ঢাকা ১১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

ফিলিপাইনে ধেয়ে যাচ্ছে সুপার টাইফুন ফাং ওং, নিরাপদ আশ্রয়ে ৯ লাখ মানুষ

  • আপডেট সময় : ০৬:৪১:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন ফাং ওং -ছবি রয়টার্স

প্রত্যাশা ডেস্ক:  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন ফাং ওং। দেশটির প্রায় পুরো অঞ্চলজুড়ে এই টাইফুনটি গভীর রাতে আঘাত হানতে পারে। ইতোমধ্যেই ঝড়টি সুপার টাইফুনের আকার ধারণ করেছে।

শক্তিশালী এই ঝড়ের আতঙ্কে ৯ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রোববার (৯ নভেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি ও রয়টার্স।

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রোববার গভীর রাতে সুপার টাইফুন ফাং ওং ছোট দ্বীপ ক্যাটানডুয়ানেসে সরাসরি আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সেখানে ভোর থেকে বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এছাড়া তীব্র ঝোড়ো হাওয়ায় উপকূলের রাস্তাগুলোয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে।

আবহাওয়া দপ্তর বলছে, দেশটিতে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগি আঘাত হানার মাত্র কয়েকদিন পরই এই ঘূর্ণিঝড় পশ্চিম দিকে ধেয়ে আসছে। কেন্দ্রস্থলের কাছে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে ঘণ্টায় ২৩০ কিলোমিটার বেগে। ক্যাটানডুয়ানেসের ভিরাক শহরের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী এডসন ক্যাসারিনো এএফপিকে বলেন, এখন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে, আর আমি বাতাসের শো শো শব্দ শুনতে পাচ্ছি। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা নাগাদ ঢেউয়ের গর্জন শুরু হয়। সমুদ্রের ঢেউগুলো আঘাত শুরু করার পর মনে হচ্ছিল যেন মাটি কাঁপছে। ফিলিপাইনের বৃহত্তম দ্বীপ দক্ষিণ লুজের সোরসোগনে শহরের অনেকেই একটি গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। ম্যাক্সিন ডুগান নামে এক ব্যক্তি শনিবার সন্ধ্যায় এএফপিকে বলেন, আমি এখানে আশ্রয় নিয়েছি কারণ আমার বাড়ির কাছে বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আমি তীরের কাছে থাকি, তাই সেখানকার বাতাস এখন খুব শক্তিশালী।

উপকূলীয় অরোরা প্রদেশে রোববার গভীর রাতে অথবা সোমবার ভোরে ফাং ওং আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের উঁচু এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিতে উৎসাহিত করছেন। সরকারি আবহাওয়াবিদ বেনিসন এস্তারেজা শনিবার সাংবাদিকদের জানান, টাইফুন ফাং ওং-এর প্রভাবে প্রায় ২০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই বৃষ্টি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের প্রধান নদী অববাহিকা উপচে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

মূলত বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঝড়গুলো আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক টাইফুনগুলো দ্রুত শক্তিশালী হতে পারে এবং উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে আরো আর্দ্রতার কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এর আগে মাত্র কয়েকদিন আগে সেবু প্রদেশে টাইফুন কালমায়েগি আঘাত হনে। এর জেরে সেখানে ব্যাপক বন্যার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটে। ২০২৫ সালের সবচেয়ে মারাত্মক ওই টাইফুনে কমপক্ষে ২২৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া আরো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

এছাড়া কালমায়েগি গত শুক্রবার ভিয়েতনামজুড়ে তাণ্ডব চালায়। এতে দেশটিতে কমপক্ষে আরো পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে।

শনিবার ফিলিপিনো উদ্ধার কর্মকর্তা মাইরা ডেভেন এএফপিকে বলেন, আসন্ন ঝড়ের কারণে সেবু প্রদেশে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডবে নিহত ব্যক্তিদের প্রায় ৭০ শতাংশের মৃত্যু সেখানে ঘটেছে। তিনি বলেন, আজ বিকেল ৩টায় আমাদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের উদ্ধারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঝুঁকি নিতে পারি না। ডেভেন আরো বলেন, সরকারি হিসেব অনুযায়ী এই প্রদেশে নিখোঁজ রয়েছেন ৫৭ জন। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এখনো এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে আমরা প্রবেশ করতে পারছি না। অনেক রাস্তা এখনো অবরুদ্ধ হয়ে আছে।

