ক্রীড়া ডেস্ক : প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগের দিন মাত্র দুই বল অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। এর আগে আটদিন ব্যাট-প্যাড হাতে নেওয়ার সুযোগ হয়নি তার। গোটা দল ছিল ডমিনিকায়। তামিম একা গায়ানায়। শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে দল যখন গায়ানায় পৌঁছায়, তখনও তামিমকে দর্শক হয়েই থাকতে হয়েছিল। অনুশীলনের ঘাটতি ছিল তা স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি তামিম। তবে একটি বিষয়ে পরিস্কার ছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে যা-ই হোক না কেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভিন্ন দল। যেখানে প্রতিটি ক্রিকেটার নিজেদের নিয়ে গর্ব খুঁজে পান। গায়ানায় প্রথম ওয়ানডের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা আট ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের মাঠে, প্রতিপক্ষের মাঠে এবং নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এই জয়ের মিছিল চলেছে। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে এই ফরম্যাটে তারা এগিয়ে। তাই প্রত্যাশা ছিল গায়ানায় বাংলাদেশের মুখেই ফুটবে বিজয়ের হাসি। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দারুণ মেলবন্ধন পাওয়া গেল গায়ানার ২২ গজে। যেখানে বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত। ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব সামলেছেন ঠিকঠাক। লেজের দুই ব্যাটসম্যানের দুইটি ক্যাচ মিস না করলে ফিল্ডিংও হান্ড্রেডে হান্ড্রেড পেত। সব মিলিয়ে রোববার রাতে ওয়ানডেতে দারুণ সময় কেটেছে বাংলাদেশের। সব সংস্করণ মিলিয়ে ৮ ম্যাচ পর বাংলাদেশ আবার জিতেছে। সবশেষ তামিমের হাত ধরেই বাংলাদেশ জিতেছিল সেঞ্চুরিয়নে। সেটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচ। মাঝের সময়টায় হতশ্রী পারফরম্যান্সে ব্যর্থতার স্তুপে আড়াল হচ্ছিলেন ক্রিকেটাররা। ২০০৬ সালের পর সাকিব ও মুশফিককে ছাড়া খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। তামিম অ্যান্ড কোং মাঠে সেই অভাব বুঝতে দেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪১ ওভারের ম্যাচে ১৪৯ রানে আটকে রাখেন বোলাররা। জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন তারাই। বিশেষ করে দুই স্পিনার নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ২২ টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে অভিষেক হওয়া নাসুম ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখেন ৮-৩-১৬-০ বোলিং ফিগারে। তাকে খেলতে রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের।
নাসুম যে চাপ তৈরি করেছিলেন মিরাজ সেই চাপ অব্যহত রাখেন। সঙ্গে উইকেটও আদায় করে নিয়েছেন। মায়ার্স ও পুরানকে অফসাইডে বিশাল গ্যাপ তৈরি করে খেলতে বাধ্য করেছেন। তার সেই পাতা ফাঁদে পা বাড়িয়ে আউট হন দুই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। মায়ার্স অফস্পিনে বধ। পুরান অ্যাঙ্গেল ডেলিভারিতে বোল্ড। সঙ্গে রোভম্যান পাওয়েলকে পেছনের পায়ে খেলতে বাধ্য করে এলবিডব্লিউ করান। এই তিনজনের একজন উইকেটে থিতু হলে বড় স্কোর পেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু মিরাজের ঘূর্ণিতে তারা কেউই টিকতে পারেননি। পেসাররাও ভালো বোলিং করেছেন। মোস্তাফিজ নিজের প্রথম বলেই ফেরান শাই হোপকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বেশি রান করা এ ওপেনার ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন। শরিফুলের ভাগ্যে লিখা ছিল ৪ উইকেট। দুই ওভারে জোড়া উইকেটে এই সাফল্য পান বাঁহাতি পেসার। তার ৫ উইকেটও হয়ে যেত, যদি মাহমুদউল্লাহ বা মোস্তাফিজ তার বোলিংয়ে ক্যাচ মিস না করতেন।
বোলাররা আলগা বল না করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুব বেশি বাউন্ডারি মারতে পারেনি, স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৪৯ রানের ইনিংসে চার হয়েছে ১০টি, ছক্কা ১টি। ৪১ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের ডট বলই ছিল ১৬১টি। অর্ধেকেরও বেশি বল ডট করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন দিশেহারা। উল্টো চিত্র বাংলাদেশের ইনিংসে। ইনিংসের শুরু থেকেই একই ছন্দে খেলেছেন ব্যাটসম্যানরা। লিটন শুরুতে আউট হলেও তামিম ও শান্ত পাল্টা আক্রমণে লক্ষের পথে ছুটে যান। চার ছক্কা মেরেছেন নিয়মিত বিরতিতে। ৩৩ রানে তামিম রান আউট হলেও শান্ত এগিয়ে যান। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন। মাহমুদউল্লাহ একটু ধীর স্থির থেকে উইকেটে সময় কাটিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর মাঠে নেমে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে বাজে বল শাসনও করেন তিনি। তার ব্যাট থেকেই আসে সর্বোচ্চ ৪১ রান, শান্ত করেন ৩৭। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ভালো করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ যে আত্মবিশ্বাস, নিবেদন নিয়ে খেলে তা পাওয়া যায় না বাকিগুলোতে। তাই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির রেখা মিলিয়ে যায় অতি সহজেই। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির বাজে ফল ভুলিয়ে দিতে পারে ওয়ানডে সিরিজ জয়। বুধবারই হয়তো সেই কাজটা করে রাখতে চাইবেন তামিম।
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দারুণ মেলবন্ধন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