চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমন ঘিরে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। নতুন রূপে সাজছে বন্দরনগরী। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী ও উপজেলা। মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কর্মীসভা করা হচ্ছে। নগরীর রাস্তাঘাট সংস্কার, সড়কের পাশে থাকা দর্শনীয় স্থান ও বিভিন্ন স্থাপনা রঙিন করা হচ্ছে। বিরামহীনভাবে নগরীকে সাজানোর কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌকার আদলে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। যেটির দৈর্ঘ্য ৮৮ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট। মূল মঞ্চের সামনে থাকবে ১৬০ মিটার লম্বা একটি নৌকা। গত ১৫ নভেম্বর থেকে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই মঞ্চে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন। সমাবেশস্থল ছাড়াও নিউমার্কেট, কদমতলী, সিআরবি ও টাইগারপাসসহ আশপাশের এলাকায় থাকবে ৩০০ মাইক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে নগরীর টাইগারপাসে বাঘের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল। ক্রিকেটীয় আবহ সৃষ্টি করতে সেখানে নানা ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল। ওসব ভাস্কর্য নগরীর নান্দনিকতা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভাস্কর্যগুলোতে দীর্ঘদিন রং-তুলির আঁচড় পড়েনি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে রঙ-তুলির আঁচড়ে বিবর্ণতা দূর করে নবরূপ পেতে চলেছে এসব ভাস্কর্য।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে নগরজুড়ে পোস্টার-ব্যানার টানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। সড়কের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। বিশেষ করে নগরীর কাজির দেউড়ি, লালখান বাজার, ওয়াসা মোড়, বহদ্দারহাট, বিমানবন্দর এলাকা, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, নিউমার্কেট, কাস্টমস মোড় ও ইপিজেড মোড়সহ নগরজুড়ে শোভা পাচ্ছে তোরণ, ব্যানার-পোস্টার। চট্টগ্রামজুড়ে মাইকিং করার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণ করে লোকজনকে জনসভায় আসতে উদ্বুদ্ধ করছেন। পাড়া-মহল্লায় চলছে পথসভা ও মিছিলসহ নানা অনুষ্ঠান।
দলীয় নেতারা বলছেন, পলোগ্রাউন্ডের জনসভা স্মৃতিময় করে রাখতে চান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামের ইতিহাসে এটি হবে সবচেয়ে বড় সমাবেশ। যেখানে উল্লেখযোগ্য লোক সমাগম ঘটবে। বিপুল লোকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নগরী ও জেলায় বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ড এবং প্রতিটি ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা নিজ নিজ ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে যোগ দেবেন জনসভায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম আসছেন। দীর্ঘদিন পর তিনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। জনসভা ঘিরে চট্টগ্রামে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সবুজ এই নগরীকে নান্দনিকভাবে সাজানো হচ্ছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি। তারা দুর্দিনে ঝুঁকি নিতে পারেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা প্রমাণ করবেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন। পলোগ্রাউন্ডের জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দেওয়া হবে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘১১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে আসছেন। এই জনসভায় শুধু আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসবেন তা নয়; প্রিয় নেত্রীকে দেখতে চট্টগ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে আসবেন। জনসভা ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ নিজেকে প্রকাশ করার জন্য এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেকে তুলে ধরার জন্য পোস্টার-ব্যানার টানিয়েছেন। এই জনসভা হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। এ কারণে পলোগ্রাউন্ড মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’
আ জ ম নাছির আরও বলেন, ‘জনসভা সফল করতে প্রচার-প্রচারণা চলছে। নগরীর ২৪টি স্থানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গাড়িতে নগরজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে।’ মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রামবাসী আরও একটি রেকর্ড করবে। জনসভা কাকে বলে ওই দিন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ দেখিয়ে দেবে। এই জনসভাকে আমরা জনসমুদ্রে পরিণত করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে বন্দর নগরীতে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতে কোনও সরকারের সময়ে হয়নি। চট্টগ্রামের মানুষ এসব উন্নয়নের সুফল ভোগ করা শুরু করেছে। আরও কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ শিগগিরই শেষ হবে। এসব প্রকল্পের সুফল পাবে নগরবাসী। চট্টগ্রামে রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়নের জন্য এখানকার মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসভায় উপস্থিত হবেন।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। এই পর্যন্ত চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন হয়েছে আর কোনও সরকারের সময়ে এত উন্নয়ন হয়নি। তাই পলোগ্রাউন্ড ময়দানের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’ রাউজান পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. রোকন উদ্দিন বলেন, ‘পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় রাউজান থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হবেন। আমার ইউনিয়ন থেকেও বিপুল সংখ্যক লোক জনসভায় যাবেন। জনসভায় যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে যানবাহন বুকিং দিয়েছি আমরা।’
এর আগে গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ করেছিল বিএনপি। এই সমাবেশে বিপুল জনসমাগম হয়। তবে বিএনপির জনসভার চেয়ে বেশি লোক সমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর
এই মাঠে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জনসভা ঘিরে মোতায়েন থাকবে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ : আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। মঙ্গলবার সকালে পলোগ্রাউন্ড মাঠ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। এসময় সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আগামী ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আমরা যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। শুধু পলোগ্রাউন্ড মাঠ নয়, নিরাপত্তার খাতিরে পুরো নগর জুড়ে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এরমধ্যে পলোগ্রাউন্ড মাঠসহ পুরো চট্টগ্রাম মহানগরে আমাদের ৬ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি আরো জোরদার করতে বাইরে আরো দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।’
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এটা চট্টগ্রামের জন্য বড় উৎসব। নিরাপত্তার জন্য আমাদের আয়োজন ভাল। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পুরো আয়োজনটাই তদারকি করছে। তাদের পরামর্শ মোতাবেক পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা, ড্রোন থাকবে। মোটকথা, পুরো শহর জুড়ে নিরাপত্তা থাকবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকবে। ওইদিন যারা মিছিলে আসবেন, গাড়ি কোথায় রাখবেন সেটা আমরা পরে বলে দেব।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওইদিন স্কুলের পরীক্ষা আছে। সেদিকে আমাদের নজর আছে। আমরা অভিভাবকদের বলব আপনারা হাতে সময় নিয়ে বের হবেন। তবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে আমাদের খবর দিলে আমরা গাড়ি করে কেন্দ্রে পৌঁছে দেব।’ এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমরা সবদিকে নজর রেখেছি। খোঁজ খবর রাখছি। তাই আমরা বলতে পারি নাশকতা হতে পারে- এমন কোনো খবর বা শংকা নেই।’