সানা/ওআ/আপ্র/০৯/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ফিলিপাইনে ধেয়ে যাচ্ছে সুপার টাইফুন ফাং ওং, নিরাপদ আশ্রয়ে ৯ লাখ মানুষ

আপডেট সময় : ০৬:৪১:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক:  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন ফাং ওং। দেশটির প্রায় পুরো অঞ্চলজুড়ে এই টাইফুনটি গভীর রাতে আঘাত হানতে পারে। ইতোমধ্যেই ঝড়টি সুপার টাইফুনের আকার ধারণ করেছে।

শক্তিশালী এই ঝড়ের আতঙ্কে ৯ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রোববার (৯ নভেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি ও রয়টার্স।

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রোববার গভীর রাতে সুপার টাইফুন ফাং ওং ছোট দ্বীপ ক্যাটানডুয়ানেসে সরাসরি আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সেখানে ভোর থেকে বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এছাড়া তীব্র ঝোড়ো হাওয়ায় উপকূলের রাস্তাগুলোয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে।

আবহাওয়া দপ্তর বলছে, দেশটিতে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগি আঘাত হানার মাত্র কয়েকদিন পরই এই ঘূর্ণিঝড় পশ্চিম দিকে ধেয়ে আসছে। কেন্দ্রস্থলের কাছে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে ঘণ্টায় ২৩০ কিলোমিটার বেগে। ক্যাটানডুয়ানেসের ভিরাক শহরের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী এডসন ক্যাসারিনো এএফপিকে বলেন, এখন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে, আর আমি বাতাসের শো শো শব্দ শুনতে পাচ্ছি। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা নাগাদ ঢেউয়ের গর্জন শুরু হয়। সমুদ্রের ঢেউগুলো আঘাত শুরু করার পর মনে হচ্ছিল যেন মাটি কাঁপছে। ফিলিপাইনের বৃহত্তম দ্বীপ দক্ষিণ লুজের সোরসোগনে শহরের অনেকেই একটি গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। ম্যাক্সিন ডুগান নামে এক ব্যক্তি শনিবার সন্ধ্যায় এএফপিকে বলেন, আমি এখানে আশ্রয় নিয়েছি কারণ আমার বাড়ির কাছে বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আমি তীরের কাছে থাকি, তাই সেখানকার বাতাস এখন খুব শক্তিশালী।

উপকূলীয় অরোরা প্রদেশে রোববার গভীর রাতে অথবা সোমবার ভোরে ফাং ওং আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের উঁচু এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিতে উৎসাহিত করছেন। সরকারি আবহাওয়াবিদ বেনিসন এস্তারেজা শনিবার সাংবাদিকদের জানান, টাইফুন ফাং ওং-এর প্রভাবে প্রায় ২০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই বৃষ্টি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের প্রধান নদী অববাহিকা উপচে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

মূলত বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঝড়গুলো আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক টাইফুনগুলো দ্রুত শক্তিশালী হতে পারে এবং উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে আরো আর্দ্রতার কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এর আগে মাত্র কয়েকদিন আগে সেবু প্রদেশে টাইফুন কালমায়েগি আঘাত হনে। এর জেরে সেখানে ব্যাপক বন্যার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটে। ২০২৫ সালের সবচেয়ে মারাত্মক ওই টাইফুনে কমপক্ষে ২২৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া আরো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

এছাড়া কালমায়েগি গত শুক্রবার ভিয়েতনামজুড়ে তাণ্ডব চালায়। এতে দেশটিতে কমপক্ষে আরো পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে।

শনিবার ফিলিপিনো উদ্ধার কর্মকর্তা মাইরা ডেভেন এএফপিকে বলেন, আসন্ন ঝড়ের কারণে সেবু প্রদেশে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডবে নিহত ব্যক্তিদের প্রায় ৭০ শতাংশের মৃত্যু সেখানে ঘটেছে। তিনি বলেন, আজ বিকেল ৩টায় আমাদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের উদ্ধারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঝুঁকি নিতে পারি না। ডেভেন আরো বলেন, সরকারি হিসেব অনুযায়ী এই প্রদেশে নিখোঁজ রয়েছেন ৫৭ জন। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এখনো এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে আমরা প্রবেশ করতে পারছি না। অনেক রাস্তা এখনো অবরুদ্ধ হয়ে আছে।

সানা/ওআ/আপ্র/০৯/১১/২০২৫