ঢাকা ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা ২০২৪,শোবিজ যাদের হারিয়েছে

  • আপডেট সময় : ০৫:২৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

বিনোদন ডেস্ক: শোবিজ অঙ্গনের অনেককেই আমরা ২০২৪ সালে হারিয়েছি। তারা হারিয়ে গেলেও, বেঁচে আছেন তাদের আপন সৃষ্টিতে। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন নাটক, নৃত্য ও সংগীতে থেকে যাবে তাদের অসামান্য অবদান। এই তালিকায় আছেন গীতিকবি জাহিদুল হক, অভিনেতা আহমেদ রুবেল, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ, ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ, ব্যান্ডশিল্পী খালিদ, অভিনেতা অলিউল হক রুমি, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার, কণ্ঠশিল্পী জুয়েল, মনি কিশোর, অভিনেতা মাসুদ আলী খান, সুরকার সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম,অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন।
অভিনেতা আহমেদ রুবেল
৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেতা আহমেদ রুবেল। নিজের অভিনীত ‘পেয়ারার সুবাস’-এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। গাড়ি থেকে নামার পরই সেখানে পড়ে যান এই অভিনেতা। আহমেদ রুবেল একুশে টেলিভিশনের আলোচিত ধারাবাহিক নাটক ‘প্রেত’-এ অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পান। হুমায়ুন আহমেদের পরিচালনায় ‘শ্যামল ছায়া” সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। সালাউদ্দিন লাভলুর সাড়া জাগানো নাটক ‘রঙের মানুষ’ ও মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর জনপ্রিয় নাটক ‘৬৯’- এ সাবলীল অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হন। তার অভিনীত ‘গেরিলা’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘আলফা’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’-সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রশংসিত হয়েছে। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ‘আলফা’ সিনেমাটি অস্কারে গিয়েছিল।
গীতিকবি জাহিদুল হক
১৫ জানুয়ারি মারা যান ষাটের দশকের কবি, গীতিকার জাহিদুল হক। মত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানটি দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পায়।
রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ
প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ ১৩ মার্চ মারা যান। অজানা এক অভিমানে আত্মহত্যা করেন এই গুণী সংগীতশিল্পী। সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার সাদি মহম্মদ বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। অসংখ্য সিনেমায় ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। ২০১২ সালে চ্যানেল আইয়ের ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’সহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
কণ্ঠশিল্পী খালিদ
‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘সরলতার প্রতিমা’, ‘আবার দেখা হবে’র মতো অসংখ্য গানের শিল্পী খালিদ মারা যান ১৮ মার্চ। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। খালিদের কণ্ঠে উল্লেখযোগ্য গানের মধ্য রয়েছে- যতোটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে, আকাশের বুকে সরলতার প্রতিমা’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘হয়নি যাবার বেলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘তুমি নেই তাই, আকাশলীনা’গানগুলো।
অভিনেত্রী সীমানা
অভিনেত্রী রিশতা লাবনী সীমানা ৪ জুন সকাল ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শোবিজে সীমানার পথচলা শুরু হয় ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। এরপর থেকে তিনি নাটক, বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কাজ করছিলেন। দেখা গেছে সিনেমায়ও।
অভিনেতা অলিউল হক রুমি
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২২ এপ্রিল মারা যান অভিনেতা অলিউল হক রুমি। ক্যানসার জয় করে আগের মতো অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেরা হয়নি তার।
ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ
২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। মাইলস ব্যান্ডের ভোকাল ও বেজ গিটারিস্ট শাফিন আহমেদের কন্ঠে শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় একক অ্যালবাম ও ব্যান্ডের গানের তালিকায় রয়েছে ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘গুঞ্জন শুনি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘কি যাদু’, ‘কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘বলব না তোমাকে’, ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’, ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘প্রিয়তমা মেঘ’ গানগুলো।
কণ্ঠশিল্পী জুয়েল
কণ্ঠশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ৩০ জুলাই সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। সংগীতশিল্পী, নির্মাতা ও সঞ্চালক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। ১১ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘এক বিকেলে’, ‘আমার আছে অন্ধকার’, ‘একটা মানুষ’, ‘দেখা হবে না’, ‘বেশি কিছু নয়’, ‘বেদনা শুধুই বেদনা’, ‘ফিরতি পথে’, ‘দরজা খোলা বাড়ি’ ও ‘এমন কেন হলো’। তার ‘এক বিকেলে’ অ্যালবামটি সবচেয়ে আলোচিত ছিল।
নির্মাতা শিল্পী চক্রবর্তী
নির্মাতা শিল্পী চক্রবর্তী রক্তক্ষরণ জনিত কারণে ৭ মার্চ মারা।মৃত্যুকালে নির্মাতার বয়স ছিলো ৭১ বছর। শিল্পী চক্রবর্তী ‘বিনি সুতার মালা’, ‘আমার আদালত’, ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘সবার অজান্তে’, ‘চরমপত্র’, ‘মীমাংসা’ সিনেমা নির্মাণ করেছেন।
কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোর
চলতি বছর অক্টোবরে মারা যান ৯০ দশকের দর্শকপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোর। ১৯ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২৪ অক্টোবর কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোরের দাফন সম্পন্ন হয়। মনি কিশোরের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে—’কী ছিলে আমার বলো না তুমি’, ‘আমি মরে গেলে’, ‘ফুল ঝরে তারা ঝরে’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি ঘরের খোঁজে’।
