ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

ফুটপাতের ফুডকোর্টেই স্বপ্ন বোনেন জয়া-বিজয়া চাকমা

  • আপডেট সময় : ০৬:১৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নারী ও শিশু ডেস্ক: ফুটপাতে ছোট্ট একটি ফুডকোর্ট। সেখানেই চায়ের কেটলি থেকে উঠছে ধোঁয়া। পাশে গরম তাওয়ায় সেঁকা হচ্ছে পাহাড়ি পিঠা। ক্রেতারাও একে একে আসছেন সেই ফুডকোর্টের সামনে। বসে গল্পগুজব করছেন, ফাঁকে এসব পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্যের।

ওই এলাকায় আরো ১৫টি ফুডকোর্ট রয়েছে। তবে এ ফুডকোর্টটি আলাদা। এটি পরিচালনা করছেন দুই বোন। তারা হলেন জয়া চাকমা (২৯) ও বিজয়া চাকমা (২২)। পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায় বলে তারা ফুডকোর্টের নামও দিয়েছেন ‘দ্য হিলস কিচেন’। ছোট্ট এ ফুডকোর্ট ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন তারা।

জয়া চাকমা পরিবারের বড় মেয়ে। দুই বোনই স্বল্প বেতনে নগরের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কামাইছড়া ইউনিয়নে। বাবা সুজন চাকমা পেশায় কৃষক। মা সুজাতা চাকমা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। মূলত দুই বোনের আয়েই চলে সংসারের মূল খরচ।

দুই বোন জানান, দু’জনই ভিন্ন দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োজিত। স্বল্প বেতনের ওই চাকরির আয়ে পরিবারের খরচের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হতো। তাই তাদের ব্যতিক্রম কিছু করার ভাবনা মাথায় আসে। ওই ভাবনা থেকেই ফুডকোর্ট দিয়েছেন। প্রতিদিনই অফিস শেষ করে নিজেদের ফুডকোর্টে পিঠাসহ খাবার বিক্রি করেন।

নতুন জীবনের পথ: গত বছরের ডিসেম্বরে ছোট ভাই বিজয়কে নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিলেন জয়া ও বিজয়া। জয়ার ৯ বছর বয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০২২ সালে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। জয়া চাকমা বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। পরিবার পাশে ছিল বলে উঠে দাঁড়াতে পেরেছি। একদিন বোনের সঙ্গে কথাবার্তার এক ফাঁকে খাবারের দোকানের সিদ্ধান্ত নিই। কারণ অফিসের বেতন দিয়ে কিছু হবে না।’

গত আগস্টে শুরুতে দুই বোন জমানো কিছু টাকা আর এক স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকায় দোকানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনেন। পরের মাসে দুই হাজার টাকায় একটি ফুডকোর্ট ভাড়া করেন। ওই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। প্রথমদিকে ক্রেতা কম থাকলেও ধীরে ধীরে তাদের বেচাবিক্রি বেড়েছে। ছোট ভাই বিজয় পড়াশোনার পাশাপাশি কেনাকাটা আর দোকানের সরঞ্জাম গুছানোর কাজ করেন। দুই বোন অফিস থেকে এসে বিকেলে ফুডকোর্টে বিক্রি শুরু করেন।

বিজয়া চাকমা বলেন, ‘প্রথম দিন দোকান খুলেই আমরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। ওই পোস্ট বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। ভাবিনি এত সাড়া পাবো। অনেক অচেনা মানুষ খুঁজে খুঁজে এসেছেন। তারা পিঠা খেয়ে প্রশংসা করার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেছেন।’

পাহাড়ি পিঠা খেতে ভিড়: দুই বোনের ছোট্ট ফুডকোর্টটিতে এখন বিক্রি হয় তিন ধরনের পাহাড়ি পিঠার পাশাপাশি চটপটি, মুন্ডি, ছিটা পিঠা আর চা। সন্ধ্যা নামলেই আশপাশের অফিসের কর্মীদের পাশাপাশি ভিড় জমে কলেজ ও কোচিংয়ের ছাত্রছাত্রীদের।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ফুটপাতের ফুডকোর্টেই স্বপ্ন বোনেন জয়া-বিজয়া চাকমা

