ক্রীড়া ডেস্ক: ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল ইন্টার। আরেকবার ইউরোপিয়ান মঞ্চে স্বপ্নভঙ্গ বার্সেলোনার। রোমাঞ্চ, নাটক আর টানটান উত্তেজনায় ভরা এক মহারণ শেষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে জায়গা করে নিল ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান। সান সিরোতে মঙ্গলবার রাতের সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগে বার্সেলোনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে, দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ ব্যবধানে ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল সিমোনে ইনজাগির দল। প্রথমার্ধে ধীরগতির ফুটবল হলেও দ্বিতীয়ার্ধে যেন দুই দল মাঠে নামল নতুন রূপে। দুইবার এগিয়ে গিয়ে আবারও সমতায় ফিরে নাটকীয়তা বাড়ায় ইন্টার। অতিরিক্ত সময়ে দাভিদে ফ্রাত্তেসির গোল জয় এনে দেয় মিলানবাসীকে। অন্যদিকে, শেষ সময়ে দুর্দান্ত কামব্যাক করেও জয় হাতছাড়া হওয়ায় হতাশায় পুড়ল বার্সেলোনা।
মার্তিনেসকে। অভিজ্ঞ গোলরক্ষক স্ট্যান্সনি এগিয়ে আসায় ফাঁকা জাল পেয়েই গোল করেন আর্জেন্টাইন তারকা। এরপর ম্যাচে বাড়তে থাকে গতি ও উত্তেজনা। ৪২তম মিনিটে পাউ কুবার্সির ট্যাকলে বক্সে পড়ে গেলে প্রথমে পেনাল্টির দাবি নাকচ করেন রেফারি। পরে ঠঅজ দেখে পেনাল্টি দেন, যা থেকে ইন্টারকে দ্বিতীয় গোল এনে দেন হাকান কালহানোগলু। বিরতির পর যেন নতুন বার্সেলোনা। ৫৪তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে জেরার্দ মার্তিনের ক্রসে দুর্দান্ত ভলিতে বল জালে পাঠান এরিক গার্সিয়া। মাত্র চার মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে আবারও গোলের সুযোগ পান গার্সিয়া, কিন্তু সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমের দুর্দান্ত সেভে দলকে রক্ষা করেন।
তবে বার্সেলোনা থেমে থাকেনি। ৬০তম মিনিটে মার্তিনের ক্রস থেকে দানি ওলমোর হেডে ম্যাচে সমতা ফেরায় কাতালানরা। তখন দুই লেগে সমতা ৫-৫। এরপর একের পর এক আক্রমণে ইন্টার রক্ষণে ভীতি ছড়ায় বার্সা। ৭৭তম মিনিটে ইয়ামালের বাঁকানো শট আবারও রুখে দেন ইয়ান সমের। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট বাকি থাকতে অবশেষে গোলের দেখা পায় বার্সেলোনা। পেদ্রির পাস থেকে রাফিনিয়ার প্রথম শট রুখে দিলেও ফিরতি বল জালে পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। জয়ের স্বপ্নে বিভোর বার্সেলোনা যখন উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই ম্যাচে নাটকীয় মোড় নেয়। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ডিফেন্ডারদের ভুলে বল হারিয়ে বসে বার্সেলোনা। ডান দিক থেকে ডামফ্রিসের পাসে কাছ থেকে বল জালে পাঠান ফ্রান্সেসকো আচের্বি। ৩-৩ সমতা নিয়ে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
ম্যাচের ৯৯তম মিনিটে গোল এনে দেন দাভিদে ফ্রাত্তেসি। বদলি খেলোয়াড় মেহদি তারেমির পাস থেকে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ইতালিয়ান মিডফিল্ডার। এরপর বার্সেলোনা একাধিকবার চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে ব্যর্থ হয়। ১০৭ মিনিটে ইয়ামালের ক্রসে হেড মিস করেন লেভানদোভস্কি। এরপর ১১৪ মিনিটে ইয়ামালের জোরালো শট দুর্দান্তভাবে রক্ষা করেন সমের। শেষদিকে মরিয়া চেষ্টা করেও আর গোলের দেখা পায়নি কাতালানরা। দুই লেগ মিলিয়ে ১৪টি সেভ করে ম্যাচের নায়ক হয়ে উঠেছেন ইয়ান সমের। ফিরতি লেগে ম্যাচসেরা নির্বাচিত এই সুইস গোলরক্ষক এককভাবে দলকে ফাইনালে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ইয়ামালের একাধিক আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন তিনি অবিশ্বাস্য দক্ষতায়।
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই দুই লেগে দুর্দান্ত খেলেছেন লামিনে ইয়ামাল। তার ড্রিবলিং, গতি আর শট ম্যাচে বারবার ভীতি ছড়ায়। কিন্তু অভিজ্ঞতা ও গোলরক্ষকের বাধা তার গোলের আনন্দে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই হারে মৌসুমে সম্ভাব্য ট্রেবল জয়ের স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল বার্সেলোনার। কোপা দেল রে জিতে আত্মবিশ্বাসী বার্সা এখনো লা লিগায় শীর্ষে, তবে ইউরোপীয় শিরোপার আশায় এবারও ইতি টানতে হলো। এবার ফাইনালে ইন্টার মিলানের প্রতিপক্ষ হবে পিএসজি অথবা আর্সেনাল। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ৩১ মে, মিউনিখে। ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে আবারও ফিরল ইন্টার মিলান, ২০২৩ সালের পর দ্বিতীয়বার ফাইনালে ওঠে তারা।