বিদেশের খবর ডেস্ক :ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশ জোরালো হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের কাছ থেকে যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে যেসব মতানৈক্য ছিল সেগুলোতে সবপক্ষ একমতে পৌঁছেছে। এখন চূড়ান্ত ঘোষণার বিস্তারিত প্রস্তুত করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, কাতারের পক্ষ থেকে খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস ও ইসরায়েলের আলোচকরা একই ভবনে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হচ্ছে। যার অর্থ যুদ্ধবিরতি যে কোনো মুহূর্তে হবে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে যুদ্ধবিরতির চুক্তিটির খসড়া ফাঁস হয়েছে। এতে দেখা গেছে এটি তিনটি ধাপে কার্যকর হবে। প্রথম ধাপে ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। যার মধ্যে নারী ইসরায়েলি সেনাও থাকবে।
আর একেকজন নারী সেনার জন্য ইসরায়েল ৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। আর একেকজন বেসামরিকের বদলে ৩০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে দখলদার ইসরায়েল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে আরও বলা হয়েছে, গাজার ফিলাডেলফি করিডর (গাজা ও মিসর সীমান্ত) থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়ে যাওয়া হবে। এটি কার্যকর হবে চুক্তির প্রথম ধাপের শেষ দিকে।
দ্বিতীয় ধাপটি শুরু হবে চুক্তি কার্যকরের ১৬তম দিনে। ওই সময়টায় গাজায় জিম্মি থাকা বাকি ইসরায়েলি সেনা ও পুরুষদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা হবে। তৃতীয় ধাপে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। যার মধ্যে থাকবে গাজায় হামাসের বিকল্প একটি প্রশাসন তৈরি করা এবং গাজাকে পুনর্গঠন করা।
এছাড়া চুক্তির অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজ বাড়িতে ফিরতে দেবে। তবে হামাস বা অন্যান্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী যেন অস্ত্র নিয়ে সেখানে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল।
এদিকে ইসরায়েলি কূটনৈতিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দোহায় কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী ও নতুন প্রশাসন এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের মধ্যে ৩৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিহত হতে পারেন। কর্মকর্তারা আরও জানান, ইরান-সমর্থিত মধ্যপ্রাচ্যের অক্ষশক্তির পতন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ এই আলোচনার গতি বাড়িয়েছে। চুক্তির অধীনে ইসরায়েল গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
তবে যারা হামাসের সাম্প্রতিক আক্রমণে সরাসরি জড়িত, তাদের মুক্তি দেওয়া হবে না। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং এটি এই সপ্তাহেই চূড়ান্ত হতে পারে। তবে সময়সীমা নিশ্চিত করা হয়নি। কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বাইডেন বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি, যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধানে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
গাজার সংঘাতে ২০৪ সাংবাদিক নিহত
এদিকে গাজার সংঘাতে মোহাম্মদ আল-তালমাস নামে আরও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তিনি সোমবার (১৩ জানুয়ারি) গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা বর্ষণে আহত হন তিনি। খবর আল জাজিরার। সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় ২০৪ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আল-তালমাস বার্তা সংস্থা সাফার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট, ফেডারেশন অব আরব জার্নালিস্ট এবং বিশ্বের সব দেশের সব সাংবাদিক সংস্থাকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা বেশ এগিয়েছে। কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। তবে একদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে অপরদিকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী।
বেশ কিছু মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ভোর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর উত্তর গাজা অবরোধ করার শততম দিন পার হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল।
এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৫৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৯ হাজার ৭৩১ জন। প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলায় প্রান হারাচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা