ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

প্রযুক্তিতে নারীর অবস্থান

  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ মার্চ ২০২৩
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

মার্কিন বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বস বেশ কিছু পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে যা থেকে অনুমান করা সম্ভব প্রযুক্তি দুনিয়ায় নারীরা কতোটা এগোতে পেরেছেন বা পারেননি, সমতার দিকে বিশ্ব কতোটা এগোতে পেরেছে বা পারেনি, কেমন আছেন তারা সার্বিক কর্মক্ষেত্রে-
গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টার হিসাব বলছে, বর্তমানে প্রযুক্তিবিষয়ক চাকরিতে শতকরা ২৬.৭ ভাগ নারী রয়েছেন। আর ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী আছে এমন প্রযুক্তি কোম্পানিতে নারীদের অংশগ্রহন ২৬.২ শতাংশ।
এই নারীদের অর্ধেকই প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দেন তাদের ক্যারিয়ারের মধ্যপর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই। এই ছেড়ে দেওয়ার হার পুরুষদের দ্বিগুণ। সাধারণভাবে পরিবারে সময় দেওয়াকে কারণ হিসাবে ধরে নেওয়া হলেও গবেষণায় দেখা গেছে, এর পেছনে কারণগুলোর মধ্যে ২৩ ভাগ দায় কর্মক্ষেত্রে কর্মী ব্যবস্থাপনার, ২০ ভাগ সুযোগের অভাব এবং শতকরা ২২ ভাগ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে পেশাজীবনের সংঘাত। এখানে অনেক কিছুই করার আছে বলে উঠে এসেছে ফোর্বসের প্রতিবেদনে। কারণ, গবেষণা বলছে-
যখন কোনো কর্মী (লিঙ্গপরিচয় নির্বিশেষে) মনে করেন তার কর্মস্থল বৈচিত্র্য বা ডাইভার্সিটি সমর্থন করে এবং তারা অন্তর্ভূক্তিমূলক পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা পান, তখন সে প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবনী আয় শতকরা ৮৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়তে পারে। জেন্ডার বৈচিত্র্য বা ডাইভারসিটি সমর্থন করে এমন কোম্পানির বেলায় প্রতিযোগীদের তুলনায় ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় শতকরা ১৫ ভাগ। আর জাতিগত বৈচিত্র্য সমর্থনে প্রতিযোগীদের তুলনায় ভালো করার সম্ভাবনা বাড়ে শতকরা ৩৫ ভাগ। কোম্পানি যখন অন্তর্ভূক্তিমূলক বা ইনক্লুসিভ হয়, তখন আর্থিক লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয় বলে দেখা গেছে গবেষণায়।
সমতাযাত্রায় বিগত বছরগুলো সম্পর্কে ধারণা মিলবে সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান থেকে। বিশ্বের প্রথমসারির কোম্পানিগুলোর তালিকা, ‘ফরচুন ৫০০’ কোম্পানিগুলোয় এই প্রথমবারের মতো সিইও পদে শতকরা ১০ ভাগ নারী এসেছেন। এর মধ্যে শতকরা তিন ভাগ রয়েছেন অশ্বেতাঙ্গ নারী। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন অর্থনীতি থেকে এক লাখ ৪০ হাজার কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন নারী চাকরি হারিয়েছেন, সংখ্যায় বেড়েছেন শ্বেতাঙ্গ নারীরা।
কেবল নারী সদস্যদের সংগঠন বা দলের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের হার নেমে এসেছে শতকরা এক ভাগে। ২০১৮ সালে এটি ছিল তিন শতাংশ। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক কাজে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ নারী কাজ করলেও এর মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ নারী কেবল তিন ভাগ। ফলে, নারী দিবসকে কেবল অনুষ্ঠানিকতায় না রেখে মূল বিষয়গুলোয় মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বিশেষ এই দিনটিতে কেবল নারী সহকর্মীদের ফুল আর গোলাপী রঙের কাগজে মুড়ে উপহার দেওয়ার রেওয়াজে আটকে থাকলে ফল মিলবে সামান্যই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কতটা নিরাপদ নারী: নারী ভুক্তভোগীর ছবি, ফোন নম্বর, বাসার ঠিকানা বা যেকোনও পরিচিতিমূলক তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট বা কমেন্ট করে কিংবা কাউকে ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ বাড়ছে দিন দিন। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা আশঙ্কাজনকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের অভিযোগকে সংশ্লিষ্টরা ‘ডক্সিং’ বা অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। নারীর প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি অভিযোগের বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে এ বিষয়টি সামনে আসে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগের (পিসিএসডব্লিউ) কাছে।
