ঢাকা ০৮:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

প্রতি মিনিটে ঢাকায় ঢুকল ৩০টির বেশি গাড়ি

  • আপডেট সময় : ০২:০১:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলীর আমিনবাজার সেতু। এই সেতু দিয়ে এক মিনিটে ৩০টির বেশি যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের ১১তম দিনে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। এ ছাড়া এই পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে অনেক মানুষকে ঢাকায় আসতে দেখা গেছে।
সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে পরবর্তী ৩০ মিনিট এই পথে অবস্থান নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা যানবাহন ও মানুষ পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাস, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় প্রবেশ করছে। অনেক মানুষ পায়ে হেঁটেই ঢাকায় ঢুকেছেন। দুপুর ১২টা ১২ মিনিট থেকে পরবর্তী ১ মিনিটে এই পথ দিয়ে আসা যানবাহন গুনে দেখা যায়, এই সময়ে ১২টি ব্যক্তিগত গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করেছে। মাইক্রোবাস প্রবেশ করেছে আটটি। অ্যাম্বুলেন্স তিনটি। দূরপাল্লার বাস তিনটি। মোটরসাইকেল ১২টি। অর্থাৎ এই ১ মিনিটে এই পথ দিয়ে ৩৮টি যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
সোমবার সকালে এই পথ দিয়ে ঢাকায় যানবাহন আসার সংখ্যা আরও বেশি ছিল বলে জানান এলাকাটিতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসাদুর রহমান বলেন, সকাল ছয়টা পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের অনুমতি ছিল। তবে সকাল নয়টা পর্যন্ত গাড়ির চাপ অনেক বেশি ছিল। যাঁরা ঢাকায় এসেছেন, তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বলে দাবি করেছেন। পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় বাস প্রবেশ করছে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করেও ঢাকায় আসছেন। পায়ে হেঁটে ঢাকায় আসা ব্যক্তিদের সংখ্যাও অনেক।
সাভারের হেমায়েতপুর থেকে হেঁটে গাবতলী সেতু হয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকায় প্রবেশ করেন সাবের আলী (৭০)। তিনি জানান, রংপুর থেকে বাসে উঠে সাভারের হেমায়েতপুর এসেছেন। ভাড়া দিয়েছেন ১ হাজার ৬০০ টাকা। হাতে টাকা না থাকায় হেমায়েতপুরে নেমে গেছেন। সেখান থেকে হেঁটে ঢাকায় এসেছেন। গাবতলী পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
মোহাম্মদপুরে একটি কারখানায় কাজ করেন জানিয়ে সাবের বলেন, কারখানার মালিক তাঁকে ঢাকায় চলে আসতে বলেছেন। এ জন্য জীবিকার তাগিদে কষ্ট করে হলেও ঢাকায় এসেছেন তিনি।
মাথায় বস্তা নিয়ে পায়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছিলেন ঢাকায় আসা আরেক ব্যক্তি নাজমুল হক। তিনি বলেন, দিনাজপুর থেকে বাসে করে আমিনবাজার পর্যন্ত আসতে তাঁর খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে আসতে লাগে ৫০০ টাকা। গত ২৭ জুলাই যখন ঢাকা ছাড়েন, তখন তাঁর খরচ হয়েছিল ১ হাজার টাকা।
ধানমন্ডি এলাকার একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন জানিয়ে নাজমুল বলেন, কলকারখানা চালু হয়েছে। তাই ঢাকায় আসতে হয়েছে। ঢাকায় যেহেতু মানুষ আসার সুযোগ পাচ্ছেন, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু থাকলে এত টাকা খরচ হতো না।
পায়ে হেঁটে যাঁরাই গাবতলী সেতু পার হয়ে ঢাকায় আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই বলেছেন, উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসগুলো সাভারের নবীনগরে থেমে যাচ্ছে। সেখান থেকে যে যাঁর মতো করে ঢাকায় আসছেন। ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই পথে পায়ে হেঁটে প্রচুর মানুষ ঢাকায় আসছেন। পায়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশের পর রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে গাবতলী এলাকা থেকে লোকজনকে রিকশা, রিকশাভ্যান ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে উঠতে দেখা যায়। তবে এই যাত্রীদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোরতম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিধিনিষেধ চলার মধ্যেই গতকাল রোববার থেকে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়। ফলে কাজে যোগ দিতে লাখো শ্রমিক ঢাকামুখী হন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইইউ ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

