ঢাকা ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

ফলের গায়ে আগুন প্রভাব পড়বে ইফতারে

  • আপডেট সময় : ০২:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
  • ১৪৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানে আঙুর-আপেলের পরিবর্তে দেশি ফল বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়ে সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। কিন্তু বাজারে সেই দেশি ফলও সাধারণের নাগালের বাইরে। দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা, বেগুন ও শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা। তবে আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। অর্থাৎ রোজাকে সামনে রেখে প্রায় তিনগুন দাম বেড়েছে লেবুর।
রমজানের ইফতারে যেকোনো একটি ফল রাখার চেষ্টা থাকে সব শ্রেণির মানুষের। কিন্তু বাজারে দেশি ও আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ফলে এবার বেশিরভাগ মানুষকে ফল ছাড়াই ইফতার করতে হতে পারে। রাজধানী ঢাকায় ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ৎ বাদামতলী ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান সামনে রেখে দেশি ও আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আপেল, কমলা ও আঙুরের দাম।
সাধারণ মানুষ বলছেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বাজারে সংসার চালাতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইফতারে বেশি দামের ফল রাখার উপায় নেই। কেউ যদি ফল রাখেনও সেটি হবে ‘বিলাসিতা’।
ডলারের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি আমদানি করা আপেল, কমলা ও আঙুরের ওপর গত বছরের মে মাস থেকে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কারোপ করায় প্রায় এক বছর ধরেই এসব ফলের দাম বাড়তি। রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার দাম বেড়েছে। ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার আমদানি করা ফলকে বিলাসী পণ্যের অন্তর্ভুক্ত করে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে। সম্প্রতি আরও দুটি ফলে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া রমজানের কারণে ফলের চাহিদাও বেড়েছে। এ কারণে ফলের বাজার কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছে।
বাদামতলী ফলের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, রমজান সামনে রেখে সব ধরনের ফলের সরবরাহ বেড়েছে। গত ১৫ দিনে প্রচুর ফল আমদানি হলেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং ক্ষেত্র বিশেষে দাম আরও বেড়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ ফল আমদানি করতে হয়। কিন্তু গত বছর থেকে সরকার এসব ফলকে ‘বিলাসী পণ্য’ তকমা দেওয়ায় নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাজস্ব বোর্ড ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। এর সঙ্গে ডলার সংকট, তেল ও জাহাজের কনটেইনারের ভাড়া বাড়ায় ফলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তবে রমজান উপলক্ষ্যে সরকার ফল আমদানিতে এলসি খোলার পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ায় বাজারে ফলের কোনো সংকট নেই। দাম কমানোর উপায় আমাদের হাতে নেই। সরকার চাইলে কিছু করা সম্ভব। শুধু রমজান মাসের জন্য হলেও ফলের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।
পাইকারি ও খুচরা তুলনামূলক দাম: ফলের দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে আনতে রাজধানীর বাদামতলী, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, শান্তিনগর, ঝিগাতলা পরিদর্শন করে একটি সংবাদসংস্থা। দেখা যায়, সব বাজারেই কাছাকাছি মূল্যে পাইকারি ও খুচরায় ফল বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে ক্রাউন আপেল ২০ কেজির বক্স বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ফলে পাইকারিতে প্রতি কেজি আপেলের দাম পড়ছে ১৯০-২০০ টাকা। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। ফুজি আপেলের ২০ কেজির বক্স ৪৫০০-৪৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি কেজি ফুজি আপেলের দাম পাইকারিতে পড়ছে ২২৫-২৩৫ টাকা। খুচরা বাজারে এই আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা।
