বিনোদন ডেস্ক: দেশের তরুণ নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজুর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নট আ ফিকশন’ এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনলো গৌরব। চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে অনুষ্ঠিত ইন্ডিপেনডেন্ট সিনেমা উৎসবে (করহড় চরষড়ঃঁ ঞযবধঃৎব) সেরা সুপার শর্ট ফিল্ম হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে এই চলচ্চিত্রটি। বিশ্বের ৯৫টি দেশের ৩,২৬৬টি চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে বাছাই করা হয় মাত্র ৭২টি ছবি, যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি ছিল ‘নট আ ফিকশন’। এই সম্মাননা অর্জনের পর নির্মাতা সিজু বলেন, “এটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার। কাফকার শহরে এসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। একজন বিচারক বলেছিলেন, এই ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল ইউরোপের একটি আলোচিত ছবি, যার বাজেট প্রায় ৫০ হাজার ইউরো। অথচ ‘নট আ ফিকশন’-এর বাজেট ছিল মাত্র ১০০ ইউরোরও কম। তবুও গল্প ও নির্মাণশৈলীর শক্তিতেই এটি পুরস্কার পেয়েছে।”
‘নট আ ফিকশন’ প্রমাণ করেছে, বড় বাজেট নয়, দর্শকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো গল্প এবং নির্মাণশৈলিই একটি চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিতে পারে। অতি স্বল্প বাজেটে নির্মিত হলেও এই ছবিটি তীব্র প্রতিযোগিতা থেকে বিজয়ী হয়েছে কেবলমাত্র নির্মাতা সিজুর মৌলিক ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির জন্য। নির্মাতা জানিয়েছেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই অনলাইনে মুক্তি পাবে ‘নট আ ফিকশন’। ফলে দর্শকরা খুব সহজেই ঘরে বসেই উপভোগ করতে পারবেন এই পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি। এটি নির্মিত হয়েছে সহপ্রযোজক সাদিয়া খালিদ রীতি ও লাইলি বেগমের সহযোগিতায়।
‘নট আ ফিকশন’-এ অভিনয় করেছেন উদয়ন রাজীব, নাঈমুল আলম মিশু, ঐশিক সামি আহমেদ, রুদ্রনীল আহমেদ, জাওয়াদ সৌধ এবং মিথুন। ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন আহসান স্বরণ এবং সৈয়দ তামুর হাসান। ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন মোকাররম রানা। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন মো. আসিফ। চলচ্চিত্রটির সাউন্ড ডিজাইন করেছেন রিপন নাথ ও রনি সাজ্জাদ, কালার করেছেন রাশাদুজ্জামান সোহাগ, সম্পাদনায় ছিলেন লিওন রোজারিও এবং তানভীর আহমেদ রনি। এছাড়াও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন মো. আমান খান এবং আল আমিন সুমন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির জন্য ‘নট আ ফিকশন’-এর এই অর্জন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে, সীমিত সুযোগ-সুবিধার মাঝেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতা করার মতো যোগ্যতা বাংলাদেশের নির্মাতাদের রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যেভাবে স্বাধীন ও মৌলিক ভাবনার চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ বাড়ছে, তা দেশের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।
‘নট আ ফিকশন’ শুধু একটি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি নয়; এটি একটি অনুপ্রেরণা। প্রমাণ করে, অল্প বাজেটেও বড় স্বপ্ন সফল করা যায়, যদি গল্প হয় শক্তিশালী, নির্মাণ হয় সৎ আর চিন্তা হয় মৌলিক। নির্মাতা সিজুর এই সাফল্য নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের জন্য পথ দেখাবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের সৃজনশীলতা তুলে ধরতে উৎসাহিত করবে।