ঢাকা ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতিবাদে ডিম নিক্ষেপের ইতিহাস

  • আপডেট সময় : ০৩:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: পচা ডিম ছুড়ে প্রতিবাদ করার ইতিহাস বহু পুরোনো। রোমান আমলের শালগম নিক্ষেপ থেকে শুরু করে এলিজাবেথীয় যুগের নাট্যমঞ্চ হয়ে এটি এখন আধুনিক রাজনৈতিক প্রতিবাদের এক বিশেষ রূপ ধারণ করেছে।

পচা বা টাটকা ডিম হোক, এর লক্ষ্য রাজনীতিকের গাম্ভীর্য ভেঙে দেওয়া। ডিম যখন কোটের ওপর গড়িয়ে পড়ে বা চুলের ফাঁকে লেগে থাকে, তখন এর তাৎপর্য বহু গুণ বেড়ে যায়।

পচনশীল খাবার ছুড়ে প্রতিবাদ করার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ও গৌরবময়। ৬৩ খ্রিস্টাব্দে রোমান গভর্নর ভেসপাসিয়ানকে শাস্তিমূলক নীতির কারণে ক্ষুব্ধ প্রজারা শালগম ছুড়ে মেরেছিল। মধ্যযুগে এই তালিকায় ডিমের প্রবেশ ঘটে, যখন বন্দিদের প্রকাশ্যে বেঁধে ডিম ছুড়ে মারা একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়।

এলিজাবেথীয় যুগে, নাট্যমঞ্চে খারাপ অভিনয়ের প্রতিবাদে দর্শকরা পচা ডিম ছুড়ত। সেই সময়ের এই প্রথা আজকের রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে ব্যবহারের সঙ্গে খুব একটা বেমানান মনে হয় না। ১৮৩০-এর দশকে জর্জ এলিয়টের বিখ্যাত উপন্যাস ‘মিডলমার্চ’-এও নির্বাচনী ভাষণ চলাকালে মিস্টার ব্রুক নামের এক চরিত্রকে ডিমের আঘাতে অপমানিত হতে দেখা যায়, যা প্রমাণ করে এই প্রথা তখন কতটা প্রচলিত ছিল।

রাজনৈতিক ইতিহাসে ডিমের ব্যবহার কেবল ডিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। টমেটো, ক্রিম পাই, সবুজ কাস্টার্ড এবং চকলেট একলেয়ারসও প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মার্গারেট থ্যাচারের ছবি নিয়ে হাসার কারণে এক টোরি কনফারেন্সে উপস্থিত একজনকে ডিম ছুড়ে মারা হয়। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ নেতা নিক গ্রিফিনকেও বিক্ষোভকারীরা ডিম ছুড়েছিল, যার দাগ তার জ্যাকেটে লেগেছিল।

কোনো রাজনৈতিক দলই ডিমের আঘাত থেকে মুক্ত নয়। ২০১৩ সালে লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ডকে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছিল। একইভাবে, স্কটিশ নেতা জিম মারফিকেও গত বছর ‘হ্যাঁ’ সমর্থকদের হাতে ডিম ছোড়ার পর তার গণভোটের সফর স্থগিত করতে হয়েছিল।

ডিম ছোড়া সবসময় নিরাপদ হয় না। ২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন তাকে হয়তো ইট জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, কিন্তু পরে জানা যায় সেটি ছিল একটি ডিম।

ব্রিটেনে জন প্রেসকটের ঘটনাটি সবচেয়ে বিখ্যাত। ২০০১ সালে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে একজন প্রতিবাদকারী ডিম ছুড়ে মারলে তিনি তাকে ঘুষি মারেন। এই ঘটনাটি ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং এটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে রয়েছে।

ওআ/আপ্র/২৩/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রতিবাদে ডিম নিক্ষেপের ইতিহাস

আপডেট সময় : ০৩:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: পচা ডিম ছুড়ে প্রতিবাদ করার ইতিহাস বহু পুরোনো। রোমান আমলের শালগম নিক্ষেপ থেকে শুরু করে এলিজাবেথীয় যুগের নাট্যমঞ্চ হয়ে এটি এখন আধুনিক রাজনৈতিক প্রতিবাদের এক বিশেষ রূপ ধারণ করেছে।

পচা বা টাটকা ডিম হোক, এর লক্ষ্য রাজনীতিকের গাম্ভীর্য ভেঙে দেওয়া। ডিম যখন কোটের ওপর গড়িয়ে পড়ে বা চুলের ফাঁকে লেগে থাকে, তখন এর তাৎপর্য বহু গুণ বেড়ে যায়।

পচনশীল খাবার ছুড়ে প্রতিবাদ করার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ও গৌরবময়। ৬৩ খ্রিস্টাব্দে রোমান গভর্নর ভেসপাসিয়ানকে শাস্তিমূলক নীতির কারণে ক্ষুব্ধ প্রজারা শালগম ছুড়ে মেরেছিল। মধ্যযুগে এই তালিকায় ডিমের প্রবেশ ঘটে, যখন বন্দিদের প্রকাশ্যে বেঁধে ডিম ছুড়ে মারা একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়।

এলিজাবেথীয় যুগে, নাট্যমঞ্চে খারাপ অভিনয়ের প্রতিবাদে দর্শকরা পচা ডিম ছুড়ত। সেই সময়ের এই প্রথা আজকের রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে ব্যবহারের সঙ্গে খুব একটা বেমানান মনে হয় না। ১৮৩০-এর দশকে জর্জ এলিয়টের বিখ্যাত উপন্যাস ‘মিডলমার্চ’-এও নির্বাচনী ভাষণ চলাকালে মিস্টার ব্রুক নামের এক চরিত্রকে ডিমের আঘাতে অপমানিত হতে দেখা যায়, যা প্রমাণ করে এই প্রথা তখন কতটা প্রচলিত ছিল।

রাজনৈতিক ইতিহাসে ডিমের ব্যবহার কেবল ডিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। টমেটো, ক্রিম পাই, সবুজ কাস্টার্ড এবং চকলেট একলেয়ারসও প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মার্গারেট থ্যাচারের ছবি নিয়ে হাসার কারণে এক টোরি কনফারেন্সে উপস্থিত একজনকে ডিম ছুড়ে মারা হয়। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ নেতা নিক গ্রিফিনকেও বিক্ষোভকারীরা ডিম ছুড়েছিল, যার দাগ তার জ্যাকেটে লেগেছিল।

কোনো রাজনৈতিক দলই ডিমের আঘাত থেকে মুক্ত নয়। ২০১৩ সালে লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ডকে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছিল। একইভাবে, স্কটিশ নেতা জিম মারফিকেও গত বছর ‘হ্যাঁ’ সমর্থকদের হাতে ডিম ছোড়ার পর তার গণভোটের সফর স্থগিত করতে হয়েছিল।

ডিম ছোড়া সবসময় নিরাপদ হয় না। ২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন তাকে হয়তো ইট জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, কিন্তু পরে জানা যায় সেটি ছিল একটি ডিম।

ব্রিটেনে জন প্রেসকটের ঘটনাটি সবচেয়ে বিখ্যাত। ২০০১ সালে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে একজন প্রতিবাদকারী ডিম ছুড়ে মারলে তিনি তাকে ঘুষি মারেন। এই ঘটনাটি ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং এটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে রয়েছে।

ওআ/আপ্র/২৩/০৯/২০২৫