প্রতি মিনিটে ঢাকায় ঢুকল ৩০টির বেশি গাড়ি

আপডেট সময় : ০২:০১:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলীর আমিনবাজার সেতু। এই সেতু দিয়ে এক মিনিটে ৩০টির বেশি যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের ১১তম দিনে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। এ ছাড়া এই পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে অনেক মানুষকে ঢাকায় আসতে দেখা গেছে।
সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে পরবর্তী ৩০ মিনিট এই পথে অবস্থান নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা যানবাহন ও মানুষ পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাস, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় প্রবেশ করছে। অনেক মানুষ পায়ে হেঁটেই ঢাকায় ঢুকেছেন। দুপুর ১২টা ১২ মিনিট থেকে পরবর্তী ১ মিনিটে এই পথ দিয়ে আসা যানবাহন গুনে দেখা যায়, এই সময়ে ১২টি ব্যক্তিগত গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করেছে। মাইক্রোবাস প্রবেশ করেছে আটটি। অ্যাম্বুলেন্স তিনটি। দূরপাল্লার বাস তিনটি। মোটরসাইকেল ১২টি। অর্থাৎ এই ১ মিনিটে এই পথ দিয়ে ৩৮টি যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
সোমবার সকালে এই পথ দিয়ে ঢাকায় যানবাহন আসার সংখ্যা আরও বেশি ছিল বলে জানান এলাকাটিতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসাদুর রহমান বলেন, সকাল ছয়টা পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের অনুমতি ছিল। তবে সকাল নয়টা পর্যন্ত গাড়ির চাপ অনেক বেশি ছিল। যাঁরা ঢাকায় এসেছেন, তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বলে দাবি করেছেন। পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় বাস প্রবেশ করছে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করেও ঢাকায় আসছেন। পায়ে হেঁটে ঢাকায় আসা ব্যক্তিদের সংখ্যাও অনেক।
সাভারের হেমায়েতপুর থেকে হেঁটে গাবতলী সেতু হয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকায় প্রবেশ করেন সাবের আলী (৭০)। তিনি জানান, রংপুর থেকে বাসে উঠে সাভারের হেমায়েতপুর এসেছেন। ভাড়া দিয়েছেন ১ হাজার ৬০০ টাকা। হাতে টাকা না থাকায় হেমায়েতপুরে নেমে গেছেন। সেখান থেকে হেঁটে ঢাকায় এসেছেন। গাবতলী পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
মোহাম্মদপুরে একটি কারখানায় কাজ করেন জানিয়ে সাবের বলেন, কারখানার মালিক তাঁকে ঢাকায় চলে আসতে বলেছেন। এ জন্য জীবিকার তাগিদে কষ্ট করে হলেও ঢাকায় এসেছেন তিনি।
মাথায় বস্তা নিয়ে পায়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছিলেন ঢাকায় আসা আরেক ব্যক্তি নাজমুল হক। তিনি বলেন, দিনাজপুর থেকে বাসে করে আমিনবাজার পর্যন্ত আসতে তাঁর খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে আসতে লাগে ৫০০ টাকা। গত ২৭ জুলাই যখন ঢাকা ছাড়েন, তখন তাঁর খরচ হয়েছিল ১ হাজার টাকা।
ধানমন্ডি এলাকার একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন জানিয়ে নাজমুল বলেন, কলকারখানা চালু হয়েছে। তাই ঢাকায় আসতে হয়েছে। ঢাকায় যেহেতু মানুষ আসার সুযোগ পাচ্ছেন, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু থাকলে এত টাকা খরচ হতো না।
পায়ে হেঁটে যাঁরাই গাবতলী সেতু পার হয়ে ঢাকায় আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই বলেছেন, উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসগুলো সাভারের নবীনগরে থেমে যাচ্ছে। সেখান থেকে যে যাঁর মতো করে ঢাকায় আসছেন। ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই পথে পায়ে হেঁটে প্রচুর মানুষ ঢাকায় আসছেন। পায়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশের পর রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে গাবতলী এলাকা থেকে লোকজনকে রিকশা, রিকশাভ্যান ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে উঠতে দেখা যায়। তবে এই যাত্রীদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোরতম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিধিনিষেধ চলার মধ্যেই গতকাল রোববার থেকে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়। ফলে কাজে যোগ দিতে লাখো শ্রমিক ঢাকামুখী হন।