বিশেষ সংবাদদাতা : কড়াকড়ির মধ্যেও কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর একটি কেন্দ্র থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গোটা শিক্ষা বিভাগে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা এটাই প্রথম। কেন্দ্র সচিবের কক্ষ থেকে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ ঘটনায় জড়িত অর্ধশতাধিক শিক্ষকের সিন্ডিকেট। এমন ঘটনা এর আগে তেমন ঘটেনি। তবে এই প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড। এখন থেকে কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্নপত্র আগের নিয়মেই পৌঁছাবে, তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাহারায় থাকবে পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। এদিকে প্রশ্নফাঁস চক্রে শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়ায় প্রশ্নপত্রের সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে সর্বপ্রথমই প্রয়োজন শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সুশিক্ষামুখী করা। আর মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে সাংস্কৃতিক জাগরণও ঘটানো দরকার। উল্লেখ্য, এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্তে বুয়েটের এক শিক্ষকের নাম এসেছিল। তবে শিক্ষকদের সিন্ডিকেট জড়িত থাকার তথ্য এর আগে আর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বহু ধাপের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার পরও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার কেন্দ্রসচিবসহ তিন শিক্ষককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে জেলা পুলিশ এবং শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রশ্ন কেনাবেচা চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে। বিজ্ঞান বিভাগের চার বিষয়ের প্রশ্নপত্রের ফটোকপি ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করছিলেন তারা। এছাড়া দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধীন কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে কাজ করছিল অর্ধশতাধিক শিক্ষকের একটি সিন্ডিকেট। যাদের বেশিরভাগই প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং ব্যবসায় জড়িত বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে কেন্দ্রগুলোকে আরও সতর্ক হতে বলা হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম জানিয়েছেন, ‘প্রশ্নফাঁসে গ্রেপ্তারকৃতরা কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর সাথে জড়িত। তাদের কোচিংগুলোতে যেন বেশি ছাত্রছাত্রী আসে সেই লোভে এবং ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার আশায় এই শিক্ষকরা প্রশ্নফাঁসে জড়ায় বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।’ পরবর্তী পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা শিক্ষাবিভাগের কর্মকর্তারা এবং পুলিশ সজাগ রয়েছে। আগের চেয়ে আরও সতর্ক হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছানোর বিষয়ে কোন পরিবর্তন আনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের সময়েই কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছবে। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুলিশের পাহারা থাকবে।’ ভুরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে গত সোমবার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এরপর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই কেন্দ্রের সচিব, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানকে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে কেন্দ্র সচিবের কক্ষ তল্লাশি করে গণিত (আবশ্যিক), উচ্চতর গণিত, কৃষিশিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট উদ্ধার করে। এর মধ্যে একটি প্যাকেট ছাড়া সবকটি প্যাকেটের মুখ খোলা ছিল। পরে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া আরো দুই শিক্ষককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, প্রশ্নফাঁসের পর সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অধীন কেন্দ্রগুলোতে গণিত (১০৯), পদার্থবিজ্ঞান (১৩৬), কৃষিবিজ্ঞান (১৩৪) এবং রসায়ন (১৩৭) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষকরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