স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: প্রেগন্যান্সির সময় একজন মা প্রথম তিন মাস বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্য দিয়ে যান। এই সময় তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। অনেকে ভুল জীবন যাপনের জন্য মিসক্যারেজের ঝুঁকিতে পরে যান। প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস কী করা যাবে আর কী করা যাবে না এই বিষয়ে কনসালটেন্ট ফয়েজা আক্তার, গাইনি ও অবস স্পেশালিস্ট, ইমপালস হসপিটাল বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন—
বেড রেস্ট: কোনো কোনো মায়ের কিছু কিছু ঝুঁকি থাকে। সেগুলো ডাক্তার বলে দেবেন। তাদের ক্ষেত্রে শুয়ে থাকা বা বেড রেস্টের ব্যাপারটি ডাক্তার নিজেই উল্লেখ করে দেন। এটা ছাড়া যারা নরমাল প্রেগন্যান্সিতে আছেন তারা স্বাভাবিকভাবে সাংসারিক সব কাজ করতে পারবেন। শুধুমাত্র ভারি কাজ এড়িয়ে যেতে হবে।
কী খাবেন: দেখা যায় যে প্রথম তিন মাস খুব বমি হয়। যতবেশি বমি হয় ততই শরীর দুর্বল হয়ে পরে। এই তিন মাসে যদি ওজন না বেড়ে কমেও যায় তাহলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বমি বেশি হয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আনারস, পেঁপে, আদা না খাওয়ায় ভালো। বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না। ঘরে তৈরি খাবার খেতে হবে।
শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন: প্রথম তিন মাস স্বামী-স্ত্রী ইন্টারকোর্স বা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। কারণ মিসক্যারেজের আশঙ্কা আছে।
যাতায়াত: প্রথম তিন মাস ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় যাওয়া আসা না করাই ভালো। অপ্রয়োজনে দূরে যাওয়া যাবে না। এ ছাড়া যেখানে অধিক মানুষের সমাগম আছে যেমন—শপিংয়ে যাওয়া বা দাওয়াতে না যাওয়াই ভালো। এতে জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এই সময় মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাই জন সমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
নিয়মিত হাঁটাচলা: প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হবে। ১০ মিনিট পর পর একটু হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ঘরের ভেতরেই হাঁটতে পারেন। বাসার সামনে পার্ক থাকলে পার্কেও হাঁটতে যেতে পারেন।
উল্লেখ্য,প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাসে কিছু কিছু মায়ের মানসিক বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। যেমন অল্পতেই রেগে যাওয়া, কেঁদে ফেলা। এই অবস্থায় পরিবারের অন্য সদস্যরা তার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করে তার ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দিতে পারেন। একটু আহ্লাদ দেখাতে পারেন। এতে সে মানসিক ভাবে ভালো বোধ করবে।
নতুন বছরে ৭টি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন
স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: নতুন বছরে যে কোনো মানুষের প্রথম চাওয়া হওয়া উচিত সুস্থ থাকা। নিজে সুস্থ না থাকলে কোনো পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ জন্য ইতিবাচক, নির্দিষ্ট এবং অর্জনযোগ্য ছোট ছোট পদক্ষেপ বাস্তবায়নের উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। নতুন বছরে ৭টি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন যা আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা দিতে পারে।
১. এক গ্লাস পানি পান করার মাধ্যমে দিন শুরু করুন: সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় ডিহাইড্রেটেড বোধ হতে পারে। এজন্য সকালে এক গ্লাস পানি পান করতে পারেন। এ ছাড়া স্যুপ অথবা ভেষজ চা পান করতে পারেন শক্তি পাওয়ার জন্য। এই অভ্যাস আপনার ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
২. একটানা ১০ মিনিট হাঁটুন: প্রতি সপ্তাহে মাত্র ২ ঘণ্টা ব্যায়াম করার মাধ্যমে হার্টের স্বাস্থ্য, ফুসফুসের ক্ষমতা, রক্তচাপ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। প্রতিদিন ১০ মিনিট হাঁটতে পারেন। এই অভ্যাস হলো সেভিংস অ্যাকাউন্ট-এর মতো। যার ফলাফল মুনাফার মতো চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। প্রতিদিন ১০ মিনিট হাঁটলে কার্ডিওভাসকুলার ভালো থাকে।
৩. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন: আপনি যখন ব্যস্ত থাকেন বা অন্যের যত্ন নেন তখন আপনার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আপনি যদি চাকরির চাপ, জীবনের পরিবর্তন, বা পারিবারিক দায়িত্বের কারণে মানসিক অসুস্থতা বোধ করেন তাহলে একজন থেরাপিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
৪. বাড়িতে রান্না করা খাবার গ্রহণ করুন: বছরজুড়ে ভালো থাকার জন্য বাড়িতে রান্না করা খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। বাড়িতে রান্না করা খাবার আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবে, ঘুম উন্নত করবে এবং উচ্চমাত্রার শক্তি সরবরাহ করবে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: সম্ভাব্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
৬. প্রতিদিন পানির গ্লাস এবং কফির মগ ধুয়ে নিন: আপনি প্রতিদিন যে আইটেমগুলি ব্যবহার করেন তা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। মগ ধুয়ে শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করুন। আপনার এই অভ্যাসটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করবে। এ ছাড়া গোসলের ঝরনা তোয়ালে, টুথব্রাশ এবং ওয়াটার কাপ সহ ভিজে থাকা যেকোনো কিছুতে আপনার ধারণার চেয়ে বেশি জীবাণু থাকতে পারে। এগুলো যথাযথভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি অসুস্থ থাকেন ব্রাশ ব্যবহারের পরে এন্টিসেপটিক মাউথওয়াশ দিয়ে ব্রাশটি জীবাণুমুক্ত করে নিতে পারেন । এতে আপনার ব্রাশের জীবাণু অন্যদের ব্রাশে ছড়াবে না। অথবা আপনার ব্যবহৃত ব্রাশটি অন্যদের ব্রাশের কাছাকাছি রাখবেন না।
৭. প্রতি রাতে একই সময়ে বিছানায় যান: বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য পুষ্টি এবং ব্যায়ামের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘুম। ভালো ঘুম প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মশক্তি বাড়িয়ে দেয়, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুমান। ঘুমের একটি স্বাস্থ্যকর রুটিন তৈরি করুন। প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে জেগে উঠুন। ঘুমানোর আগে বেডরুমকে যতটা সম্ভব অন্ধকার করুন এবং ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগেই ফোন ব্যবহার বন্ধ করুন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইলেক্ট্রিক ডিভাইসগুলি নীল ছড়ায়। যা মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ঘুম নষ্ট করে।
নিজেকে সুখী, গর্বিত এবং কৃতজ্ঞ করতে এই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলতে পারেন। যা আপনার নতুন বছরের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আশা করা যায়।