প্রত্যাশা ডেস্ক: ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুগতভাবে সুরক্ষিত বলে পরিচিত আইসল্যান্ডেও প্রথমবারের মতো মশার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় দেশটি এখন ধীরে ধীরে কীটপতঙ্গের বসবাসের জন্য আরও অনুকূল হয়ে উঠছে।
মঙ্গলবার (২১শে অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এর এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়। চলতি মাসের আগ পর্যন্ত আইসল্যান্ড ছিল বিশ্বের গুটিকয়েক মশাবিহীন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। অন্য স্থানটি হলো বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ। কিন্তু সেই তালিকাতেও ছেদ পড়ল, কারণ প্রথমবারের মতো আইসল্যান্ডে মশা শনাক্ত হলো।
বিজ্ঞানীরা পূর্বেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, অদূর ভবিষ্যতে আইসল্যান্ড মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, দেশটিতে মশার প্রজননের জন্য আদর্শ স্থান, যেমন অসংখ্য জলাভূমি ও পুকুর রয়েছে। তবে এতদিন পর্যন্ত প্রতিকূল এবং অত্যন্ত শীতল আবহাওয়ার কারণে সেখানে বেশিরভাগ প্রজাতিই টিকে থাকতে পারতো না।
কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। আইসল্যান্ডে বর্তমানে উষ্ণতা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের অন্যান্য অংশের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এর সরাসরি প্রভাবে একদিকে যেমন হিমবাহ গলে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে দক্ষিণের উষ্ণ জলের মাছও এখন আইসল্যান্ডের উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির এই প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নতুন নতুন প্রজাতির মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছর যুক্তরাজ্যে এডিস মশার ডিম পাওয়া গেছে এবং দেশটির কেন্ট এলাকায় এশিয়ান টাইগার মশারও দেখা মিলেছে। এই প্রজাতিগুলো অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের বাহক হিসেবে পরিচিত।
আইসল্যান্ডের ন্যাচারাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদ ম্যাথিয়াস আলফ্রেসন দেশটিতে মশা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিজ্ঞানীদের পাঠানো নমুনা তিনি নিজেই পরীক্ষা করে মশাগুলোর প্রজাতি শনাক্ত করেন।
ম্যাথিয়াস আলফ্রেসন জানান, কিডাফেল, কিয়স এলাকায় ‘কুলিসেটা অ্যানুলাটা’ (Culiseta annulata) প্রজাতির মোট তিনটি মশা পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দুটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ। মথ ধরার জন্য ব্যবহৃত ‘ওয়াইন ফাঁদ’ থেকে এই মশাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই প্রজাতির মশা বেশ ঠান্ডা সহনশীল এবং শীতের সময়ও বিভিন্ন ভবনের বেসমেন্ট ও খামারঘরে আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকতে সক্ষম।
এই মশা প্রথম যার নজরে আসে, তার নাম বিজর্ন হ্যাল্টাসন। তিনি ‘ইনসেক্টস ইন আইসল্যান্ড’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টি প্রথম শেয়ার করেন।
তিনি জানান, ১৬ই অক্টোবর সন্ধ্যায় মথ ধরার জন্য পাতা লাল ওয়াইনের ফাঁদে তিনি এক অদ্ভুত ধরনের পতঙ্গ দেখতে পান। দেখেই সন্দেহ হওয়ায় তিনি দ্রুত সেটি ধরে ফেলেন এবং পরে বুঝতে পারেন এটি একটি স্ত্রী মশা।
বিজর্ন হ্যাল্টাসন আরও দুটি মশা ধরেন এবং পরীক্ষার জন্য সেগুলো আইসল্যান্ডের বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেন। সেখানেই ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় নিশ্চিত হয় যে, এটিই আইসল্যান্ডে শনাক্ত হওয়া প্রথম মশা।
ওআ/আপ্র/২০/১০/২০২৫