ক্রীড়া ডেস্ক: শেষ ৩২ বলে খুনে ব্যাটিংয়ে ৭৭ রান করলেন গ্লেন ফিলিপস। ক্যারিয়ারে পেলেন প্রথম সেঞ্চুরির উষ্ণ ছোঁয়া। তার শেষের ঝড়ে বড় সংগ্রহ গড়া নিউ জিল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিলেন ফাখার জামান। তাকে থামিয়েই দলকে দারুণ এক জয় এনে দিলেন ফিলিপস। ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক পাকিস্তানকে ৭৮ রানে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড।
৩৩১ রানের লক্ষ্য দিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলকে ২৫২ রানে থামিয়েছে তারা। চোট হানা দিয়েছে দুই দলেই। নিজের সপ্তম ওভার অসমাপ্ত রেখে মাঠ ছেড়ে যান হারিস রউফ। পরে আর ব্যাটিংয়ে নামেননি পাকিস্তানের এই গতিময় পেসার। ফিল্ডিংয়ের সময় বেশ উঁচুতে ওঠা বল ফ্লাইডলাইটের আলোয় হারিয়ে ফেলেন রাচিন রাভিন্দ্রা। সেটি এসে লাগে তার কপালে। কিছুক্ষণ মাটিতে শুয়ে থাকার পর ফিজিওর সঙ্গে মাঠ ছাড়েন নিউ জিল্যান্ডের প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে তাদের চোট দল দুটির জন্য উদ্বেগের। এই ম্যাচের ব্যাটিং-বোলিং পাকিস্তানের কোচ-অধিনায়কের কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে। উল্টো অবস্থা নিউ জিল্যান্ডে। আগের সেরা ছাপিয়ে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন ফিলিপস। অবদান রেখেছেন আরও কয়েকজন।
এদিন যেন কোনো ভুল করেননি ফিলিপস। ৭৪ বলে সাত ছক্কা ও ছয় চারে তিনি খেলেন অপরাজিত ১০৬ রানের দারুণ ইনিংস। পরে ফিল্ডিংয়ে ধরেন একটি ক্যাচ, ৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে নেন ফাখারের দামী উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্েয ফিলিপসই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। লাহোরে সোমবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি নিউ জিল্যান্ডের। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা প্রথম ওভারে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন উইল ইয়াং। ঝড়ো শুরু করা রাচিনকে বেশি দূর যেতে দেননি আবরার আহমেদ। আট ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানো নিউ জিল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেলের জুটিতে।
সহজাত ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন উইলিয়ামসন। আরেক প্রান্তে রানের চাকা সচল রাখেন মিচেল। ৭ চারে ৮৯ বলে ৫৮ রান করা উইলিয়ামসনকে কট বিহাইন্ড করে ৯৫ রানের জুটি ভাঙেন আফ্রিদি। শূন্য রানেই টম ল্যাথামকে ফেরান রউফ।
২৮তম ওভারে ১৩৫ রানে চার উইকেট হারানো নিউ জিল্যান্ডকে এরপর পথ দেখান ফিলিপস। শুরুতে তাকে সঙ্গ দেন ড্যারিল মিচেল। ৮৪ বলে তিনি ৮১ রান করে ফিরলে ভাঙে ৬৫ রানের জুটি। মাইকেল ব্রেসওয়েলের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়া ফিলিপস এরপর চালান তাণ্ডব। মিচেল স্যান্টনারের সঙ্গে তার ২৬ বল স্থায়ী জুটিতে আসে ৭৬ রান! খরুচে বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন আফ্রিদি। ১০ ওভারে বাঁহাতি এই পেসার দেন ৮৮ রান। ৭০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন নাসিম শাহ। ৬.২ ওভারে কেবল ২৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন সাইড স্ট্রেইনের জন্য মাঠ ছাড়া রউফ। রান তাড়ায় বলতে গেলে একাই দলকে যা একটু টানেন ফাখার। ফেরার ম্যাচে ঝড় তোলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
অন্য প্রান্তে তেমন কিছু করতে পারেননি বাবর আজম, কামরান গুলাম ও রিজওয়ান। অন্যদের মন্থর ব্যাটিংয়ে সব চাপ নিজের কাঁধে নেওয়া ফাখার থামেন ২৪তম ওভারে। ৬৯ বলে চার ছক্কা ও সাত চারে ৮৪ রান করে ফিলিপসের বলে তিনি হন এলবিডব্লিউ। এরপর আর জয়ের তেমন কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি পাকিস্তান। পাঁচ থেকে দশ পর্যন্ত নামা সব ব্যাটসম্যান যদিও যায় দুই অঙ্কে, কিন্তু তাদের কেউ ৪০ ছাড়াতে পারেননি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৩ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। ৪১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের সফলতম বোলার অধিনায়ক স্যান্টনার। পেসার ম্যাট হেনরি ৩ উইকেট নেন ৫৩ রানের খরচায়। ত্রিদেশীয় সিরিজের পরের ম্যাচে আগামী সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে নিউ জিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ (ইয়াং ৪, রাচিন ২৫, উইলিয়ামসন ৫৮, ল্যাথাম ০, ফিলিপস ১০৬*, ব্রেসওয়েল ৩১, স্যান্টনার ৮*, আফ্রিদি ১০-০-৮৮-৩, নাসিম ১০-০-৭০-০, আবরার ১০-০-৪১-২, রউফ ৬.২-০-২৩-১, খুশদিল ৯-০-৬৬-০, সালমান ৪.৪-০-৩১-০)
পাকিস্তান: ৪৭.৫ ওভারে ২৫২ (ফাখার ৮৪, বাবর ১০, কামরান ১৮, রিজওয়ান ৩, সালমান ৪০, তাহির ৩০, খুশদিল ১৫, আফ্রিদি ১০, নাসিম ১৩, আবরার ২৩*, রউফ আহত অনুপস্থিত; হেনরি ৯.৫-০-৫৩-৩, ও’রোক ৬-০-৪৬-০, ব্রেসওয়েল ১০-০-৪১-২, সিয়ার্স ৬-০-৩৯-০, স্যান্টনার ১০-২-৪১-৩, ফিলিপস ৩-০-১৮-১, রাচিন ৩-০-১৪-০)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ফিলিপস