যদিও পিসিএসডব্লিউর কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির কিংবা ভুক্তভোগী হয়ে যেকোনও নারী পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগে যোগাযোগ করলে তাদের অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডক্সিং অপরাধ ছাড়াও ইমপারসোনেশন, আইডি হ্যাক ব্ল্যাকমেলিং ও সাইবার বুলিং, আপত্তিকর কন্টেন্ট ছড়ানো, মোবাইল হ্যারাসমেন্টের মতো হয়রানির অভিযোগ পড়ছে এই বিভাগে।
পিসিএসডব্লিউতে অভিযোগ করার জন্য ফেসবুক পেজ, হটলাইন ও ইমেইল নম্বর ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনও হয়রানির শিকার নানা বয়সী নারীরা যোগাযোগ করতে পারছেন। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগ বলছে, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫৪টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে সাইবার স্পেসে ডক্সিং অপরাধে হয়রানির শিকার হয়ে ৩১ ভাগ নারী অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীর ছবির নাম বা যেকোনও পরিচিতি তথ্য ব্যবহার করে ভুক্তভোগী সেজে হয়রানি; যাকে ইমপারসোনেশন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়; সেখানে ভুক্তভোগী নারীর সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ। সামাজিক যোগাযোগের কোনও আইডি বা ইমেইল অ্যাড্রেস বা অন্য কোনোভাবে ডিজিটাল তথ্য হ্যাক করার অপরাধে হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৭ ভাগ নারী। এ ছাড়া টাকা দাবি করা, আপত্তিকর ছবি বা আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলা, আপত্তিকর ভাষায় চ্যাট করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে আইনি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করেন ১৯ ভাগ নারী। ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন পোস্টে বা ম্যাসেজের মাধ্যমে আপত্তিকর ভাষায় কমেন্ট ও মেসেজ করা এবং পর্নোগ্রাফি ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন আট ভাগ নারী। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে বা ম্যাসেজে বা ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন চার ভাগ নারী। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কল বা মেসেজ দেওয়ার অভিযোগ করেন ৫ ভাগ নারী।
অভিযোগকারী নারীদের বয়সসীমার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার চার ভাগ নারী ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে। ১৮ বছরের নিচে ১১ ভাগ কিশোরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২৫ ভাগ তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি হয়রানি শিকার হচ্ছেন ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণীরা, যার সংখ্যা ৬০ ভাগ।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪ হাজার ৯৫৮ জন নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়ে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগেকে অভিযোগ করেন। ৮৩১ জন পরে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। যে কারণে ১৫ হাজার ৯৮৩ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৬৭৪ জনের অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।
পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, যারা অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনও নারী হয়রানির শিকার হয়ে আমাদের শরণাপন্ন হয়, প্রথমে সেসব অপরাধীর ধরন সম্পর্কে আমরা অবহিত হই। ভুক্তভোগীকে যদি কাউন্সেলিং করার প্রয়োজন অনুভব করি. তাহলে আমরা ভুক্তভোগীকে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনি। আইনি সহায়তা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি কিংবা মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, অনেক অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপরাধী এক এলাকায় থাকে এবং একটিম অন্য এলাকায় থাকে