ঢাকা ১০:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইউজিসির সামনে মানববন্ধন

প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সাত কলেজের শিক্ষকরা

  • আপডেট সময় : ০৮:২৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না করে অধিভুক্তমূলক বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে বুধবার ইউজিসির সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষকেরা -এতে অংশ নেন কয়েক শ শিক্ষক -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য যে প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে ওই সব কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন ওই সব কলেজের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন এতে শিক্ষার্থী কমে গিয়ে উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে, বাড়বে বৈষম্য। বিশেষ করে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ কমে যাবে। কলেজগুলোর শিক্ষকদের পদ-পদবি নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হবে।

এ জন্য তাঁরা চান প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় না করে পৃথক ক্যাম্পাস স্থাপন করে এই ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থাকতে পারে। এসব দাবিতে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে বড় রকমের জমায়েত দেখিয়েছেন ওই সাত কলেজের শিক্ষকেরা। এতে কয়েক শ শিক্ষক অংশ নেন এবং মানববন্ধন করেছেন।

ঢাকার এই সাতটি কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। কলেজগুলো হলো-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফলাফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়-সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে এই সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, তাতে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস; স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউমিনিটিসের জন্য সরকারি বাংলা কলেজ এবং স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ; স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘হাইব্রিড মডেলে’ চলা নতুন ধরনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর। তবে সব ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীর।

গত মাসে এই সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় করা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানিয়ে বলা হয়েছিল, কলেজগুলোর বিদ্যমান উচ্চমাধ্যমিক অক্ষুণ্ন থাকবে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কলেজগুলোতে থাকবেন। তবে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের জন্য শিক্ষক ঠিক করা হবে। এ বছরের মধ্যেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাদেশ জারি হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।

কলেজ শিক্ষকেরা যা বলছেন: ইউজিসির সামনে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা নিজেদের পক্ষে অবস্থান ও দাবিগুলো তুলে ধরেন। তাঁরা বলছেন, এই সাতটি কলেজকে হঠাৎ করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে করা বা প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন করা জাতীয় স্বার্থ ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। কোনো রকম সমীক্ষা ছাড়াই হঠাৎ করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সময় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, ভবিষ্যতেও একই রকমের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা আছে। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিতে আসনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ফলে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ কমে যাবে। ঢাকা কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চমাধ্যমিকের জন্যই বেশি সুপরিচিত, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা হোঁচট খাবে।

মানববন্ধনে আরো বলা হয়, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ দীর্ঘকাল ধরে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে রাজধানীতে নারীদের উচ্চশিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সামাজিক বাস্তবতায় এসব কলেজকে একীভূত করার উদ্যোগ অযৌক্তিক ও অবিবেচনা প্রসূত। আবার ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রস্তাবিত কাঠামোর প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করে আন্দোলনে নেমেছেন। ইডেন ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এটিও নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের ভাষ্য, তাঁরা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের পদও সংকুচিত হয়ে যাবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজের দেড় হাজারের বেশি পদ বিলুপ্ত হতে পারে। ইতিপূর্বে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ফলে এই সমস্যা হয়েছিল। এসব কারণ দেখিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সাত কলেজের শিক্ষকেরা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এই সাতটি কলেজের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামো ও আর্থিক কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়, এই কলেজগুলো নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে হলে তা অবশ্যই যথাযথ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রস্তাব হলো; এই কলেজগুলোকে কলেজিয়েট বা অধিভুক্তমুলক কাঠামোয় রূপান্তর করা যেতে পারে অথবা প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথক ক্যাম্পাসে স্থাপন করে এই সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কলেজগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত যৌক্তিকীকরণ এবং বিষয় ও পাঠ্যসূচি যুগোপযোগী করতে হবে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইডেন মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম বলেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় করার বিপক্ষে নন, তাঁরা এই সাত কলেজের বর্তমান কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে সাত কলেজের জন্য অধিভুক্তমূলক বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।

কর্মসূচিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ, সদস্যসচিব মো. মাসুদ রানা খানও সংহতি জানান। মানববন্ধন শেষে ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।