মিশরের মাল্টা ১৫ কেজির বক্স পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকায় (প্রতি কেজি ১৮৬-১৯০ টাকা)। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। ভারতের সাদা আঙুর ছোট ক্যারেট (৯ কেজি) ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা, বড় ক্যারেট (৯ কেজি) ৩৮০০ থেকে ৩৯০০ টাকা এবং দেশটির কালো আঙুর ছোট ক্যারেট ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব আঙুর প্রকারভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আনার ও আঙুর কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের আনারের কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, কালো আঙুরের কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ এবং সাদা আঙুরের কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চায়না কমলা (৯ কেজি) ১ কার্টন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ১৯০০-২০০০ টাকায়, কেজি ২০০-২১০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রকারভেদে এ কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। গ্রিন কমলা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫৭ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। রোজায় ইফতারের আরেকটি জনপ্রিয় ফল আনারস। অন্যান্য বছর রসালো এ ফলটি মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও এবার এটিরও দাম বেশি। বড় সাইজের একটি আনারস খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। একই আনারস এক বছর আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝারি ও ছোট আকারের আনারসের পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
এদিকে দেশি ফল পাকা কলার ডজন আট-দশ দিন আগেও কেনা গেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, এখন ডজনে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। চম্পা কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সবরি কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মের ফল তরমুজের বেচাকেনাও শুরু হয়েছে অল্প পরিসরে। বিক্রেতারা প্রতি কেজির দর রাখছেন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। সেই হিসাবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
পেয়ারার কেজি সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেদানা ৩৫০-৪০০ টাকা, সফেদা/আতাফল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড বরই বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। শান্তিনগর বাজারের ফলের ব্যবসায়ী সাদিকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার আমদানি করা সব ফলের দাম বেশি। শুধু রমজান সামনে রেখে সব ধরনের ফলে দাম বেড়েছে। আমাদের যেহেতু কিনতে হয় বেশি দিয়ে তাই কিছু করার নেই। তিনি বলেন, ফলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। এই দুর্মূল্যের বাজারে তারা সংসার চালাবে নাকি বিলাসিতা করে ইফতারে ফল খাবে?
রোজায় ফলের শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ফলের বাজার এখন নি¤œমধ্যবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তদেরও নাগালের মধ্যে নেই। এর কারণ সরকারের শুল্কারোপের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অতিমাত্রায় মুনাফা অর্জন। রমজানকে ব্যবসায়ীরা সুযোগ হিসেবে নেন এবং কারণ ছাড়াই ফলের দাম বাড়ান। অন্যান্য পণ্য কিছুটা মনিটরিং করা হলেও ফলের বাজারে কোনো মনিটরিং নেই।
অস্থির লেবুর বাজার, চড়া শসা-বেগুন: প্রতি বছরের মতো লেবু, শসা, বেগুনের দাম বেড়ে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা, বেগুন ও শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা। তবে আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। আবু হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, বছরের এ সময়টাতে লেবুর দর কিছুটা বেশি থাকে। এছাড়া রমজান চলে আসায় চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ কম। সে কারণে দাম কিছুটা বেশি। লেবুর এমন আগুন দামে হতভম্ব খোদ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে কাঁচাবাজার বণিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে দেখলাম এক হালি লেবুর দাম ৬০ টাকা। তাতে একটির দাম পড়ে ১৫ টাকা। অথচ একটু আগে আমার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে ফোন করে জানলাম, সেখানে পাইকারিতে প্রতিটি লেবু ৫ থেকে ৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে একটা লেবুর দাম হয়ে যাচ্ছে তিনগুণ।’
রমজানে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে, তবে সেগুলোর আমদানি সংকট ও ডলারের দাম বাড়ার মতো কারণ আছে। তবে দেশের উৎপাদন দিয়েই চাহিদা মেটে লেবুর। আমদানির প্রশ্ন না থাকায় লেবুর সঙ্গে ডলারের দর বাড়ার সম্পর্ক নেই। তবু অস্বাভাবিক লেবুর দাম। শসা-বেগুনেও আগুন। ইফতারির অন্যতম উপকরণ হলো শসা। বাজারে এখন তিন ধরনের শসা পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি ১১০ থেকে ১২০ দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অথচ কয়েকদিন আগেও দেশি ও হাইব্রিড দুই জাতের শসার কেজি কেনা গেছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। গত বছরও রোজার দুদিন আগেই শতক ছুঁয়েছিল বেগুন। তবে এবার দর শতকে না গেলেও কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।