দূরত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানাগুলো সহায়তা নিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা নিজেরাও এনালাইসিস করি কোন ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সেসব বিষয় এনালাইসিস করে আমরা আমাদের মতো করে সেসব বিষয়ের ওপর নজর রাখি। সব সময় শুধু কোনও পুরুষ দ্বারাই কোনও নারী হয়রানির শিকার হন, সে রকম অভিযোগ যেমন হরদম আসে, ঠিক তেমনি নারীদের দ্বারা নারীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া কারও সঙ্গে কারোর সম্পর্কের ছেদ পড়লেও অনেক সময় অনলাইনে নাজেহাল করার অপচেষ্টা অনেকে চালায় বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারী দিবসে ইমোর নতুন ফিচার: ইনস্ট্যান্ট অডিও-ভিডিও কল ও মেসেজিং অ্যাপ ইমো সম্প্রতি ‘ইওর প্রাইভেসি, ইওর কন্ট্রোল’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে চালু করা হয়েছে প্রাইভেসি সংক্রান্ত বেশ কিছু নতুন ফিচার।
ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে কীভাবে এই ফিচারগুলো ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা যাবে এবং একটি নিরাপদ অনলাইন স্পেস তৈরি করা যাবে সে বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী তানজিন তিশাসহ অনেক সেলিব্রেটি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে হ্যাকিং, ব্ল্যাকমেইলিং ও সাইবার বুলিংয়ের মতো অপরাধগুলো অনলাইনে নিয়মিত সংগঠিত হচ্ছে। নারীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইন হয়রানি বাড়ছে। প্রাইভেসির ক্ষেত্রেও অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এখন পর্যন্ত এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান করা যায়নি। এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টাইম মেশিন, ব্লক স্ক্রিনশট ফর কলস ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট– এই তিনটি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ফিচার নিয়ে এসেছে ইমো। উদ্ভাবনী এই ফিচারগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা বা প্রাইভেসি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রযুক্তিতে নারীর অবস্থান

আপডেট সময় : ১১:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ মার্চ ২০২৩

মার্কিন বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বস বেশ কিছু পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে যা থেকে অনুমান করা সম্ভব প্রযুক্তি দুনিয়ায় নারীরা কতোটা এগোতে পেরেছেন বা পারেননি, সমতার দিকে বিশ্ব কতোটা এগোতে পেরেছে বা পারেনি, কেমন আছেন তারা সার্বিক কর্মক্ষেত্রে-
গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টার হিসাব বলছে, বর্তমানে প্রযুক্তিবিষয়ক চাকরিতে শতকরা ২৬.৭ ভাগ নারী রয়েছেন। আর ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী আছে এমন প্রযুক্তি কোম্পানিতে নারীদের অংশগ্রহন ২৬.২ শতাংশ।
এই নারীদের অর্ধেকই প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দেন তাদের ক্যারিয়ারের মধ্যপর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই। এই ছেড়ে দেওয়ার হার পুরুষদের দ্বিগুণ। সাধারণভাবে পরিবারে সময় দেওয়াকে কারণ হিসাবে ধরে নেওয়া হলেও গবেষণায় দেখা গেছে, এর পেছনে কারণগুলোর মধ্যে ২৩ ভাগ দায় কর্মক্ষেত্রে কর্মী ব্যবস্থাপনার, ২০ ভাগ সুযোগের অভাব এবং শতকরা ২২ ভাগ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে পেশাজীবনের সংঘাত। এখানে অনেক কিছুই করার আছে বলে উঠে এসেছে ফোর্বসের প্রতিবেদনে। কারণ, গবেষণা বলছে-
যখন কোনো কর্মী (লিঙ্গপরিচয় নির্বিশেষে) মনে করেন তার কর্মস্থল বৈচিত্র্য বা ডাইভার্সিটি সমর্থন করে এবং তারা অন্তর্ভূক্তিমূলক পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা পান, তখন সে প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবনী আয় শতকরা ৮৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়তে পারে। জেন্ডার বৈচিত্র্য বা ডাইভারসিটি সমর্থন করে এমন কোম্পানির বেলায় প্রতিযোগীদের তুলনায় ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় শতকরা ১৫ ভাগ। আর জাতিগত বৈচিত্র্য সমর্থনে প্রতিযোগীদের তুলনায় ভালো করার সম্ভাবনা বাড়ে শতকরা ৩৫ ভাগ। কোম্পানি যখন অন্তর্ভূক্তিমূলক বা ইনক্লুসিভ হয়, তখন আর্থিক লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয় বলে দেখা গেছে গবেষণায়।
