প্রযুক্তি ডেস্ক: বিশ্বে প্রথমবারের মতো দৃষ্টিশক্তি হারানো মানুষদের আবার দেখার সক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারার দাবি করেছে মস্তিষ্কে চিপ বসায় এমন এক স্টার্টআপ। তাদের বিজ্ঞানীরা এমন এক রেটিনা ইমপ্লান্ট বা চোখের পর্দায় বসানো যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা দৃষ্টি হারানো মানুষদের আবার দেখার সক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারে বলে দাবি তাদের।
এ যুগান্তকারী সাফল্যটি এসেছে ইলন মাস্কের স্টার্টআপ নিউরালিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘সায়েন্স কর্পোরেশন’-এর হাত ধরে। তাদের তৈরি প্রযুক্তিটিকে বলা হচ্ছে ‘আর্টিফিশিয়াল ভিশন’ বা কৃত্রিম দৃষ্টি।
এ কৃত্রিম দৃষ্টি ব্যবহার করে ‘ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন’ বা এএমডি রোগীরা এখন লেখা পড়তে ও ক্রসওয়ার্ডের মতো ধাঁধা সমাধান করতে পারছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এএমডি রোগ মূলত প্রবীণদের হয়ে থাকে। এই রোগে চোখের রেটিনার ম্যাকিউলা অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষের কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি বা সরাসরি সামনের দিকে দেখার সক্ষমতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, যা অপরিবর্তনীয় অন্ধত্বের অন্যতম কারণ।
‘প্রিমা’ নামের নতুন এই ‘ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেইস’ এমন এক সিস্টেম, যার মধ্যে ক্যামেরা লাগানো এক জোড়া চশমা রয়েছে। এ চশমাটি তারবিহীন উপায়ে রেটিনার নিচে বসানো একটি চিপে সংকেত পাঠায়। সহজ করে বললে, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মূলত দুটো জিনিসের মধ্যে সংযোগ তৈরি হয়, যেখানে প্রিমা চশমা ক্যামেরার মাধ্যমে বাইরের দৃশ্য দেখে ও সেই দৃশ্যকে সংকেতে রূপান্তরিত করে। অন্যদিকে চিপটি রোগীর চোখের রেটিনার ঠিক নিচে অস্ত্রোপচার করে বসানো হয়, যা সেসব সংকেতকে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। ফলে রোগী আংশিক বা কৃত্রিম দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। এএমডি রোগে আক্রান্ত মানুষদের ওপর এক বছর ধরে পরীক্ষা চালানোর পর ‘প্রিমা’ সিস্টেমটি তাদের সংখ্যা ও শব্দ পড়তে পেরেছে।
৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি হারানোর সবচেয়ে প্রচলিত একটি রোগ এএমডি। বিশ্বজুড়ে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। এ রোগের কারণে মানুষ তাদের কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ফলে তাদের পক্ষে পড়া, গাড়ি চালানো, এমনকি মুখ চেনার মতো কাজ করা অসম্ভব হয়ে যায়।
‘প্রিমা’ প্রযুক্তির আগ পর্যন্ত এএমডি রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় করতে বা রোগীর হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে পারেননি চিকিৎসকরা। কারণ, পুরানো বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি কেবল রোগ বিস্তারের গতি কমিয়ে আনতে পারত, যাতে রোগীর দৃষ্টিশক্তি আরো খারাপ না হয়ে যায়।
গবেষকরা বলছেন, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ৩৮ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এ প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন তারা। প্রযুক্তিটি ১২ মাস ব্যবহারের পর ৮০ শতাংশেরও বেশি রোগী ‘ক্লিনিক্যালি মিনিংফুল ইমপ্রুভমেন্ট’ বা অর্থপূর্ণ উন্নতি পেয়েছেন। আর এই উন্নতি তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লেগেছে ও চোখে পড়ার মতো পরিবর্তনও এনেছে।
এক বিবৃতিতে ‘সায়েন্স কর্পোরেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ম্যাক হোডাক বলেছেন, এই যুগান্তকারী সাফল্য আমাদের সেই উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রতি অঙ্গীকারকেই তুলে ধরে, যা অসহায় রোগীদের মধ্যে আশা জাগায় ও তাদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বদলে দেওয়ারই সক্ষমতা রাখে। এসব রোগীর জন্য দৃষ্টিশক্তি পুনরায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে প্রিমার সম্ভাবনায় আমরা খুবই উৎসাহিত।
মাস্কের পাশাপাশি ব্রেইন চিপ স্টার্টআপ নিউরালিংকের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হোডাক। নিউরালিংকের লক্ষ্যও রয়েছে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা। তবে এখনও এমন সক্ষমতা দেখাতে পারেনি নিউরালিংক। তাদের প্রথম দিকের বিভিন্ন ব্রেইন ইন্টারফেইস চিপের প্রোটোটাইপ কেবল পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের ওপর ব্যবহার করেছে, যাতে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানোর মাধ্যমে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তারা।
‘সাবরেটিনাল ফটোভোলটাইক ইমপ্লান্ট টু রিস্টোর ভিশন ইন জিওগ্রাফিক অ্যাট্রোফি ডু টু এএমডি’ শিরোনামে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ।
সানা/ওআ/আপ্র/২২/১০/২০২৫