ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে নীলক্ষেতে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

  • আপডেট সময় : ০১:১৩:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ‘গণহারে ফেলের’ অভিযোগ এনে তা পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে একদল শিক্ষার্থী।
গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী কর্মসূচি শুরু করেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তারা এদিনের মত কর্মসূচি শেষ করেন। ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন অথবা আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল প্রকাশের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলে এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। তাদের এই অবস্থান কর্মসূচির কারণে আজিমপুর-মিরপুর সড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে তাদের পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাসে সাত কলেজের আট থেকে নয়টি বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে ‘বিপর্যয়’। এর মধ্যে ইংরেজি বিভাগে সাতটি কলেজেই গণহারে ‘ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইংরেজি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষে ‘ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়’ হয়েছে। তিতুমীর কলেজের ২৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৩ জন ফেল, ইডেন মহিলা কলেজের ২১০ জনের মধ্যে ১৭৫ জন ফেল, সরকারি বাংলা কলেজের ১১৬ জনের মধ্যে ৯২ জন ফেল, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন ফেল করেছেন। অন্যান্য বিভাগের ফলাফলও ভালো নয়।
‘এত বিপুল শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে কোনো কারণ কলেজ প্রশাসন দেখাতে পারছে না। আমরা চাই খাতাগুলোর আবার মূল্যায়ন করা হোক।’
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদেরকে চার বছরের জায়গায় ছয় বছর পড়তে হয়েছে। কোনো ক্লাস ছাড়া মাত্র ২০দিনের নোটিসে আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর দেখা গেছে প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে গণহারে ফেল। তিনশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০ জন বা ২৫ জন পাস করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ফেল করার মত পরীক্ষা আমরা দেইনি। আমাদের নিজেদের কনফিডেন্স আছে। আমরা চার বছর পড়ালেখা করেই ফাইনাল ইয়ারের এসেছি, আমরা যদি কোনো পড়ালেখাই না করতাম, তাহলে ফার্স্ট ইয়ারেই আমাদের আরও খারাপ হত বা আমরা এগোতে পারতাম না।’
সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী ওসমান গনী বলেন, ‘আমাদের ২০১৯ সালের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ২০২১ সালে, চার বছরের কোর্সে ছয় বছর লেগে গেছে। তারপর ফলাফলে দেখা গেছে গড়ে সবাইকে একটা সাবজেক্টে ফেল করানো হয়েছে। ‘ক্লাস না হলেও আমরা ফুল সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছি। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে আমাদের ছয় বছর লেগে গেছে, আমরা গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এই সাত কলেজ থেকে মুক্তি চাই, আমরা খাতার পুনর্মূল্যায়ন চাই।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘রাস্তায় নামলেই কি সমাধান হয়ে যায় নাকি? তাদের উচিত ছিল সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলা। তাদের অধ্যক্ষরা সেটা আমাদের জানাবেস।’
গণহারে ফেলের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খাতা তো দেখেছে সাত কলেজের শিক্ষকরাই, এটা তো আর ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা দেখেনি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জিজ্ঞাসা করেছি, ওই খাতাগুলো সাত কলেজের শিক্ষকরাই দেখেছেন।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে নীলক্ষেতে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আপডেট সময় : ০১:১৩:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ‘গণহারে ফেলের’ অভিযোগ এনে তা পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে একদল শিক্ষার্থী।
গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী কর্মসূচি শুরু করেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তারা এদিনের মত কর্মসূচি শেষ করেন। ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন অথবা আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল প্রকাশের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলে এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। তাদের এই অবস্থান কর্মসূচির কারণে আজিমপুর-মিরপুর সড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে তাদের পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাসে সাত কলেজের আট থেকে নয়টি বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে ‘বিপর্যয়’। এর মধ্যে ইংরেজি বিভাগে সাতটি কলেজেই গণহারে ‘ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইংরেজি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষে ‘ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়’ হয়েছে। তিতুমীর কলেজের ২৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৩ জন ফেল, ইডেন মহিলা কলেজের ২১০ জনের মধ্যে ১৭৫ জন ফেল, সরকারি বাংলা কলেজের ১১৬ জনের মধ্যে ৯২ জন ফেল, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন ফেল করেছেন। অন্যান্য বিভাগের ফলাফলও ভালো নয়।
‘এত বিপুল শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে কোনো কারণ কলেজ প্রশাসন দেখাতে পারছে না। আমরা চাই খাতাগুলোর আবার মূল্যায়ন করা হোক।’
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদেরকে চার বছরের জায়গায় ছয় বছর পড়তে হয়েছে। কোনো ক্লাস ছাড়া মাত্র ২০দিনের নোটিসে আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর দেখা গেছে প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে গণহারে ফেল। তিনশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০ জন বা ২৫ জন পাস করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ফেল করার মত পরীক্ষা আমরা দেইনি। আমাদের নিজেদের কনফিডেন্স আছে। আমরা চার বছর পড়ালেখা করেই ফাইনাল ইয়ারের এসেছি, আমরা যদি কোনো পড়ালেখাই না করতাম, তাহলে ফার্স্ট ইয়ারেই আমাদের আরও খারাপ হত বা আমরা এগোতে পারতাম না।’
সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী ওসমান গনী বলেন, ‘আমাদের ২০১৯ সালের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ২০২১ সালে, চার বছরের কোর্সে ছয় বছর লেগে গেছে। তারপর ফলাফলে দেখা গেছে গড়ে সবাইকে একটা সাবজেক্টে ফেল করানো হয়েছে। ‘ক্লাস না হলেও আমরা ফুল সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছি। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে আমাদের ছয় বছর লেগে গেছে, আমরা গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এই সাত কলেজ থেকে মুক্তি চাই, আমরা খাতার পুনর্মূল্যায়ন চাই।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘রাস্তায় নামলেই কি সমাধান হয়ে যায় নাকি? তাদের উচিত ছিল সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলা। তাদের অধ্যক্ষরা সেটা আমাদের জানাবেস।’
গণহারে ফেলের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খাতা তো দেখেছে সাত কলেজের শিক্ষকরাই, এটা তো আর ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা দেখেনি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জিজ্ঞাসা করেছি, ওই খাতাগুলো সাত কলেজের শিক্ষকরাই দেখেছেন।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।