সমতাযাত্রায় বিগত বছরগুলো সম্পর্কে ধারণা মিলবে সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান থেকে। বিশ্বের প্রথমসারির কোম্পানিগুলোর তালিকা, ‘ফরচুন ৫০০’ কোম্পানিগুলোয় এই প্রথমবারের মতো সিইও পদে শতকরা ১০ ভাগ নারী এসেছেন। এর মধ্যে শতকরা তিন ভাগ রয়েছেন অশ্বেতাঙ্গ নারী। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন অর্থনীতি থেকে এক লাখ ৪০ হাজার কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন নারী চাকরি হারিয়েছেন, সংখ্যায় বেড়েছেন শ্বেতাঙ্গ নারীরা।
কেবল নারী সদস্যদের সংগঠন বা দলের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের হার নেমে এসেছে শতকরা এক ভাগে। ২০১৮ সালে এটি ছিল তিন শতাংশ। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক কাজে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ নারী কাজ করলেও এর মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ নারী কেবল তিন ভাগ। ফলে, নারী দিবসকে কেবল অনুষ্ঠানিকতায় না রেখে মূল বিষয়গুলোয় মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বিশেষ এই দিনটিতে কেবল নারী সহকর্মীদের ফুল আর গোলাপী রঙের কাগজে মুড়ে উপহার দেওয়ার রেওয়াজে আটকে থাকলে ফল মিলবে সামান্যই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কতটা নিরাপদ নারী: নারী ভুক্তভোগীর ছবি, ফোন নম্বর, বাসার ঠিকানা বা যেকোনও পরিচিতিমূলক তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট বা কমেন্ট করে কিংবা কাউকে ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ বাড়ছে দিন দিন। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা আশঙ্কাজনকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের অভিযোগকে সংশ্লিষ্টরা ‘ডক্সিং’ বা অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। নারীর প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি অভিযোগের বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে এ বিষয়টি সামনে আসে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগের (পিসিএসডব্লিউ) কাছে।
যদিও পিসিএসডব্লিউর কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির কিংবা ভুক্তভোগী হয়ে যেকোনও নারী পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগে যোগাযোগ করলে তাদের অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডক্সিং অপরাধ ছাড়াও ইমপারসোনেশন, আইডি হ্যাক ব্ল্যাকমেলিং ও সাইবার বুলিং, আপত্তিকর কন্টেন্ট ছড়ানো, মোবাইল হ্যারাসমেন্টের মতো হয়রানির অভিযোগ পড়ছে এই বিভাগে।
পিসিএসডব্লিউতে অভিযোগ করার জন্য ফেসবুক পেজ, হটলাইন ও ইমেইল নম্বর ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনও হয়রানির শিকার নানা বয়সী নারীরা যোগাযোগ করতে পারছেন। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগ বলছে, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫৪টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে সাইবার স্পেসে ডক্সিং অপরাধে হয়রানির শিকার হয়ে ৩১ ভাগ নারী অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীর ছবির নাম বা যেকোনও পরিচিতি তথ্য ব্যবহার করে ভুক্তভোগী সেজে হয়রানি; যাকে ইমপারসোনেশন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়; সেখানে ভুক্তভোগী নারীর সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ। সামাজিক যোগাযোগের কোনও আইডি বা ইমেইল অ্যাড্রেস বা অন্য কোনোভাবে ডিজিটাল তথ্য হ্যাক করার অপরাধে হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৭ ভাগ নারী। এ ছাড়া টাকা দাবি করা, আপত্তিকর ছবি বা আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলা, আপত্তিকর ভাষায় চ্যাট করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে আইনি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করেন ১৯ ভাগ নারী। ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন পোস্টে বা ম্যাসেজের মাধ্যমে আপত্তিকর ভাষায় কমেন্ট ও মেসেজ করা এবং পর্নোগ্রাফি ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন আট ভাগ নারী। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে বা ম্যাসেজে বা ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন চার ভাগ নারী। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কল বা মেসেজ দেওয়ার অভিযোগ করেন ৫ ভাগ নারী।