পাঁচ টাকার লেবু ১৩ টাকায় বিক্রি, জরিমানা ৫০ হাজার: রমজান মাসকে ঘিরে সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের বাজারে লেবুর দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পাঁচ টাকার লেবু বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় নগরের এক বিক্রেতাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সোমবার (১১ মার্চ) সকালে নগরের স্টেশন রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ। এসময় তাকে সহায়তা করেন সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান ও নাসরিন আকতার। ফয়েজ উল্লাহ বলেন, মেম্বার বাণিজ্যালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা নেই। তাই সুযোগ বুঝে একেক সময় একেক দামে লেবু বিক্রি করছিল। বাগান থেকে লেবু কেনার রশিদও নেই। ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানকে।
চিনি, ছোলা, লেবু, ডাল ও খেজুরের দামে ইফতারের খরচ বাড়বে: রোজায় চিনি, খেজুর, সয়াবিন তেল, ছোলাসহ ইফতারসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদের ডালের চাহিদা বেড়ে যায়। এ বছর এসব পণ্যের প্রায় সবগুলোর দামই চড়া। এর মধ্যে চিনি ও তেলের দাম এক বছরের বেশি সময় ধরে বাড়তি। তার সঙ্গে রোজাকে সামনে রেখে এবার খেজুর, ছোলা ও ডালের দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ, বেগুন, শসা ও লেবুর দামও চড়া। বিদেশি ফলের দাম নাগালের মধ্যে নেই। তাতে ইফতার আয়োজনে সাধারণ মানুষকে এবার খরচ সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হবে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই রোজার বাজারে চিনি, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজ ও অ্যাংকর ডালের দাম সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রোজার আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এ বছর চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তাতে এক বছরে চিনিতে খরচ বেড়েছে সর্বনি¤œ ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা। টিসিবির হিসাবে, ২০২১ সালে রোজার আগে বাজারে ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এ বছর দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তাতে দুই বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে টিসিবির দামের চেয়ে বাজারে চিনি ও ছোলার দাম আরও বেশি। বাজারভেদে এ দুটি পণ্যের দাম টিসিবির দেওয়া দামের চেয়ে ৫ টাকার বেশি। এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর স্টোরের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রোজার আগে ছোলা ও বিভিন্ন ধরনের ডালের দাম বাড়তি। বেসনের দামও বেড়েছে। বর্তমানে কেজিপ্রতি বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত দুই বছরে বাজারে অ্যাংকর ডালের দাম বেশ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। গত বছর এ দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর ২০২২ সালের রমজানের আগে অ্যাংকর ডালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গত বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ২০২২ সালে এ দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
ইসবগুলের ভুসির দাম বেড়েছে ৫শ টাকা, ট্যাং রুহ আফজায়ও আগুন: রোজা সামনে রেখে ইতোমধ্যে বেড়েছে শরবতের বিভিন্ন উপাদানের দাম। ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজাসহ এ ধরনের সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। গত রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকায়। যা তিন মাস আগে ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০০ টাকা। ৭৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত ট্যাং আগে বিক্রি হতো ৭৬০ টাকায়। এখন নতুন উৎপাদন করা প্যাকেটে দাম বাড়ানো হয়েছে। ছোট সাইজের রুহ আফজা ৩০০ মিলিলিটারের দাম আগে ছিল ২১০ টাকা। এখন ২৮০ টাকা করা হয়েছে। বড় সাইজের রুহ আফজা আগে ছিল ৩৫০ টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এছাড়া ইসপি, অরেঞ্জ, ম্যাংগো ফ্লেভারের বিভিন্ন শরবতের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি বাজার থেকে গত পরশু ইসবগুলের ভুসিসহ নানা প্যাকেটজাত ও জারভর্তি শরবতের পাউডার নিজের দোকানে বিক্রির জন্য কিনে এনেছেন রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন একটি বাজারের দোকানি হাবিবুর রহমান। আলাপকালে তিনি জানান, শরবত আইটেমের মধ্যে ইসবগুলের ভুসির খুব চাহিদা থাকে রমজান মাসে। পাইকারি বাজারে এটা কিনতে গিয়ে দেখি আগের চেয়ে কেজিতে দাম প্রায় ৫০০ টাকা বেড়েছে। এটার দাম তিন মাস আগেও ক্রেতা পর্যায়ে ছিল ১৬০০ টাকা কেজি। কিন্তু এখন দাম বেড়ে ২১০০ টাকা হয়েছে। