ঢাকা ০৩:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ১৩ বছরের মেয়েকে হত্যা করেন বাবা

  • আপডেট সময় : ০২:১৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
  • ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় নিজের মেয়েকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বাবা। ১৮ বছর পর আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার পুনঃ তদন্ত করে। তদন্তে রহস্য উন্মোচিত হয়। তবে ওই ব্যক্তি চার বছর আগে মারা গেছেন। সম্প্রতি আদালতে এসে ওই ব্যক্তির দুই স্ত্রী এ হত্যার ব্যাপারে জবানবন্দি দিয়েছেন।
চার বছর আগে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম আকসেদ সিকদার। গতকাল মঙ্গলবার পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান রাজশাহী পিবিআইয়ের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আকসেদ সিকদার বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগর চরের বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন। তাঁর নিহত মেয়ের নাম রেবেকা খাতুন। হত্যার সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর। তাঁর দুই স্ত্রী ভায়েলা বেওয়া (৬৫) ও আফিয়া বেওয়া (৬০)। আবুল কালাম বলেন, আফিয়ার মেয়ে ছিল রেবেকা। ২০০৪ সালের জুন মাসে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই কিশোরীকে। এরপর আকসেদ সিকদার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন দুই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন আকসেদ। হঠাৎ রাত ১১টার দিকে ৫০-৬০ জনকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসতে দেখে তাঁর দুই স্ত্রী তাঁকে পালিয়ে যেতে বলেন। আকসেদ সিকদার পালিয়ে গেলে প্রতিপক্ষের লোকেরা তাঁর ১৩ বছরের কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যান। এই মামলায় প্রতিপক্ষের ২০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলাটি প্রথমে থানা-পুলিশ এবং পরে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত করে। ডিবি পুলিশ ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালে ২০২২ সালের মে মাসে আদালত মামলাটি পুনঃ তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
রাজশাহী পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক খায়রুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, প্রতিপক্ষ নয়, আকসেদ সিকদারই তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছিলেন। এরপর তাঁর দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা সবকিছুই নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, এত দিন স্বামীর ভয়ে তাঁরা এ হত্যাকা- নিয়ে মুখ খুলতে পারেননি। আবুল কালাম আযাদ বলেন, পিবিআই নিজেদের মতো করেই তদন্ত করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আকসেদ ছাড়া অন্য কেউ জড়িত ছিলেন, সে রকম কোনো তথ্য পায়নি পিবিআই। আকসেদ সিকদার ২০১৯ সালে মারা যাওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা যাবে না। তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। তারপর আদালত এই মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ডিবি পুলিশ ও পিবিআইয়ের তদন্তের ফলাফল পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হওয়ার ব্যাপারে আবুল কালাম আযাদ বলেন, ‘আমাদের কাছে খটকা লেগেছিল যে বাড়িতে ৫০-৬০ জন হামলা করে শুধু ১৩ বছরের একটা মেয়েকে কেন হত্যা করল? এটা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, সে রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এখন সবার কাছে সবকিছু ধরা পড়বে, এমনটি নয়। ডিবি পুলিশ যা পেয়েছে, পিবিআই তা পায়নি। এমনও হতে পারে যে পিবিআই যা পাচ্ছে, অন্য কোনো তদন্ত সংস্থা তা পাচ্ছে না। অন্য কোনো তদন্ত সংস্থা এর চেয়েও বেশি কিছু পেতে পারে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ১৩ বছরের মেয়েকে হত্যা করেন বাবা

আপডেট সময় : ০২:১৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় নিজের মেয়েকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বাবা। ১৮ বছর পর আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার পুনঃ তদন্ত করে। তদন্তে রহস্য উন্মোচিত হয়। তবে ওই ব্যক্তি চার বছর আগে মারা গেছেন। সম্প্রতি আদালতে এসে ওই ব্যক্তির দুই স্ত্রী এ হত্যার ব্যাপারে জবানবন্দি দিয়েছেন।
চার বছর আগে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম আকসেদ সিকদার। গতকাল মঙ্গলবার পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান রাজশাহী পিবিআইয়ের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আকসেদ সিকদার বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগর চরের বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন। তাঁর নিহত মেয়ের নাম রেবেকা খাতুন। হত্যার সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর। তাঁর দুই স্ত্রী ভায়েলা বেওয়া (৬৫) ও আফিয়া বেওয়া (৬০)। আবুল কালাম বলেন, আফিয়ার মেয়ে ছিল রেবেকা। ২০০৪ সালের জুন মাসে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই কিশোরীকে। এরপর আকসেদ সিকদার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন দুই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন আকসেদ। হঠাৎ রাত ১১টার দিকে ