ঢাকা ১১:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা যখন ন্যায়বিচার

  • আপডেট সময় : ১০:০৮:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অগাস্ট ২০২২
  • ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে অপরাধের প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়। অস্থিতিশীল অবস্থার মাত্রা ক্রমান্বয়ে উর্ধ্বগতির রূপ নেয়। ন্যায়বিচার এর পথকে রুদ্ধস্বরে ধাবিত করে বিচারহীনতার অচলায়তন। সময়ের সাথে প্রতিবন্ধক পরিস্থিতির আর্বিভাব হয়। বিচারহীনতার অন্তরালে এক অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার দেয়াল দিনান্তে মজবুত গাঁথুনি তৈরি করে।
এমতাবস্থায় ন্যায়বিচার ও বিচার প্রত্যাশা এক অলীক ধারণার সঞ্চার করে। ফলশ্রুতিতে জনমনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম হয়। এইরূপ প্রতিবন্ধক পরিস্থিতিতে, আইনের শাসন (জঁষব ড়ভ খধ)ি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মুষ্টিমেয় শ্রেণি বিচার ব্যবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনে উদ্ধত হয়। এ যেন বিকল রাষ্ট্র ব্যবস্থা আর অচল আইন-কানুন এর সমারোহ। তাই বিচার বর্হিভূত হত্যা (ঊীঃৎধ ঔঁফরপরধষ করষষরহম) একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য কালো অধ্যায়। যার ক্ষতি অপরিমেয়। দোষী ব্যক্তির শাস্তি সকলের কাম্য। সচলায়তনে আইনি ব্যবস্থার সুসংহিত অবস্থান এক অপরিহার্য বিষয়। সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা ও ন্যায় বিচারের অন্তরক হিসেবে রয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অস্বচ্ছতা, গতানুগতিক জটিলতা ও লেজুড়বৃত্তি। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো ও এর আলোকে বিন্যাস্ত রীতি, প্রথা ও রেওয়াজে বিচার বর্হিভূত শব্দের আইনি স্বীকৃতি নেই। আইনগত তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বিচার বর্হিভূত শব্দের আইনত ভিত্তি নেই। এই ক্ষুদ্র সীমার রাষ্ট্রে হারকিউলিক্সের উপস্থিতি এক অশনিসংকেত, যা ভীতি, উৎকণ্ঠা ও শংকা’র আর্বিভাব।
অপরাধ দমনের নিমিত্তার্থে অপরাধীর প্রস্থান অপরাধের নির্মূলকরণ নয়। নয়ন বনড-এর নিধন যেন নতুনত্ব এর মোড়কে এক সম নিশানার ইংগিত। ইন কাউন্টার, গোলাগুলি, বন্ধুকযুদ্ধ-এর মতো প্রচলিত শব্দের বিলুপ্তি সাধনে ন্যায় বিচারের পথ প্রশস্ত হোক। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল পরিবেশের উদয় হোক। অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থা, তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্বপালনে যথাযথ ভূমিকা সক্ষমতার সাথে পালন করতে সার্মথ্যবান হোক। কোন একরামুলের কন্যার যেন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করতে না হয়- আব্বুু তুমি কাঁদছো কেন? আর কোন কন্যা যেন পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয়। শোকে যেন বাকরুদ্ধ না হতে হয় কোন সিনহার মায়ের। ভাই হত্যার বিচার চাইতে কোন বোনকে যেন আদালতের দারস্থ হতে না হয়।
বিচার বর্হিভূত হত্যা বন্ধে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃর্ত রিট পিটিশন ১৪ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। এষধফংঃড়হব এর সেই বিখ্যাত উক্তি – ঔঁংঃরপব ফবষধু লঁংঃরপব ফবহরবফ এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। স্বস্তির হোক জীবনাচার। নিরাপদ হোক সবার জীবন। সুনাগরিক সুলভ আচরণ হোক আমাদের সকলের।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রত্যাশা যখন ন্যায়বিচার

আপডেট সময় : ১০:০৮:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অগাস্ট ২০২২

ফারজানা কাশেমী : বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে অপরাধের প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়। অস্থিতিশীল অবস্থার মাত্রা ক্রমান্বয়ে উর্ধ্বগতির রূপ নেয়। ন্যায়বিচার এর পথকে রুদ্ধস্বরে ধাবিত করে বিচারহীনতার অচলায়তন। সময়ের সাথে প্রতিবন্ধক পরিস্থিতির আর্বিভাব হয়। বিচারহীনতার অন্তরালে এক অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার দেয়াল দিনান্তে মজবুত গাঁথুনি তৈরি করে।
এমতাবস্থায় ন্যায়বিচার ও বিচার প্রত্যাশা এক অলীক ধারণার সঞ্চার করে। ফলশ্রুতিতে জনমনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম হয়। এইরূপ প্রতিবন্ধক পরিস্থিতিতে, আইনের শাসন (জঁষব ড়ভ খধ)ি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মুষ্টিমেয় শ্রেণি বিচার ব্যবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনে উদ্ধত হয়। এ যেন বিকল রাষ্ট্র ব্যবস্থা আর অচল আইন-কানুন এর সমারোহ। তাই বিচার বর্হিভূত হত্যা (ঊীঃৎধ ঔঁফরপরধষ করষষরহম) একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য কালো অধ্যায়। যার ক্ষতি অপরিমেয়। দোষী ব্যক্তির শাস্তি সকলের কাম্য। সচলায়তনে আইনি ব্যবস্থার সুসংহিত অবস্থান এক অপরিহার্য বিষয়। সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা ও ন্যায় বিচারের অন্তরক হিসেবে রয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অস্বচ্ছতা, গতানুগতিক জটিলতা ও লেজুড়বৃত্তি। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো ও এর আলোকে বিন্যাস্ত রীতি, প্রথা ও রেওয়াজে বিচার বর্হিভূত শব্দের আইনি স্বীকৃতি নেই। আইনগত তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বিচার বর্হিভূত শব্দের আইনত ভিত্তি নেই। এই ক্ষুদ্র সীমার রাষ্ট্রে হারকিউলিক্সের উপস্থিতি এক অশনিসংকেত, যা ভীতি, উৎকণ্ঠা ও শংকা’র আর্বিভাব।
অপরাধ দমনের নিমিত্তার্থে অপরাধীর প্রস্থান অপরাধের নির্মূলকরণ নয়। নয়ন বনড-এর নিধন যেন নতুনত্ব এর মোড়কে এক সম নিশানার ইংগিত। ইন কাউন্টার, গোলাগুলি, বন্ধুকযুদ্ধ-এর মতো প্রচলিত শব্দের বিলুপ্তি সাধনে ন্যায় বিচারের পথ প্রশস্ত হোক। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল পরিবেশের উদয় হোক। অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থা, তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্বপালনে যথাযথ ভূমিকা সক্ষমতার সাথে পালন করতে সার্মথ্যবান হোক। কোন একরামুলের কন্যার যেন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করতে না হয়- আব্বুু তুমি কাঁদছো কেন? আর কোন কন্যা যেন পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয়। শোকে যেন বাকরুদ্ধ না হতে হয় কোন সিনহার মায়ের। ভাই হত্যার বিচার চাইতে কোন বোনকে যেন আদালতের দারস্থ হতে না হয়।
বিচার বর্হিভূত হত্যা বন্ধে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃর্ত রিট পিটিশন ১৪ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। এষধফংঃড়হব এর সেই বিখ্যাত উক্তি – ঔঁংঃরপব ফবষধু লঁংঃরপব ফবহরবফ এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। স্বস্তির হোক জীবনাচার। নিরাপদ হোক সবার জীবন। সুনাগরিক সুলভ আচরণ হোক আমাদের সকলের।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