নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির শুল্কহার কমানোর বিষয়ে এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সচিবালয়ের অফিসে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১। প্রবাসীরা দেশে ছুটি কাটানোর সময়ে ৬০ দিন পর্যন্ত মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন। ৬০ দিনের বেশি থাকলেই মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
২। যেসব প্রবাসীর বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে, তারা ফ্রিতে মোট তিনটি ফোন সঙ্গে আনতে পারবেন। অর্থাৎ নিজের ব্যবহারের হ্যান্ডসেটের অতিরিক্ত দুটি নতুন ফোন সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন ফ্রিতে। চতুর্থ ফোনের ক্ষেত্রে ট্যাক্স দিতে হবে। যাদের BMET কার্ড নেই তারা নিজের ব্যবহারের ফোনের পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি ফোন ফ্রিতে আনতে পারবেন।
এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কেনার বৈধ কাগজ সঙ্গে রাখতে হবে। কেননা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে চোরাচালানিরা সাধারণ প্রবাসীদের চাপাচাপি করে স্বর্ণ, দামি মোবাইল ফোন ইত্যাদির শুল্কহীন পাচারে লিপ্ত আছে। চোরাচালানিদের এই অপচেষ্টা রোধ করার জন্যই ক্রয় করা মোবাইলের কাগজ সঙ্গে রাখতে হবে।
৩। স্মার্টফোনের বৈধ আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা হবে। এতে বৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল ফোনের দাম কমে আসবে। বর্তমানে বৈধপথে মোবাইল আমদানির শুল্ক প্রায় ৬১ শতাংশ। এটা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সরকার কাজ শুরু করেছে।
৪। আমদানি শুল্ক কমালেই বাংলাদেশের ১৩-১৪টি ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন করা মোবাইলের শুল্ক ও ভ্যাট কমাতে হবে, অন্যথায় কোম্পানিগুলোর বিদেশি বিনিয়োগ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমদানি এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের শুল্ক কমানো এবং তা সমন্বয় নিয়ে বিটিআরসি এবং এনবিআর যৌথভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে একাধিকবার বসেছে এবং দ্রুততার সাথে কাজ শুরু করেছে। আলোচনার ফলাফল দেশের ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রির অনুকূল আসবে বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।
৫। ১৬ ডিসেম্বরের আগে বাজারে অবৈধভাবে আমদানি করা স্টক ফোনগুলোর মধ্যে যেগুলোর বৈধ IMEI নম্বর আছে, সেই IMEI লিস্ট বিটিআরসিতে জমা দিয়ে হ্রাসকৃত শুল্কে সেগুলোকে বৈধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে ক্লোন ফোন এবং রিফারবিশড ফোনের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া হবে না।
৬। আপনার অজান্তেই কেউ আপনার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো সাইবার অপরাধ, অনলাইন স্ক্যামিং, অনলাইন ও মোবাইল জুয়া, মোবাইল ব্যাংকিংজনিত অপরাধে আপনার নামে নিবন্ধিত সিমটি ব্যবহৃত হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অপরাধ এবং রেজিস্ট্রেশন ঝামেলা এড়াতে সবসময় নিজের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করুন। বাংলাদেশে ক্লোন মোবাইল, চুরি/ছিনতাই করা ফোন এবং রিফারবিসড মোবাইল আমদানি বন্ধ করা হবে।
৭। বর্তমানে ব্যবহৃত সচল মোবাইল ফোন কোনোভাবেই ১৬ ডিসেম্বরের আগে বন্ধ হবে না। এ সংক্রান্ত গুজব থেকে সচেতন থাকুন।
১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হচ্ছে NEIR, সুতরাং বৈধ IMEI নম্বরহীন হ্যান্ডসেট ক্রয় থেকে বিরত থাকুন। অবৈধ আমদানি করা, চোরাচালানকৃত এবং ক্লোন ফোন বাংলাদেশে বন্ধ করা হবে।
দেশ-বিদেশের পুরোনো ফোনের ডাম্পিং বন্ধ হবে। কেসিং পরিবর্তন করে এসব ইলেকট্রনিক বর্জ্য দেশে ঢুকিয়ে যে রমরমা চোরাকারবারি ব্যবসা শুরু করা হয়েছে, সেটা বন্ধ করা হবে।
বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরগুলোতে ভারত, থাইল্যান্ড, চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে, দ্রুতই কাস্টমস থেকে অভিযান চালানো হবে।
প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ (সংশোধনী) ২০২৫ এ মোবাইল সিমের eKYC এবং IMEI রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ডেটা সুরক্ষার নিশ্চয়তা তৈরি করা হয়েছে। নতুন একটি ধারা যোগ করে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত উপাত্ত লঙ্ঘনকারীদের অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে।
সুতরাং অযথা ভয় বিস্তারের গুজবে কান না দিতে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।
এসি/আপ্র/০৩/১২/২০২৫



















