গাজীপুর সংবাদদাতা : গাজীপুর নগরে এক শিক্ষক দম্পতির লাশ তাদের প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে উদ্ধারের ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলছেন তাদের স্বজনরা।
তাদের দাবি, দম্পতির সঙ্গে থাকা স্বর্ণলংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ফলে এটিকে হত্যাকা- বলে মনে হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকা থেকে শিক্ষক মো. জিয়াউর রহমান মামুন ও তার শিক্ষিকা স্ত্রী জলি আক্তারের লাশ তাদের প্রাইভেট কার থেকে পুলিশ উদ্ধার করে বলে গাজীপুর গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী জানান। জিয়াউরের বড় ভাই মো. রিপন সাংবাদিকদের বলেন, “এ হত্যাকা-টি পুরোই পরিকল্পিত। আমার ভাই ও তার স্ত্রীর সঙ্গে থাকা স্বর্ণলংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত না-ই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেতো। তার কিছুই তারা নেয়নি। ”
জিয়াউর জলি দম্পতির গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায়। জিয়াউর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং জলি স্থানীয় আমজাদ আলী হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। জিয়াউরের ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ জানান, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান জিয়াউর। এর আগে গাজীপুরের কালীগঞ্জের পুনসই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তিনি পরিবারের সঙ্গে গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে থাকতেন। তিনি বলেন, “জিয়াউর আর জলি দুজনেই ব্যক্তিগত গাড়িতে করে স্কুলে যাতায়াত করতেন। বুধবার স্কুল শেষে সহকর্মী ও সম্পর্কে মামাতো ভাই মো. কামরুজ্জামানকে গাড়িতে তুলে জলির স্কুলে যান জিয়াউর। সেখান থেকে জলিকে গাড়িতে তুলে বাসার পথে রওনা হন তারা। পথে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দেন জিয়াউর। কামরুজ্জামান জিয়াউরের স্কুলের গণিতের সহকারী শিক্ষক।
“জিয়ার ছেলে মিরাজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে পৌনে সাতটার দিকে তার বাবার মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় সে মায়ের মোবাইলে ফোনে কল করে। এ সময় জলি তাকে ফোন ধরে বাসায় আসছেন বলে জানান। কিন্তু এরপর থেকে ফোনে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।” পরে তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। তাছাড়া রাতভর বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ করেন বলে জানান রশিদ।
টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান রানা বলেন, “জিয়াউর ও কামরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। জিয়াউর স্যার গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় এবং কামরুজ্জামান টঙ্গীর শিলমুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কামরুজ্জামান একই স্কুলের গণিতের সহকারি শিক্ষক। জিয়াউর স্যারও গণিতের শিক্ষক ছিলেন।“কামরুজ্জামান হেডস্যারকে মামাতো ভাই বলে সম্বোধন করতেন। স্কুলের সকল শিক্ষকের সঙ্গেই জিয়াউর স্যারের ভাল সম্পর্ক ছিল। কারো সঙ্গে কখনও বিরোধ ও খারাপ সম্পর্কের কথা শুনিনি।”
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, “বুধবার বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে স্কুলের পাশে প্রাইভেট পড়ানো শেষে স্কুলের গেটের কাছে যাই। এ সময় হেডস্যার জিয়াউর রহমান স্কুল থেকে বের হন। তিনি বাসায় যাবেন এবং পথে আমাকে নামিয়ে দেবেন জানিয়ে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। পরে তার স্ত্রীকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। “এ সময় হেডস্যার নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পথে টঙ্গী বিসিকের সাহারা মার্কেট এলাকায় আমাকে নামিয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তারা চলে যান। এরপর আমার সঙ্গে তাদের আর কোনো কথা বা দেখা হয়নি।” ওই শিক্ষক দম্পত্তির ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, “বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোনে করলে রিসিভ করেননি। তারপর কোনোভাবে যোগাযোগ করতে না পেরে রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। ভোর রাতের দিকে স্থানীয়রা প্রাইভেটকার দেখতে পেয়ে কাছে যান। এ সময় চালকের আসনে বাবা ও পাশেই মাকে নিস্তেজ অবস্থায় দেখে তাদের উদ্ধার করেন। “দুজনকে প্রথমে বোর্ডবাজার এলাকার তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অপর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।” এ সময় ঘটনাটি গাছা থানা পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের লাশ থানায় নিয়ে যায় বলে জানান তৌসিফুর। গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, দম্পতির মৃতদেহে হত্যাকা-ের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধারের সময় পাশে একটি খালি টিফিন বক্স পাওয়া গেছে। বাটিতে কি ছিল, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। ঘটনাটি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানিয়েছেন।
প্রাইভেটকারে শিক্ষক দম্পতির লাশ : স্বজনরা বলছে, হত্যা
জনপ্রিয় সংবাদ