নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যদি ঠিকভাবে কাজ করতে না পারেন, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার পদে থেকে কী লাভ, সে কথাও বলেছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দাতের এক অনলাইন প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান। সেখান থেকে বেরিয়ে নাহিদ ইসলাম রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।’
এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে দীর্ঘক্ষণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকায় প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোদের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। আলোচনার এক পর্যায়ে কাজ করতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আরো বলেন, সংস্কারের বিষয়েও এখনো তেমন কিছু হলো না। তাহলে তিনি কেন থাকবেন-এমন প্রশ্নও আলোচনায় আনেন তিনি।
উপদেষ্টা পরিষদের ওই আলোচনায় উপস্থিত থাকা সূত্রগুলো আরো জানায়, একপর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের বলেন, তাঁরা যেন আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। কারণ, তিনি চলে যেতে চান। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে ব্যালট ছিনতাইয়ে মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ–প্রশাসন তা ঠেকাতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে ভালো নির্বাচন করতে না পারলে মানুষ তাঁকে দায়ী করবে বলেও আলোচনায় উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। একপর্যায়ে তাঁর ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ভাষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে আবার আলোচনা হতে পারে।
বিবিসি বাংলাকে যা বললেন নাহিদ: সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলে, সন্ধ্যা সাতটার দিকে যমুনায় প্রবেশ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বেশ কিছুক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাহিদ ইসলাম।
এদিকে রাতে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন, এমন খবর পেয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের তো পদত্যাগের একটা খবর আমরা সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।’
প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলেও বিবিসি বাংলাকে বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্যার বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলে একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার…। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারব না।’
প্রধান উপদেষ্টা ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ এমনটি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘উনি বলেছেন তিনি এ বিষয়ে ভাবছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এ রকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না।’ তবে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ-সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন এবং সব কটি দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন। সবাই তাঁর সঙ্গে আশা করি কো-অপারেট করবেন।’