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ফ্লেভারের প্যাকেটজাত জুসের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। রুহ আফজার বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম এখন বাড়তি। তাই উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে। যে কারণে এ বছর রমজানের আগে যেসব নতুন মাল বাজারে ছাড়া হয়েছে সেগুলোর দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। মূলত উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা পর্যায়ে রুহ আফজার দাম অল্প পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে, গুণগতমানে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজার পাশাপাশি শরবতের অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। এই মুহূর্তে বেলের দাম ১ পিস ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, লেবুর হালি (৪ পিস) ৬০ টাকা, পুদিনা পাতা ১০ গ্রাম ৩০ টাকা, ৬ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজের একটি আনারস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা কমলার কেজি ৩৬০ টাকা, ডাব ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাল্টা প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মহাখালী এলাকার ডাব বিক্রেতা আক্কাস আলী বলেন, মাঝারি সাইজের ডাব পাইকারি বাজারে এখন প্রতি পিস ৮০-৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর প্রতি ১০০ পিস কিনতে লাগছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। তিনি বলেন, রোজা সামনে রেখে গত কয়েকদিনে কারওয়ান বাজারেও ডাবের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। ঢাকায় বেশিরভাগ ডাব আসে ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকে। এসময় গাছে ডাব কম থাকে, আবার রোজা শুরু হচ্ছে। সবমিলিয়ে বাজারে চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। রাজধানীর গুলশান এলাকার ফলের দোকানি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ইফতারিতে অনেকে ফলমূল বেশি খান, সে কারণে চাহিদাও থাকে অনেক বেশি। রমজান মাসে ফলের ফ্রেশ জুসের চাহিদা বেশি থাকে। তাই ফলের দামও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে মাল্টা, কমলা, বেল, আনারস, বেদানার দাম বেড়েছে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ফলের গায়ে আগুন প্রভাব পড়বে ইফতারে

আপডেট সময় : ০২:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানে আঙুর-আপেলের পরিবর্তে দেশি ফল বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়ে সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। কিন্তু বাজারে সেই দেশি ফলও সাধারণের নাগালের বাইরে। দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা, বেগুন ও শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা। তবে আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। অর্থাৎ রোজাকে সামনে রেখে প্রায় তিনগুন দাম বেড়েছে লেবুর।
রমজানের ইফতারে যেকোনো একটি ফল রাখার চেষ্টা থাকে সব শ্রেণির মানুষের। কিন্তু বাজারে দেশি ও আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ফলে এবার বেশিরভাগ মানুষকে ফল ছাড়াই ইফতার করতে হতে পারে। রাজধানী ঢাকায় ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ৎ বাদামতলী ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান সামনে রেখে দেশি ও আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আপেল, কমলা ও আঙুরের দাম।
সাধারণ মানুষ বলছেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বাজারে সংসার চালাতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইফতারে বেশি দামের ফল রাখার উপায় নেই। কেউ যদি ফল রাখেনও সেটি হবে ‘বিলাসিতা’।
ডলারের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি আমদানি করা আপেল, কমলা ও আঙুরের ওপর গত বছরের মে মাস থেকে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কারোপ করায় প্রায় এক বছর ধরেই এসব ফলের দাম বাড়তি। রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার দাম বেড়েছে। ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার আমদানি করা ফলকে বিলাসী পণ্যের অন্তর্ভুক্ত করে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে। সম্প্রতি আরও দুটি ফলে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া রমজানের কারণে ফলের চাহিদাও বেড়েছে। এ কারণে ফলের বাজার কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছে।
