ঢাকা ০৬:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে : আইএমএফে

  • আপডেট সময় : ১১:৫২:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বৈশ্বিক পোশাকের বাজারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের হিস্যা কমলেও শুধু বাংলাদেশের বেড়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) তিন গুণ বেড়েছে। কিন্তু বৈষম্যও বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও তিনটি দেশের বৈষম্য গত আড়াই দশকে ব্যাপক বেড়েছে। এই তিন দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। আবার বৈষম্যও কমেছে তিনটি দেশে। দেশগুলো হলো ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপাল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি ‘সাউথ এশিয়াস পাথ টু রেজিলিয়েন্ট গ্রোথ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনের করোনা-পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার নামের প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। ওই প্রবন্ধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির ধারা ও ইতিহাস, বৈষম্য, করোনায় প্রভাব—এসব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া মানব উন্নয়ন সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেশ উল্লেখযোগ্য। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি তিন গুণ বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এশিয়ার গড় হার থেকে কম। ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। ২০০০ ও ২০১০ দশকের প্রবৃদ্ধির হার দ্রুত হয়। এদিকে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বৈষম্য বেড়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বৈষম্য বেশি বেড়েছে। দেশে বৈষম্য বাড়লেও প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কিছু অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেবল বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ কোভিড মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে স্বাধীনতা লাভের পরপরই শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু জিডিপি ভারতের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। এরপর ১৯৭০-এর দশকে মালদ্বীপ ও ভুটান বাজার উদারীকরণ থেকে লাভবান হয়। সেই সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি স্থিতিশীল ছিল। এরপর ১৯৮০-এর দশকে ভারত বাজার উদারীকরণ কর্মসূচি হাতে নেয় এবং ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটে। ফলে ২০০০-এর দশকে ভারত এবং ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার দ্রুত বেড়ে যায়। অর্থাৎ বাজার উদারীকরণের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির হারের সম্পর্ক আছে। উল্লিখিত দেশের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময়ে দেশগুলোর পণ্য ও সেবা রপ্তানির হারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জিডিপি ও রপ্তানির অনুপাত চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে কম। এসব দেশের প্রবৃদ্ধিতে রপ্তানি খাতের বড় ভূমিকা ছিল। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত গত কয়েক দশকে উল্টো কমেছে। ১৯৯৫-৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত ছিল ৩৬ শতাংশ, কিন্তু ২০১৫-১৯ সালে তা নেমে আসে ২২ শতাংশে। একই সময়ে নেপালের জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত ২৪ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কিছু দেশের উৎপাদনশীল খাতের সংকোচন হয়েছে। আইএমএফ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো উন্নত দেশগুলোর রপ্তানি নীতির পরিবর্তন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়ার তৈরি পোশাক খাত যে কোটা-সুবিধা পেত, তা ১৯৯৪-২০০৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তখন কম্বোডিয়া, চীন ও ভিয়েতনাম এই বাজারের প্রবেশাধিকার পায়। ২০০০ সালের পর পোশাকের বাজারে মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বাজার হিস্যা কমে যায়। তবে এই অঞ্চলের মধ্যে পোশাকের বাজারে কেবল বাংলাদেশেরই হিস্যা বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ উচ্চপ্রযুক্তিভিত্তিক রপ্তানির দিকে যেতে পারেনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে : আইএমএফে

আপডেট সময় : ১১:৫২:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বৈশ্বিক পোশাকের বাজারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের হিস্যা কমলেও শুধু বাংলাদেশের বেড়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) তিন গুণ বেড়েছে। কিন্তু বৈষম্যও বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও তিনটি দেশের বৈষম্য গত আড়াই দশকে ব্যাপক বেড়েছে। এই তিন দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। আবার বৈষম্যও কমেছে তিনটি দেশে। দেশগুলো হলো ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপাল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি ‘সাউথ এশিয়াস পাথ টু রেজিলিয়েন্ট গ্রোথ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনের করোনা-পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার নামের প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। ওই প্রবন্ধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির ধারা ও ইতিহাস, বৈষম্য, করোনায় প্রভাব—এসব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া মানব উন্নয়ন সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেশ উল্লেখযোগ্য। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি তিন গুণ বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এশিয়ার গড় হার থেকে কম। ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। ২০০০ ও ২০১০ দশকের প্রবৃদ্ধির হার দ্রুত হয়। এদিকে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বৈষম্য বেড়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বৈষম্য বেশি বেড়েছে। দেশে বৈষম্য বাড়লেও প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কিছু অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেবল বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ কোভিড মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে স্বাধীনতা লাভের পরপরই শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু জিডিপি ভারতের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। এরপর ১৯৭০-এর দশকে মালদ্বীপ ও ভুটান বাজার উদারীকরণ থেকে লাভবান হয়। সেই সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি স্থিতিশীল ছিল। এরপর ১৯৮০-এর দশকে ভারত বাজার উদারীকরণ কর্মসূচি হাতে নেয় এবং ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটে। ফলে ২০০০-এর দশকে ভারত এবং ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার দ্রুত বেড়ে যায়। অর্থাৎ বাজার উদারীকরণের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির হারের সম্পর্ক আছে। উল্লিখিত দেশের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময়ে দেশগুলোর পণ্য ও সেবা রপ্তানির হারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জিডিপি ও রপ্তানির অনুপাত চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে কম। এসব দেশের প্রবৃদ্ধিতে রপ্তানি খাতের বড় ভূমিকা ছিল। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত গত কয়েক দশকে উল্টো কমেছে। ১৯৯৫-৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত ছিল ৩৬ শতাংশ, কিন্তু ২০১৫-১৯ সালে তা নেমে আসে ২২ শতাংশে। একই সময়ে নেপালের জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত ২৪ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কিছু দেশের উৎপাদনশীল খাতের সংকোচন হয়েছে। আইএমএফ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো উন্নত দেশগুলোর রপ্তানি নীতির পরিবর্তন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়ার তৈরি পোশাক খাত যে কোটা-সুবিধা পেত, তা ১৯৯৪-২০০৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তখন কম্বোডিয়া, চীন ও ভিয়েতনাম এই বাজারের প্রবেশাধিকার পায়। ২০০০ সালের পর পোশাকের বাজারে মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বাজার হিস্যা কমে যায়। তবে এই অঞ্চলের মধ্যে পোশাকের বাজারে কেবল বাংলাদেশেরই হিস্যা বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ উচ্চপ্রযুক্তিভিত্তিক রপ্তানির দিকে যেতে পারেনি।