ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের অন্তরায়’

  • আপডেট সময় : ০২:৪৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুন ২০২১
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সব ধরনের তামাকপণ্য আরো সহজলভ্য হবে এবং তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাকের ব্যবহার বাড়বে। হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্য, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি এবং সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয়ের সুযোগ হারাবে। গতকাল রোববার তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আায়োজিত অনলাইন বাজেট আলোচনায় এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ। অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে তামাক কর বিষয়ক প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয় বর্তমানে সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ নি¤œ স্তরের সিগারেট এবং প্রায় ১৬ শতাংশ মধ্যম স্তরের সিগারেট। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এই দুই স্তরের সিগারেটের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে দশ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ৭ টাকা বৃদ্ধি করে ১০২ টাকা এবং ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নামমাত্র মূল্যবৃদ্ধি (৫%) জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (৯%) তুলনায় অনেক কম। ফলে সবধরনের সিগারেট আরো সস্তা হয়ে যাবে। গ্যাটস ২০১৭ অনুযায়ী, ২০০৯ এর তুলনায় ২০১৭ সালে সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজেট পাস হলে আরেক দফায় সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিড়ি এবং বহুল ব্যবহৃত জর্দা ও গুলের দাম বৃদ্ধি না করায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে আরো বলা হয় তামাকে বর্ধিত করারোপ একটি দরিদ্র-বান্ধব উদ্যোগ। প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হলে প্রায় ১১ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে, ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লক্ষ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ হবে এবং সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এম.পি বলেন, ‘এবছরের বাজেটেই সিগাটেরের নি¤œ ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে সুনির্দিষ্ট কর দিতে হবে। আমরাতো মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করছি। আমরা তামাক সিন্ডিকেটের কাছে হারতে রাজি নই। গত একবছরে কোভিডে যত মানুষ মারা গেছে তারচেয়ে দশ-পনের গুণ মানুষ বছরের বেশি মারা যায় তামাক ব্যবহারের কারণে’। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম, সুনির্দিষ্ট করারোপের কথা বলেছিলাম কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেটা করা হয়নি। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই বাজেট প্রস্তাব পরিবর্তন করতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কমদামি সিগারেটের দাম এক ধাক্কায় বাড়াতে হবে। এরফলে তরুণরা ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। আমরা আগামীর স্বাস্থ্যবান তরুণদের পেতে চাই। তাহলেই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এর সুবিধা আমরা পাব। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ নি¤œ ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের ভোক্তা। তাই এখানে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল তাহলে রাজস্ব বাড়তো এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যেত। বাজেট প্রতিক্রিয়ার আলোচনায় আরো অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় বাজেট বিশ্লেষণ এবং প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের অন্তরায়’

আপডেট সময় : ০২:৪৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সব ধরনের তামাকপণ্য আরো সহজলভ্য হবে এবং তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাকের ব্যবহার বাড়বে। হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্য, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি এবং সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয়ের সুযোগ হারাবে। গতকাল রোববার তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আায়োজিত অনলাইন বাজেট আলোচনায় এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ। অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে তামাক কর বিষয়ক প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয় বর্তমানে সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ নি¤œ স্তরের সিগারেট এবং প্রায় ১৬ শতাংশ মধ্যম স্তরের সিগারেট। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এই দুই স্তরের সিগারেটের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে দশ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ৭ টাকা বৃদ্ধি করে ১০২ টাকা এবং ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নামমাত্র মূল্যবৃদ্ধি (৫%) জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (৯%) তুলনায় অনেক কম। ফলে সবধরনের সিগারেট আরো সস্তা হয়ে যাবে। গ্যাটস ২০১৭ অনুযায়ী, ২০০৯ এর তুলনায় ২০১৭ সালে সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজেট পাস হলে আরেক দফায় সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিড়ি এবং বহুল ব্যবহৃত জর্দা ও গুলের দাম বৃদ্ধি না করায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে আরো বলা হয় তামাকে বর্ধিত করারোপ একটি দরিদ্র-বান্ধব উদ্যোগ। প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হলে প্রায় ১১ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে, ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লক্ষ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ হবে এবং সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এম.পি বলেন, ‘এবছরের বাজেটেই সিগাটেরের নি¤œ ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে সুনির্দিষ্ট কর দিতে হবে। আমরাতো মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করছি। আমরা তামাক সিন্ডিকেটের কাছে হারতে রাজি নই। গত একবছরে কোভিডে যত মানুষ মারা গেছে তারচেয়ে দশ-পনের গুণ মানুষ বছরের বেশি মারা যায় তামাক ব্যবহারের কারণে’। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম, সুনির্দিষ্ট করারোপের কথা বলেছিলাম কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেটা করা হয়নি। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই বাজেট প্রস্তাব পরিবর্তন করতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কমদামি সিগারেটের দাম এক ধাক্কায় বাড়াতে হবে। এরফলে তরুণরা ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। আমরা আগামীর স্বাস্থ্যবান তরুণদের পেতে চাই। তাহলেই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এর সুবিধা আমরা পাব। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ নি¤œ ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের ভোক্তা। তাই এখানে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল তাহলে রাজস্ব বাড়তো এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যেত। বাজেট প্রতিক্রিয়ার আলোচনায় আরো অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় বাজেট বিশ্লেষণ এবং প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।