বাদামতলী ফলের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, রমজান সামনে রেখে সব ধরনের ফলের সরবরাহ বেড়েছে। গত ১৫ দিনে প্রচুর ফল আমদানি হলেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং ক্ষেত্র বিশেষে দাম আরও বেড়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ ফল আমদানি করতে হয়। কিন্তু গত বছর থেকে সরকার এসব ফলকে ‘বিলাসী পণ্য’ তকমা দেওয়ায় নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাজস্ব বোর্ড ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। এর সঙ্গে ডলার সংকট, তেল ও জাহাজের কনটেইনারের ভাড়া বাড়ায় ফলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তবে রমজান উপলক্ষ্যে সরকার ফল আমদানিতে এলসি খোলার পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ায় বাজারে ফলের কোনো সংকট নেই। দাম কমানোর উপায় আমাদের হাতে নেই। সরকার চাইলে কিছু করা সম্ভব। শুধু রমজান মাসের জন্য হলেও ফলের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।
পাইকারি ও খুচরা তুলনামূলক দাম: ফলের দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে আনতে রাজধানীর বাদামতলী, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, শান্তিনগর, ঝিগাতলা পরিদর্শন করে একটি সংবাদসংস্থা। দেখা যায়, সব বাজারেই কাছাকাছি মূল্যে পাইকারি ও খুচরায় ফল বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে ক্রাউন আপেল ২০ কেজির বক্স বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ফলে পাইকারিতে প্রতি কেজি আপেলের দাম পড়ছে ১৯০-২০০ টাকা। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। ফুজি আপেলের ২০ কেজির বক্স ৪৫০০-৪৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি কেজি ফুজি আপেলের দাম পাইকারিতে পড়ছে ২২৫-২৩৫ টাকা। খুচরা বাজারে এই আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা।
মিশরের মাল্টা ১৫ কেজির বক্স পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকায় (প্রতি কেজি ১৮৬-১৯০ টাকা)। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। ভারতের সাদা আঙুর ছোট ক্যারেট (৯ কেজি) ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা, বড় ক্যারেট (৯ কেজি) ৩৮০০ থেকে ৩৯০০ টাকা এবং দেশটির কালো আঙুর ছোট ক্যারেট ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব আঙুর প্রকারভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আনার ও আঙুর কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের আনারের কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, কালো আঙুরের কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ এবং সাদা আঙুরের কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চায়না কমলা (৯ কেজি) ১ কার্টন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ১৯০০-২০০০ টাকায়, কেজি ২০০-২১০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রকারভেদে এ কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। গ্রিন কমলা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫৭ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। রোজায় ইফতারের আরেকটি জনপ্রিয় ফল আনারস। অন্যান্য বছর রসালো এ ফলটি মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও এবার এটিরও দাম বেশি। বড় সাইজের একটি আনারস খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। একই আনারস এক বছর আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝারি ও ছোট আকারের আনারসের পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
এদিকে দেশি ফল পাকা কলার ডজন আট-দশ দিন আগেও কেনা গেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, এখন ডজনে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। চম্পা কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সবরি কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মের ফল তরমুজের বেচাকেনাও শুরু হয়েছে অল্প পরিসরে। বিক্রেতারা প্রতি কেজির দর রাখছেন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। সেই হিসাবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
পেয়ারার কেজি সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেদানা ৩৫০-৪০০ টাকা, সফেদা/আতাফল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড বরই বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। শান্তিনগর বাজারের ফলের ব্যবসায়ী সাদিকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার আমদানি করা সব ফলের দাম বেশি। শুধু রমজান সামনে রেখে সব ধরনের ফলে দাম বেড়েছে। আমাদের যেহেতু কিনতে হয় বেশি দিয়ে তাই কিছু করার নেই। তিনি বলেন, ফলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। এই দুর্মূল্যের বাজারে তারা সংসার চালাবে নাকি বিলাসিতা করে ইফতারে ফল খাবে?
