ঢাকা ০৯:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলো ফ্রান্স

  • আপডেট সময় : ১১:২২:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে এই স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া সর্বশেষ দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। এর ফলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আরও জোরালো হলো। ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘শান্তির সময় এসেছে’ এবং ‘গাজায় চলমান যুদ্ধকে কিছুই ন্যায্যতা দেয় না।’

ফ্রান্স এবং সৌদি আরব ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তথা দুই রাষ্ট্র সমাধান ইস্যুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এক দিনের একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছে। জি৭-এর সদস্য জার্মানি, ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে অংশ নেয়নি।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, আন্দোরা এবং সান মারিনোর । এর আগে রবিবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগাল।

এর ফলে গাজায় চলমান মানবিক সংকট এবং পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণের কারণে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।

তবে ইসরায়েল বলেছে যে, এই স্বীকৃতি হামাসকে পুরস্কৃত করবে। কারণ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জন হত্যা করে। জিম্মি করে রাখে আরও ২৫১ জনকে।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এরপর থেকে গাজায় অভিযান চালিয়ে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ফরাসি নেতা সম্মেলনে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করা এবং হামাসের হাতে আটক অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার সময় এসেছে। তিনি অন্তহীন যুদ্ধের বিপদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, ন্যায় সর্বদা শক্তির ওপরে প্রাধান্য পেতে হবে।

তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মধ্যপ্রাচ্যে একটি ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই শান্তি গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্যই আমাদের সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে সংরক্ষণ করতে হবে, যা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে শান্তি ও নিরাপত্তায় পাশাপাশি দেখতে দেবে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ জাতিসংঘে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষ থেকে বক্তব্য রেখেছেন।

তিনি পুনরায় উল্লেখ করেছেন যে, দুই-রাষ্ট্র সমাধানই এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি অর্জনের একমাত্র উপায়।

১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের দেড় শ’র বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার আশা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে যে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল এই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। যদিও ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের অনাগ্রহের কারণে এ উদ্যোগ কখনো আলোর মুখ দেখেনি।

এখন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের মিত্রদের দেওয়া এই স্বীকৃতি বাস্তবে বড় কোনো পরিবর্তন না আনলেও তা ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটি শক্তিশালী নৈতিক বার্তা। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আরও জোরদার হলো। যদিও এসবের তোয়াক্কা না করে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ফিলিস্তিনে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এসি/আপ্র/২৩/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কাল মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলো ফ্রান্স

আপডেট সময় : ১১:২২:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে এই স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া সর্বশেষ দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। এর ফলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আরও জোরালো হলো। ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘শান্তির সময় এসেছে’ এবং ‘গাজায় চলমান যুদ্ধকে কিছুই ন্যায্যতা দেয় না।’

ফ্রান্স এবং সৌদি আরব ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তথা দুই রাষ্ট্র সমাধান ইস্যুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এক দিনের একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছে। জি৭-এর সদস্য জার্মানি, ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে অংশ নেয়নি।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, আন্দোরা এবং সান মারিনোর । এর আগে রবিবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগাল।

এর ফলে গাজায় চলমান মানবিক সংকট এবং পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণের কারণে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।

তবে ইসরায়েল বলেছে যে, এই স্বীকৃতি হামাসকে পুরস্কৃত করবে। কারণ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জন হত্যা করে। জিম্মি করে রাখে আরও ২৫১ জনকে।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এরপর থেকে গাজায় অভিযান চালিয়ে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ফরাসি নেতা সম্মেলনে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করা এবং হামাসের হাতে আটক অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার সময় এসেছে। তিনি অন্তহীন যুদ্ধের বিপদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, ন্যায় সর্বদা শক্তির ওপরে প্রাধান্য পেতে হবে।

তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মধ্যপ্রাচ্যে একটি ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই শান্তি গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্যই আমাদের সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে সংরক্ষণ করতে হবে, যা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে শান্তি ও নিরাপত্তায় পাশাপাশি দেখতে দেবে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ জাতিসংঘে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষ থেকে বক্তব্য রেখেছেন।

তিনি পুনরায় উল্লেখ করেছেন যে, দুই-রাষ্ট্র সমাধানই এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি অর্জনের একমাত্র উপায়।

১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের দেড় শ’র বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার আশা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে যে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল এই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। যদিও ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের অনাগ্রহের কারণে এ উদ্যোগ কখনো আলোর মুখ দেখেনি।

এখন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের মিত্রদের দেওয়া এই স্বীকৃতি বাস্তবে বড় কোনো পরিবর্তন না আনলেও তা ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটি শক্তিশালী নৈতিক বার্তা। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আরও জোরদার হলো। যদিও এসবের তোয়াক্কা না করে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ফিলিস্তিনে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এসি/আপ্র/২৩/০৯/২০২৫