে স্যালুট, তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য।’ স্বপ্নার কোচ রাসেল মিয়া বলেন, ‘স্বপ্না অসম্ভব পরিশ্রমী। তার দীর্ঘ সাধনার ফল সে পেয়েছে। সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’ সদ্যপুস্কুরিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ‘স্বপ্না আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। এই গ্রামের অনেক মেয়ে ফুটবল খেলে। স্বপ্নাকে দেখে তারা উৎসাহ পায়। আমরা স্বপ্নার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি। গ্রামে ফিরলেই তাকে সংবর্ধনা জানাবো।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

ফুটবল খেলায় গ্রামের মানুষের অনেক কথা শুনতে হয়েছে স্বপ্নাকে

আপডেট সময় : ১২:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

রংপুর প্রতিনিধি : প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারা। এই দলে রয়েছেন রংপুরের মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না। ভারতের বিপক্ষে দুই গোলসহ এই টুর্নামেন্টে তিনি মোট চার গোল করেছেন। তার এই সাফল্যে আনন্দে ভাসছে স্বজনরাসহ এলাকাবাসী। জয়ের পর রাতেই মিষ্টি বিতরণ ও বিজয় র‌্যালি করা হয়। স্বপ্নার বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুরিনী ইউনিয়নের পালিচড়া এলাকার জয়রাম গ্রামে। তার বাবা বর্গাচাষি মোকছার আলী এবং মা গৃহিণী লিপি বেগম। এলাকাবাসী বলেন, প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলে তাদের গ্রামের মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্নাও খেলেছেন। এ কারণে তাদের আনন্দ অনেক বেশি। এখন সারা দেশ তথা গোটা বিশ্ব পালিচড়া গ্রামটি নতুন করে চিনবে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় বলে জানান তারা।
স্বপ্নার মা লিপি বেগম মেয়ের সাফল্যে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘স্বপ্না ফুটবল খেলুক, এটা এলাকার মানুষ ও স্বজনরা চাইতো না। তারা বলতো, মেয়ে, তাও আবার অজপাড়া গ্রামের মেয়ে কেন ফুটবল খেলবে? কিন্তু স্থানীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় হারুন আমার কাছে এসে বলেন স্বপ্নাকে ফুটবল কোচিং করাবেন। আমি প্রথমে রাজি হইনি। পরে রাজি হই। এখন তো আমার মেয়ে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে এনেছে। তার জন্য পালিচড়া গ্রামসহ দেশবাসী আজ গর্বিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি কোনও কাজ করতে পারেন না। আমি ধান শুকানোর কাজ করে সংসার চালাই। আমার তিন মেয়ে, কোনও ছেলে নেই। অনেক কষ্ট করে তাদের বড় করেছি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। স্বপ্না ফুটবল খেলুক তা প্রথম দিকে চাইতাম না। কারণ, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা নানান কথা বলতেন। আজ সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়েছে। সাফ ফুটবলে খেলে জয় ছিনিয়ে এনেছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে!’
প্রতিবেশী আলেয়া বেগম ও মমতাজ বেগম বলেন, ‘স্বপ্না পালিচড়া তথা বাংলাদেশের গর্ব। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত। দোয়া করি সে অনেক দূর এগিয়ে যাক।’ স্বপ্নার সতীর্থ আসমা, রাখি ও মরিয়মসহ অনেকে বলেন, ‘আমাদের অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে স্বপ্না দেখিয়ে দিয়েছে, সাধনা করলেই সফল হওয়া যায়। তার মতো আমরাও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতে চাই। সেজন্য কঠোর অনুশীলন করছি। স্বপ্নাকে স্যালুট, তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য।’ স্বপ্নার কোচ রাসেল মিয়া বলেন, ‘স্বপ্না অসম্ভব পরিশ্রমী। তার দীর্ঘ সাধনার ফল সে পেয়েছে। সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’ সদ্যপুস্কুরিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ‘স্বপ্না আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। এই গ্রামের অনেক মেয়ে ফুটবল খেলে। স্বপ্নাকে দেখে তারা উৎসাহ পায়। আমরা স্বপ্নার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি। গ্রামে ফিরলেই তাকে সংবর্ধনা জানাবো।’