রোজায় ফলের শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ফলের বাজার এখন নি¤œমধ্যবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তদেরও নাগালের মধ্যে নেই। এর কারণ সরকারের শুল্কারোপের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অতিমাত্রায় মুনাফা অর্জন। রমজানকে ব্যবসায়ীরা সুযোগ হিসেবে নেন এবং কারণ ছাড়াই ফলের দাম বাড়ান। অন্যান্য পণ্য কিছুটা মনিটরিং করা হলেও ফলের বাজারে কোনো মনিটরিং নেই।
অস্থির লেবুর বাজার, চড়া শসা-বেগুন: প্রতি বছরের মতো লেবু, শসা, বেগুনের দাম বেড়ে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা, বেগুন ও শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা। তবে আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। আবু হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, বছরের এ সময়টাতে লেবুর দর কিছুটা বেশি থাকে। এছাড়া রমজান চলে আসায় চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ কম। সে কারণে দাম কিছুটা বেশি। লেবুর এমন আগুন দামে হতভম্ব খোদ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে কাঁচাবাজার বণিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে দেখলাম এক হালি লেবুর দাম ৬০ টাকা। তাতে একটির দাম পড়ে ১৫ টাকা। অথচ একটু আগে আমার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে ফোন করে জানলাম, সেখানে পাইকারিতে প্রতিটি লেবু ৫ থেকে ৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে একটা লেবুর দাম হয়ে যাচ্ছে তিনগুণ।’
রমজানে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে, তবে সেগুলোর আমদানি সংকট ও ডলারের দাম বাড়ার মতো কারণ আছে। তবে দেশের উৎপাদন দিয়েই চাহিদা মেটে লেবুর। আমদানির প্রশ্ন না থাকায় লেবুর সঙ্গে ডলারের দর বাড়ার সম্পর্ক নেই। তবু অস্বাভাবিক লেবুর দাম। শসা-বেগুনেও আগুন। ইফতারির অন্যতম উপকরণ হলো শসা। বাজারে এখন তিন ধরনের শসা পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি ১১০ থেকে ১২০ দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অথচ কয়েকদিন আগেও দেশি ও হাইব্রিড দুই জাতের শসার কেজি কেনা গেছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। গত বছরও রোজার দুদিন আগেই শতক ছুঁয়েছিল বেগুন। তবে এবার দর শতকে না গেলেও কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।
পাঁচ টাকার লেবু ১৩ টাকায় বিক্রি, জরিমানা ৫০ হাজার: রমজান মাসকে ঘিরে সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের বাজারে লেবুর দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পাঁচ টাকার লেবু বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় নগরের এক বিক্রেতাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সোমবার (১১ মার্চ) সকালে নগরের স্টেশন রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ। এসময় তাকে সহায়তা করেন সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান ও নাসরিন আকতার। ফয়েজ উল্লাহ বলেন, মেম্বার বাণিজ্যালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা নেই। তাই সুযোগ বুঝে একেক সময় একেক দামে লেবু বিক্রি করছিল। বাগান থেকে লেবু কেনার রশিদও নেই। ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানকে।
চিনি, ছোলা, লেবু, ডাল ও খেজুরের দামে ইফতারের খরচ বাড়বে: রোজায় চিনি, খেজুর, সয়াবিন তেল, ছোলাসহ ইফতারসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদের ডালের চাহিদা বেড়ে যায়। এ বছর এসব পণ্যের প্রায় সবগুলোর দামই চড়া। এর মধ্যে চিনি ও তেলের দাম এক বছরের বেশি সময় ধরে বাড়তি। তার সঙ্গে রোজাকে সামনে রেখে এবার খেজুর, ছোলা ও ডালের দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ, বেগুন, শসা ও লেবুর দামও চড়া। বিদেশি ফলের দাম নাগালের মধ্যে নেই। তাতে ইফতার আয়োজনে সাধারণ মানুষকে এবার খরচ সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হবে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই রোজার বাজারে চিনি, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজ ও অ্যাংকর ডালের দাম সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রোজার আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এ বছর চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তাতে এক বছরে চিনিতে খরচ বেড়েছে সর্বনি¤œ ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা। টিসিবির হিসাবে, ২০২১ সালে রোজার আগে বাজারে ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এ বছর দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তাতে দুই বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে