নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে।
গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর পর প্রথম দিন প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে এসেছেন। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে গত বছর ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় গত ২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিকেল কলেজে ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এর মধ্যে রোববার দেশের সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। তার পরদিনই শুরু হল মেডিকেলের ক্লাস। এতদিন অনলাইনে তাত্ত্বিক বিষয়ের পাঠদান হলেও মেডিকেলের ব্যবহারিক ক্লাসগুলো বন্ধ ছিল। সোমবার শুরু হয়েছে সেসব ক্লাসও।
সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস কোর্সের নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনও হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে কলেজের ফটক এবং শ্রেণিকক্ষের দরজা সাজানো হয় বেলুন দিয়ে। অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনের বাগানে ছবি তুলছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে রাফি বলেন, “অনেকদিন পর সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছেম এটা অনেক বড় পাওয়া।
“আমাদের মেডিকেল পড়ালেখাটা একটা লং জার্নি। এখানে আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অনলাইনে সবকিছু সম্ভব না। এখন নতুন করে শুরু হওয়ায় সামনা-সামনি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলো করব- এসব ভেবেই ভালো লাগছে।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মিজানুর রহমান বলেন, “সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ায় ভালো লাগা কাজ করছে। আমাদের সবকিছুই এখন বিভিন্ন ওয়ার্ডে, রোগীদের কাছে।
“প্র্যাকটিকাল ওরিয়েন্টেড হওয়ায় এখন ওয়ার্ডে রোগীদের কাছে গিয়ে সবকিছু দেখতে পারব। নিজে বুঝতে পারব, রোগী ডিল করতে পারব। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা শুরু হয়েছে, এজন্য খুবই ভালো লাগছে।”
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানান, এতদিন বাসায় থেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, জড়তা ভেঙে আসতে কিছুদিন সময় লাগবে। পড়ালেখার ক্ষতি পোষাতে আরও বেশি ক্লাস নেওয়ার পরামর্শ এই শিক্ষার্থীর। “এখন যেটা করা যায় ক্লাসের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া যায়। যেহেতু আমাদের ক্লাসের শিডিউল কম, এটা বাড়ানো যেতে পারে। বা আরও বেশি পরিমাণে ক্লাস নিয়ে ঘাটতিটা পোষানো যায়।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস শুরুর সব প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। প্রতিদিন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম বর্ষের জন্য প্রথম এক ঘণ্টার ক্লাস হবে অনলাইনে। তিনি বলেন, “প্রতিটা ক্লাসে আড়াই থেকে তিনশর মতো স্টুডেন্ট আছে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্যও সময় ভাগ করা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই যেন তারা একসাথে হয়ে না যায়। এর ফলে গ্যাদারিং হবে না।”
ক্লাস বন্ধ থাকায় পড়ালেখার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ডা. মো. টিটু মিঞা।
“প্র্যাকটিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল ক্লাসগুলো নিতে সমস্যা হয়েছিল। এটা পোষাতে আমরা ক্লিনিক্যাল ক্লাসগুলো ডাবল নিচ্ছি। যে ক্ষতিটুকু হয়েছে ডাবল ক্লাস নিয়ে হলেও তা ঠিক করতে রেডি আছেন শিক্ষকরা।” অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সব বর্ষের পাঠদান শুরু হয়েছে।
নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ হাসান শুভ বলেন, “মেডিকেল পড়াশোনা হাতেকলমে হওয়া খুবই জরুরি। অনলাইনে ক্লাস করে আর কত আগানো যায়! যদিও আরও আগে খুলে দিলে ভালো হতো কিন্তু এটা ভালো হয়েছে। আরও লেট করলে আরও ক্ষতি হয়ে যেত।”
ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আসলে সবাই উৎফুল্ল। এতদিন পর ক্যাম্পাসে আসতে পারলাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্র্যাকটিক্যালি ক্লাস করতে পারছি। ক্লাস বন্ধ থাকায় আসলে সবারই ক্ষতি হয়েছে। এখন সবাই মিলে তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের ৩৭টি সরকারি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। প্রতি বছর সরকারি মেডিকেল কলেজের ৪ হাজার ৩৫০টি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৪২টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
প্রাণ ফিরেছে মেডিকেল কলেজে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