আপডেট সময় : ০৬:১৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: ফুটপাতে ছোট্ট একটি ফুডকোর্ট। সেখানেই চায়ের কেটলি থেকে উঠছে ধোঁয়া। পাশে গরম তাওয়ায় সেঁকা হচ্ছে পাহাড়ি পিঠা। ক্রেতারাও একে একে আসছেন সেই ফুডকোর্টের সামনে। বসে গল্পগুজব করছেন, ফাঁকে এসব পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্যের।

ওই এলাকায় আরো ১৫টি ফুডকোর্ট রয়েছে। তবে এ ফুডকোর্টটি আলাদা। এটি পরিচালনা করছেন দুই বোন। তারা হলেন জয়া চাকমা (২৯) ও বিজয়া চাকমা (২২)। পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায় বলে তারা ফুডকোর্টের নামও দিয়েছেন ‘দ্য হিলস কিচেন’। ছোট্ট এ ফুডকোর্ট ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন তারা।

জয়া চাকমা পরিবারের বড় মেয়ে। দুই বোনই স্বল্প বেতনে নগরের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কামাইছড়া ইউনিয়নে। বাবা সুজন চাকমা পেশায় কৃষক। মা সুজাতা চাকমা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। মূলত দুই বোনের আয়েই চলে সংসারের মূল খরচ।

দুই বোন জানান, দু’জনই ভিন্ন দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োজিত। স্বল্প বেতনের ওই চাকরির আয়ে পরিবারের খরচের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হতো। তাই তাদের ব্যতিক্রম কিছু করার ভাবনা মাথায় আসে। ওই ভাবনা থেকেই ফুডকোর্ট দিয়েছেন। প্রতিদিনই অফিস শেষ করে নিজেদের ফুডকোর্টে পিঠাসহ খাবার বিক্রি করেন।

নতুন জীবনের পথ: গত বছরের ডিসেম্বরে ছোট ভাই বিজয়কে নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিলেন জয়া ও বিজয়া। জয়ার ৯ বছর বয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০২২ সালে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। জয়া চাকমা বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। পরিবার পাশে ছিল বলে উঠে দাঁড়াতে পেরেছি। একদিন বোনের সঙ্গে কথাবার্তার এক ফাঁকে খাবারের দোকানের সিদ্ধান্ত নিই। কারণ অফিসের বেতন দিয়ে কিছু হবে না।’

গত আগস্টে শুরুতে দুই বোন জমানো কিছু টাকা আর এক স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকায় দোকানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনেন। পরের মাসে দুই হাজার টাকায় একটি ফুডকোর্ট ভাড়া করেন। ওই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। প্রথমদিকে ক্রেতা কম থাকলেও ধীরে ধীরে তাদের বেচাবিক্রি বেড়েছে। ছোট ভাই বিজয় পড়াশোনার পাশাপাশি কেনাকাটা আর দোকানের সরঞ্জাম গুছানোর কাজ করেন। দুই বোন অফিস থেকে এসে বিকেলে ফুডকোর্টে বিক্রি শুরু করেন।

বিজয়া চাকমা বলেন, ‘প্রথম দিন দোকান খুলেই আমরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। ওই পোস্ট বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। ভাবিনি এত সাড়া পাবো। অনেক অচেনা মানুষ খুঁজে খুঁজে এসেছেন। তারা পিঠা খেয়ে প্রশংসা করার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেছেন।’

পাহাড়ি পিঠা খেতে ভিড়: দুই বোনের ছোট্ট ফুডকোর্টটিতে এখন বিক্রি হয় তিন ধরনের পাহাড়ি পিঠার পাশাপাশি চটপটি, মুন্ডি, ছিটা পিঠা আর চা। সন্ধ্যা নামলেই আশপাশের অফিসের কর্মীদের পাশাপাশি ভিড় জমে কলেজ ও কোচিংয়ের ছাত্রছাত্রীদের।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