ফরিদপুর সংবাদদাতা : ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বোয়ালমারী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিবপুর গ্রামে অবস্থিত জেলা পরিষদের পুকুরের পূর্ব পাশের হাসেম শেখের মালিকানাধীন ফসলি ক্ষেতের মাটি গত ১৫-২০ দিন ধরে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসেম শেখের ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটি টানার ট্রলিতে করে এসব মাটি নেওয়া হয়। এর ফলে ইট বিছিয়ে পুকুরের পাড়ের ওপর তৈরি করা সংকীর্ণ সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এতে সামনে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে পুকুরের পাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে, উপজেলার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে জাহিদ সিকদারের ফসলি জমি থেকে গত ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে মাটি কাটা হচ্ছে। কর্তনকৃত মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে মাটি টানার ট্রাকের চাপে রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ফসলি জমি থেকে ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে মাটি কাটা হচ্ছে। ময়না ইউনিয়নের খরসূতি গ্রামের খরসূতি মাদরাসার উত্তর পাশে বাগান শেখের ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। এছাড়া উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রাম, সাতৈর ইউনিয়নের ভোচনের মাঠ, রূপাপাত ইউনিয়নের সূর্যোগের মাঠ, শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ বিলের ভেতরের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ভাটাগুলোতে। জানা গেছে, উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেরই এক বা একাধিক স্থানের ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন মালিকরা। স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক কামরুল সিকদার বলেন, ফরিদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার (পিএএ) দায়িত্ব নেওয়ার পর এক মতবিনিময় সভায় বলেন, কারো এক টুকরো জমিও যেন পতিত পড়ে না থাকে। প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে জমি পতিত ফেলে না রাখার কথা বলেন। কিন্তু জমির মালিকরা টাকার লোভে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমনটা কোনভাবেই কাম্য নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের একটা ভূমিকা পালন করা উচিত। উল্লেখ্য, এর আগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করার অপরাধে ২০২২ সালের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে তৎকালীন ইউএনও মো. রেজাউল করিম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেন। আদালতে বালুবহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর বিভিন্ন ধারায় সে সময় তিনি বিভিন্ন জনকে কারাদ- ও অর্থদ- দেন। সেই সঙ্গে অবৈধ কাজে ব্যবহৃত জব্দকৃত ট্রলি এবং ভেকু বিনষ্ট করেন।
সেসব ঘটনায় সংক্ষুব্ধ মাটিখেকোরা একটি পক্ষের ইন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। ওই ঘটনার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফসলি জমির মাটি কর্তন, বিক্রয়কারী এবং অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মাটিখেকোরা। ভাটামালিকেরাও এ সুযোগে মজুদ বাড়িয়ে গড়ে তুলছেন স্ব স্ব ইটভাটায় মাটির পাহাড়।
ফসলি জমি কেটে মাটি বিক্রি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