সিলেট সংবাদদাতা : সিলেটের বালাগঞ্জে সওজের একটি সেতু নির্মাণে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ সম্পন্ন করার পায়তারা করছে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, লোক চক্ষুর আড়ালে যেনতেনভাবে রাতের আঁধারে ব্রিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর আওতাধীন সিলেট সড়ক বিভাগের অধীনে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে আইডি নং- ৭৪৩৮৭৩ টেন্ডারের মাধ্যমে সিলেট সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে বালাগঞ্জের ফতুরখাড়া পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করেন। সেই টেন্ডারের আলোকে ২০২৩ সালের ২৭ মে বালাগঞ্জ উপজেলার সিলেট সুলতানপুর বালাগঞ্জ সড়কের ২১তম কি.মি.-এ ৭৬.০১ মিটার দৈর্ঘ্যের ফতুরখাড়া পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণের প্রাক্ষলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত হয় ‘জনজেবি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। কাজের ডিজাইন ও ড্রয়িং অনুযায়ী দেখা যায়, ফতুরখাড়া গার্ডার ব্রিজে ৪৫ মিটার করে ৩২টি পাইল করার কথা থাকলেও এতে বেশিরভাগ পাইল ২৪ মিটার আবার কয়েকটি ৩৬ মিটারও করা হয়েছে। যাতে করে ২১ মিটার ও ৯ মিটার করে পাইল কম দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনজেবি রডের যে খাচা তৈরি করেছিল তা মেপে দেখা যায় প্রতিটি ১২ মিটার করে। এলাকাবাসী জানান, ব্রিজ নির্মাণে পাইল এর দৈর্ঘ্য কম দেওয়ার ফলে ব্রিজটি খুবই দূর্বল হবে, এমনকি বেশি গাড়ি চলাচল করলে ব্রিজ ভেঙেও যেতে পারে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করেই রাতের অন্ধকারে পাইলের কাজ করেছেন যাতে সংবাদকর্মী ও এলাকাবাসী পাইলের গভীরতা সম্পর্কে জানতে না পারে। সবগুলো পাইলের কাজই গভীর রাতে সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা। সংবাদকর্মীসহ স্থানীয়রা নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান ও নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেনকে রাতের অন্ধকারে ঢালাই এর কাজ ও পাইলের গভীরতা কম দেওয়ার বিষয়ে অবগত করলেও তারা উদাসীনতা দেখান। তারা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, পাইল ঢালাই কাজে রড-সিমেন্ট পরিমাণে কম দেওয়ার জন্য ও পাইলের গভীরতায় অনিয়ম করার লক্ষ্যে সওজ কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উভয়ে পরিকল্পিতভাবে অনিয়ম-দূর্নীতি করার জন্যই রাতের অন্ধকারে সকল পাইল ঢালাই এর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। জানা গেছে, কোনো একটি পাইল ঢালাইয়ের সময়ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তা সরেজমিন উপস্থিত ছিলেন না। অথচ নিয়ম অনুযায়ী উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী পাইল ঢালাই চলাকালীন সরেজমিন উপস্থিত থাকতে বাধ্য। ৩২টি পাইল ঢালাইয়ে অনিয়ম দুর্নীতির কোনো অন্ত ছিলো না। এখন পাইল ইন্টিগ্রিটি টেস্ট না করেই পরবর্তী কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। রহমতপুর এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, ‘ফতুরখাড়া ব্রিজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যপক অনিয়ম করেছে। ব্রিজের পাইলে রডের খাচা পরিমাণের চেয়েও কম দিয়েছে এবং রাতের অন্ধকারে কাজ করেছে।’ এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আমি উক্ত কাজ পরিদর্শনে যাইনি, আমার জানামতে কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম হয়নি। আর যদি কোনো দুর্নীতি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা করেছেন।’
জনপ্রিয় সংবাদ