অভিযোগকারী নারীদের বয়সসীমার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার চার ভাগ নারী ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে। ১৮ বছরের নিচে ১১ ভাগ কিশোরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২৫ ভাগ তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি হয়রানি শিকার হচ্ছেন ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণীরা, যার সংখ্যা ৬০ ভাগ।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪ হাজার ৯৫৮ জন নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়ে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগেকে অভিযোগ করেন। ৮৩১ জন পরে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। যে কারণে ১৫ হাজার ৯৮৩ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৬৭৪ জনের অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।
পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, যারা অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনও নারী হয়রানির শিকার হয়ে আমাদের শরণাপন্ন হয়, প্রথমে সেসব অপরাধীর ধরন সম্পর্কে আমরা অবহিত হই। ভুক্তভোগীকে যদি কাউন্সেলিং করার প্রয়োজন অনুভব করি. তাহলে আমরা ভুক্তভোগীকে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনি। আইনি সহায়তা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি কিংবা মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, অনেক অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপরাধী এক এলাকায় থাকে এবং একটিম অন্য এলাকায় থাকে দূরত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানাগুলো সহায়তা নিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা নিজেরাও এনালাইসিস করি কোন ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সেসব বিষয় এনালাইসিস করে আমরা আমাদের মতো করে সেসব বিষয়ের ওপর নজর রাখি। সব সময় শুধু কোনও পুরুষ দ্বারাই কোনও নারী হয়রানির শিকার হন, সে রকম অভিযোগ যেমন হরদম আসে, ঠিক তেমনি নারীদের দ্বারা নারীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া কারও সঙ্গে কারোর সম্পর্কের ছেদ পড়লেও অনেক সময় অনলাইনে নাজেহাল করার অপচেষ্টা অনেকে চালায় বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারী দিবসে ইমোর নতুন ফিচার: ইনস্ট্যান্ট অডিও-ভিডিও কল ও মেসেজিং অ্যাপ ইমো সম্প্রতি ‘ইওর প্রাইভেসি, ইওর কন্ট্রোল’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে চালু করা হয়েছে প্রাইভেসি সংক্রান্ত বেশ কিছু নতুন ফিচার।
ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে কীভাবে এই ফিচারগুলো ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা যাবে এবং একটি নিরাপদ অনলাইন স্পেস তৈরি করা যাবে সে বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী তানজিন তিশাসহ অনেক সেলিব্রেটি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে হ্যাকিং, ব্ল্যাকমেইলিং ও সাইবার বুলিংয়ের মতো অপরাধগুলো অনলাইনে নিয়মিত সংগঠিত হচ্ছে। নারীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইন হয়রানি বাড়ছে। প্রাইভেসির ক্ষেত্রেও অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এখন পর্যন্ত এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান করা যায়নি। এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টাইম মেশিন, ব্লক স্ক্রিনশট ফর কলস ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট– এই তিনটি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ফিচার নিয়ে এসেছে ইমো। উদ্ভাবনী এই ফিচারগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা বা প্রাইভেসি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন।