প্রত্যাশা ডেস্ক : মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময় অনলাইনে ক্লাসহ বিভিন্ন বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করা হলেও তাতে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
গতকাল শনিবার চাঁদপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যেসব শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদেরকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় রিমিডিয়াল ক্লাসেস (প্রতিকারমূলক পাঠদান) করানো হবে।’
দুপুরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালে যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তখন আমরা বিকল্প হিসেবে টেলিভিশন এবং অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রেখেছিলাম। যখন দেখেছি তার মধ্যেও একটি সংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশন দেখার সুযোগ ছিল না, তারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল, তখন আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থা করেছি। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। তারপরেও শ্রেণিকক্ষের মতো এই ব্যবস্থা একেবারে ষোলআনা বিকল্প নিশ্চয় করতে পারিনি। কোথাও কোথাও ঘাটতি রয়েছে। তাই এই ঘাটতি পূরণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। বক্তব্য দেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নাছিম আখতার, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের এসপি কামরুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ, প্রধান মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিছুর রহমান প্রমুখ। এর আগে শুক্রবার চাঁদপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী জানান, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মহামারি করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি আছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ছুটি আর বাড়ছে না বলে জানা গেছে।
প্রাথমিকভাবে এক দিন করে ক্লাসের চিন্তা: শিক্ষা উপমন্ত্রী : শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষিত তারিখে আমরা ক্লাস শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। প্রাথমিকভাবে এক দিন করে আমরা চিন্তা করছি। তবে সেটা পরিবর্তন হতে পারে। আমরা আরও বেশি দিন হয়তো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনতে পারব।’
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার (ওএসইসি)–এর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ১০০ শয্যার এই জরুরি বিভাগে সব ধরনের সেবার ব্যবস্থা থাকবে বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর জানান।
গতকাল শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি করোনা মহামারির কারণে দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খোলার ঘোষণা দেন। এক প্রশ্নের জবাবে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা খাতে কিন্তু বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অনলাইনে, টেলিভিশনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়।’
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটা বিষয় চিন্তা করছি। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাটা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে নেওয়ার। সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এটাই এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমগুলো স্বাভাবিকভাবে চলবে।’ চমেক হাসপাতালে ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার (ওএসইসি)–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসক ও নার্সদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান। এতে আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর, চমেক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এম এ হাসান চৌধুরী, চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আকতার, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর, চমেক সহকারী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
প্রাথমিকভাবে এক দিন করে ক্লাসের চিন্তা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