টিসিবির দামের চেয়ে বাজারে চিনি ও ছোলার দাম আরও বেশি। বাজারভেদে এ দুটি পণ্যের দাম টিসিবির দেওয়া দামের চেয়ে ৫ টাকার বেশি। এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর স্টোরের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রোজার আগে ছোলা ও বিভিন্ন ধরনের ডালের দাম বাড়তি। বেসনের দামও বেড়েছে। বর্তমানে কেজিপ্রতি বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত দুই বছরে বাজারে অ্যাংকর ডালের দাম বেশ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। গত বছর এ দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর ২০২২ সালের রমজানের আগে অ্যাংকর ডালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গত বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ২০২২ সালে এ দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
ইসবগুলের ভুসির দাম বেড়েছে ৫শ টাকা, ট্যাং রুহ আফজায়ও আগুন: রোজা সামনে রেখে ইতোমধ্যে বেড়েছে শরবতের বিভিন্ন উপাদানের দাম। ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজাসহ এ ধরনের সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। গত রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকায়। যা তিন মাস আগে ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০০ টাকা। ৭৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত ট্যাং আগে বিক্রি হতো ৭৬০ টাকায়। এখন নতুন উৎপাদন করা প্যাকেটে দাম বাড়ানো হয়েছে। ছোট সাইজের রুহ আফজা ৩০০ মিলিলিটারের দাম আগে ছিল ২১০ টাকা। এখন ২৮০ টাকা করা হয়েছে। বড় সাইজের রুহ আফজা আগে ছিল ৩৫০ টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এছাড়া ইসপি, অরেঞ্জ, ম্যাংগো ফ্লেভারের বিভিন্ন শরবতের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি বাজার থেকে গত পরশু ইসবগুলের ভুসিসহ নানা প্যাকেটজাত ও জারভর্তি শরবতের পাউডার নিজের দোকানে বিক্রির জন্য কিনে এনেছেন রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন একটি বাজারের দোকানি হাবিবুর রহমান। আলাপকালে তিনি জানান, শরবত আইটেমের মধ্যে ইসবগুলের ভুসির খুব চাহিদা থাকে রমজান মাসে। পাইকারি বাজারে এটা কিনতে গিয়ে দেখি আগের চেয়ে কেজিতে দাম প্রায় ৫০০ টাকা বেড়েছে। এটার দাম তিন মাস আগেও ক্রেতা পর্যায়ে ছিল ১৬০০ টাকা কেজি। কিন্তু এখন দাম বেড়ে ২১০০ টাকা হয়েছে। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ফ্লেভারের প্যাকেটজাত জুসের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। রুহ আফজার বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম এখন বাড়তি। তাই উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে। যে কারণে এ বছর রমজানের আগে যেসব নতুন মাল বাজারে ছাড়া হয়েছে সেগুলোর দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। মূলত উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা পর্যায়ে রুহ আফজার দাম অল্প পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে, গুণগতমানে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজার পাশাপাশি শরবতের অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। এই মুহূর্তে বেলের দাম ১ পিস ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, লেবুর হালি (৪ পিস) ৬০ টাকা, পুদিনা পাতা ১০ গ্রাম ৩০ টাকা, ৬ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজের একটি আনারস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা কমলার কেজি ৩৬০ টাকা, ডাব ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাল্টা প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মহাখালী এলাকার ডাব বিক্রেতা আক্কাস আলী বলেন, মাঝারি সাইজের ডাব পাইকারি বাজারে এখন প্রতি পিস ৮০-৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর প্রতি ১০০ পিস কিনতে লাগছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। তিনি বলেন, রোজা সামনে রেখে গত কয়েকদিনে কারওয়ান বাজারেও ডাবের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। ঢাকায় বেশিরভাগ ডাব আসে ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকে। এসময় গাছে ডাব কম থাকে, আবার রোজা শুরু হচ্ছে। সবমিলিয়ে বাজারে চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। রাজধানীর গুলশান এলাকার ফলের দোকানি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ইফতারিতে অনেকে ফলমূল বেশি খান, সে কারণে চাহিদাও থাকে অনেক বেশি। রমজান মাসে ফলের ফ্রেশ জুসের চাহিদা বেশি থাকে। তাই ফলের দামও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে মাল্টা, কমলা, বেল, আনারস, বেদানার দাম বেড়েছে।