প্রত্যাশা ডেস্ক: কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ জুন) সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান।
এদিকে ধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর নির্যাতনের ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এই ঘটনায় গত শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে রোববার ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে । তাঁরা হলেন মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায়।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন; তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন।
ওই নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি। এ সময় কিছু লোক তাঁকে মারধর ও ভিডিও করেন। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’ ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। পরে আজ তাঁকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় একটি ভিডিও গত শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করার পর পুলিশ অভিযানে নামে। ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার নারীকে নিরাপত্তা ও চিকিৎসা দিতে নির্দেশ: কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর নির্যাতনের ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২৯ জুন) এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ১৪ জুলাই এই ঘটনায় হওয়া মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরুন্নবী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবে সরকার: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আলোচিত ধর্ষণের ঘটনাটি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রোববার (২৯ মার্চ) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, মুরাদনগরে যে জঘন্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ ঘটনায় দেশের যেকোনো নাগরিকের মতো আমরা সবাই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান আসামিসহ ধর্ষণের শিকার নারীর ছবিগুলো যারা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করেছে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এরইমধ্যে ধর্ষণ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে সে আইনের সংশোধন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মাগুরার ধর্ষণের ঘটনার বিচার দেখেছেন।