অভিনেতা মাসুদ আলী খান
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন ৩১ অক্টোবর। মৃত্যুকালে মাসুদ আলী খানের বয়স ছিল ৯৫ বছর। মাসুদ আলী খান ১৯৫৬ সালে এ দেশের প্রথম নাটকের দল ড্রামা সার্কেলের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই থেকে অভিনয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ৫ দশকেরও বেশি সময় টানা অভিনয় করেছেন তিনি। মাসুদ আলী খানের অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘দুই দুয়ারি, দীপু নাম্বার টু, মাটির ময়না। তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি নাটক হচ্ছে কূল নাই কিনার নাই, এইসব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই।
অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেন
একুশে পদকপ্রাপ্ত জামাল উদ্দিন হোসেন টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের অভিনেতা ১২ অক্টোবর মারা গেছেন। কানাডার ক্যালগিরিতে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে এই অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। জামাল উদ্দিন হোসেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ছেড়ে একসময় প্রতিষ্ঠা করেন নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন তিনি।
সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম মৃত্যুবরণ করেন ১৭ অক্টোবর। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক। সুজেয় শ্যাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন। তার করা উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘বিজয় নিশান উড়েছে ওই’, ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয়রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’।
গীতিকবি আবু জাফর
বছরের শেষের দিকে আমরা হারাই বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিক্ষক আবু জাফরকে। তিনি মারা যান গত ৫ ডিসেম্বর। আবু জাফর রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন। আবু জাফর রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘আমি হেলেন কিংবা মমতাজকে দেখিনি’ ও ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি। তার লেখা ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার ১২ ডিসেম্বর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান গুণী এই শিল্পী। একুশে পদকজয়ী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন । নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে শ্রোতাদের কাছে আরও বেশি পরিচিত করেছিল। পাপিয়া সারোয়ার ২০২১ সালে একুশে পদক পান।
নির্মাতা সি বি জামান
‘উজান ভাটি’ খ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান মারা গেছেন ২০ ডিসেম্বর। চলতি মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন তিনি। সিবি জামান নির্মিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ঝড়ের পাখি, উজান ভাটি, লাল গোলাপ, কুসুম কলি, সুভরাত্রি, দিন যায় কথা থাকে, হিসাব নিকাশ, পুরস্কার।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ফিরে দেখা ২০২৪,শোবিজ যাদের হারিয়েছে

আপডেট সময় : ০৫:২৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক: শোবিজ অঙ্গনের অনেককেই আমরা ২০২৪ সালে হারিয়েছি। তারা হারিয়ে গেলেও, বেঁচে আছেন তাদের আপন সৃষ্টিতে। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন নাটক, নৃত্য ও সংগীতে থেকে যাবে তাদের অসামান্য অবদান। এই তালিকায় আছেন গীতিকবি জাহিদুল হক, অভিনেতা আহমেদ রুবেল, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ, ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ, ব্যান্ডশিল্পী খালিদ, অভিনেতা অলিউল হক রুমি, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার, কণ্ঠশিল্পী জুয়েল, মনি কিশোর, অভিনেতা মাসুদ আলী খান, সুরকার সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম,অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন।
অভিনেতা আহমেদ রুবেল
৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেতা আহমেদ রুবেল। নিজের অভিনীত ‘পেয়ারার সুবাস’-এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। গাড়ি থেকে নামার পরই সেখানে পড়ে যান এই অভিনেতা। আহমেদ রুবেল একুশে টেলিভিশনের আলোচিত ধারাবাহিক নাটক ‘প্রেত’-এ অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পান। হুমায়ুন আহমেদের পরিচালনায় ‘শ্যামল ছায়া” সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। সালাউদ্দিন লাভলুর সাড়া জাগানো নাটক ‘রঙের মানুষ’ ও মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর জনপ্রিয় নাটক ‘৬৯’- এ সাবলীল অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হন। তার অভিনীত ‘গেরিলা’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘আলফা’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’-সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রশংসিত হয়েছে। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ‘আলফা’ সিনেমাটি অস্কারে গিয়েছিল।
গীতিকবি জাহিদুল হক
১৫ জানুয়ারি মারা যান ষাটের দশকের কবি, গীতিকার জাহিদুল হক। মত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানটি দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পায়।
রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ
প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ ১৩ মার্চ মারা যান। অজানা এক অভিমানে আত্মহত্যা করেন এই গুণী সংগীতশিল্পী। সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার সাদি মহম্মদ বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। অসংখ্য সিনেমায় ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। ২০১২ সালে চ্যানেল আইয়ের ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’সহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
কণ্ঠশিল্পী খালিদ
‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘সরলতার প্রতিমা’, ‘আবার দেখা হবে’র মতো অসংখ্য গানের শিল্পী খালিদ মারা যান ১৮ মার্চ। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। খালিদের কণ্ঠে উল্লেখযোগ্য গানের মধ্য রয়েছে- যতোটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে, আকাশের বুকে সরলতার প্রতিমা’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘হয়নি যাবার বেলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘তুমি নেই তাই, আকাশলীনা’গানগুলো।
অভিনেত্রী সীমানা
অভিনেত্রী রিশতা লাবনী সীমানা ৪ জুন সকাল ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শোবিজে সীমানার পথচলা শুরু হয় ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। এরপর থেকে তিনি নাটক, বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কাজ করছিলেন। দেখা গেছে সিনেমায়ও।
অভিনেতা অলিউল হক রুমি
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২২ এপ্রিল মারা যান অভিনেতা অলিউল হক রুমি। ক্যানসার জয় করে আগের মতো অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেরা হয়নি তার।
ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ
২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। মাইলস ব্যান্ডের ভোকাল ও বেজ গিটারিস্ট শাফিন আহমেদের কন্ঠে শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় একক অ্যালবাম ও ব্যান্ডের গানের তালিকায় রয়েছে ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘গুঞ্জন শুনি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘কি যাদু’, ‘কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘বলব না তোমাকে’, ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’, ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘প্রিয়তমা মেঘ’ গানগুলো।
কণ্ঠশিল্পী জুয়েল
কণ্ঠশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ৩০ জুলাই সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। সংগীতশিল্পী, নির্মাতা ও সঞ্চালক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। ১১ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘এক বিকেলে’, ‘আমার আছে অন্ধকার’, ‘একটা মানুষ’, ‘দেখা হবে না’, ‘বেশি কিছু নয়’, ‘বেদনা শুধুই বেদনা’, ‘ফিরতি পথে’, ‘দরজা খোলা বাড়ি’ ও ‘এমন কেন হলো’। তার ‘এক বিকেলে’ অ্যালবামটি সবচেয়ে আলোচিত ছিল।
নির্মাতা শিল্পী চক্রবর্তী
নির্মাতা শিল্পী চক্রবর্তী রক্তক্ষরণ জনিত কারণে ৭ মার্চ মারা।মৃত্যুকালে নির্মাতার বয়স ছিলো ৭১ বছর। শিল্পী চক্রবর্তী ‘বিনি সুতার মালা’, ‘আমার আদালত’, ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘সবার অজান্তে’, ‘চরমপত্র’, ‘মীমাংসা’ সিনেমা নির্মাণ করেছেন।
কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোর
চলতি বছর অক্টোবরে মারা যান ৯০ দশকের দর্শকপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোর। ১৯ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২৪ অক্টোবর কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোরের দাফন সম্পন্ন হয়। মনি কিশোরের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে—’কী ছিলে আমার বলো না তুমি’, ‘আমি মরে গেলে’, ‘ফুল ঝরে তারা ঝরে’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি ঘরের খোঁজে’।
অভিনেতা মাসুদ আলী খান
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন ৩১ অক্টোবর। মৃত্যুকালে মাসুদ আলী খানের বয়স ছিল ৯৫ বছর। মাসুদ আলী খান ১৯৫৬ সালে এ দেশের প্রথম নাটকের দল ড্রামা সার্কেলের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই থেকে অভিনয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ৫ দশকেরও বেশি সময় টানা অভিনয় করেছেন তিনি। মাসুদ আলী খানের অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘দুই দুয়ারি, দীপু নাম্বার টু, মাটির ময়না। তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি নাটক হচ্ছে কূল নাই কিনার নাই, এইসব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই।
অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেন
একুশে পদকপ্রাপ্ত জামাল উদ্দিন হোসেন টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের অভিনেতা ১২ অক্টোবর মারা গেছেন। কানাডার ক্যালগিরিতে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে এই অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। জামাল উদ্দিন হোসেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ছেড়ে একসময় প্রতিষ্ঠা করেন নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন তিনি।
সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম মৃত্যুবরণ করেন ১৭ অক্টোবর। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক। সুজেয় শ্যাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন। তার করা উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘বিজয় নিশান উড়েছে ওই’, ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয়রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’।
গীতিকবি আবু জাফর
বছরের শেষের দিকে আমরা হারাই বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিক্ষক আবু জাফরকে। তিনি মারা যান গত ৫ ডিসেম্বর। আবু জাফর রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন। আবু জাফর রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘আমি হেলেন কিংবা মমতাজকে দেখিনি’ ও ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি। তার লেখা ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার ১২ ডিসেম্বর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান গুণী এই শিল্পী। একুশে পদকজয়ী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন । নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে শ্রোতাদের কাছে আরও বেশি পরিচিত করেছিল। পাপিয়া সারোয়ার ২০২১ সালে একুশে পদক পান।
নির্মাতা সি বি জামান
‘উজান ভাটি’ খ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান মারা গেছেন ২০ ডিসেম্বর। চলতি মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন তিনি। সিবি জামান নির্মিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ঝড়ের পাখি, উজান ভাটি, লাল গোলাপ, কুসুম কলি, সুভরাত্রি, দিন যায় কথা থাকে, হিসাব নিকাশ, পুরস্কার।