প্রত্যাশা ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ফ্রান্স স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন- তা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
তিনি বলেন, ‘এই বেপরোয়া এই সিদ্ধান্ত হামাসের প্রোপাগান্ডাকে সহায়তা করবে এবং সেখানে শান্তিস্থাপন প্রক্রিয়াকে আরো পিছিয়ে দেবে। গত ৭ অক্টোবর যারা হামাসের হামলার শিকার হয়েছিলেন, ম্যাক্রোঁর ঘোষণা তাদের প্রতি চপোটাঘাত।’
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ম্যাক্রোঁর এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করে এবং আরেকটি ইরানি প্রক্সি তৈরির ঝুঁকি তৈরি করে’। এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার অর্থ ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য একটি লঞ্চ প্যাড স্থাপন করা।’
নেতানিয়াহু আরো বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের পাশাপাশি কোনো রাষ্ট্র চায় না; তারা ইসরায়েলের পরিবর্তে একটি রাষ্ট্র চায়’। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজও ফ্রান্সের এই পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক এবং সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘ইসরায়েল এমন একটি ফিলিস্তিনি সত্তা প্রতিষ্ঠা করতে দেবে না, যা আমাদের নিরাপত্তার ক্ষতি করবে, আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন- আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স। পরে এক এক্স বার্তাতেও বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। পোস্টে ম্যাক্রোঁ লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির প্রতি তার ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি বজায় রেখে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো গাজায় চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি এবং সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা। শান্তি সম্ভব, তবে আমাদের এখনই একটি যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সব বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে এবং গাজাবাসীর জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।’ এছাড়া হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি বলেন, গাজাকে নিরাপদ এবং পুনর্র্নিমাণ করা দরকার। আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন এবং তার টিকে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য ফিলিস্তিনকে নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হতে হবে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে ১৪২টি দেশ বর্তমানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় অথবা স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী পশ্চিমা দেশ তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্য নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন মে মাসে ইঙ্গিত দেয় যে তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু ম্যাক্রোঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং জি-৭ সদস্য ও ইউরোপের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেবে ফ্রান্স। সুত্র: আলজাজিরা