সানা/আপ্র/১৭/০৯/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এবার ‘কাকতাড়ুয়া দহন’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা

ইউজিসির সামনে মানববন্ধন

প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সাত কলেজের শিক্ষকরা

আপডেট সময় : ০৮:২৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য যে প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে ওই সব কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন ওই সব কলেজের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন এতে শিক্ষার্থী কমে গিয়ে উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে, বাড়বে বৈষম্য। বিশেষ করে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ কমে যাবে। কলেজগুলোর শিক্ষকদের পদ-পদবি নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হবে।

এ জন্য তাঁরা চান প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় না করে পৃথক ক্যাম্পাস স্থাপন করে এই ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থাকতে পারে। এসব দাবিতে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে বড় রকমের জমায়েত দেখিয়েছেন ওই সাত কলেজের শিক্ষকেরা। এতে কয়েক শ শিক্ষক অংশ নেন এবং মানববন্ধন করেছেন।

ঢাকার এই সাতটি কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। কলেজগুলো হলো-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফলাফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়-সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে এই সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, তাতে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস; স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউমিনিটিসের জন্য সরকারি বাংলা কলেজ এবং স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ; স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘হাইব্রিড মডেলে’ চলা নতুন ধরনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর। তবে সব ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীর।

গত মাসে এই সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় করা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানিয়ে বলা হয়েছিল, কলেজগুলোর বিদ্যমান উচ্চমাধ্যমিক অক্ষুণ্ন থাকবে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কলেজগুলোতে থাকবেন। তবে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের জন্য শিক্ষক ঠিক করা হবে। এ বছরের মধ্যেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাদেশ জারি হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।

কলেজ শিক্ষকেরা যা বলছেন: ইউজিসির সামনে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা নিজেদের পক্ষে অবস্থান ও দাবিগুলো তুলে ধরেন। তাঁরা বলছেন, এই সাতটি কলেজকে হঠাৎ করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে করা বা প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন করা জাতীয় স্বার্থ ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। কোনো রকম সমীক্ষা ছাড়াই হঠাৎ করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সময় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, ভবিষ্যতেও একই রকমের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা আছে। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিতে আসনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ফলে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ কমে যাবে। ঢাকা কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চমাধ্যমিকের জন্যই বেশি সুপরিচিত, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা হোঁচট খাবে।

মানববন্ধনে আরো বলা হয়, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ দীর্ঘকাল ধরে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে রাজধানীতে নারীদের উচ্চশিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সামাজিক বাস্তবতায় এসব কলেজকে একীভূত করার উদ্যোগ অযৌক্তিক ও অবিবেচনা প্রসূত। আবার ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রস্তাবিত কাঠামোর প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করে আন্দোলনে নেমেছেন। ইডেন ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এটিও নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের ভাষ্য, তাঁরা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের পদও সংকুচিত হয়ে যাবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজের দেড় হাজারের বেশি পদ বিলুপ্ত হতে পারে। ইতিপূর্বে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ফলে এই সমস্যা হয়েছিল। এসব কারণ দেখিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সাত কলেজের শিক্ষকেরা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এই সাতটি কলেজের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামো ও আর্থিক কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়, এই কলেজগুলো নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে হলে তা অবশ্যই যথাযথ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রস্তাব হলো; এই কলেজগুলোকে কলেজিয়েট বা অধিভুক্তমুলক কাঠামোয় রূপান্তর করা যেতে পারে অথবা প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথক ক্যাম্পাসে স্থাপন করে এই সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কলেজগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত যৌক্তিকীকরণ এবং বিষয় ও পাঠ্যসূচি যুগোপযোগী করতে হবে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইডেন মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম বলেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় করার বিপক্ষে নন, তাঁরা এই সাত কলেজের বর্তমান কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে সাত কলেজের জন্য অধিভুক্তমূলক বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।

কর্মসূচিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ, সদস্যসচিব মো. মাসুদ রানা খানও সংহতি জানান। মানববন্ধন শেষে ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।

সানা/আপ্র/১৭/০৯/২০২৫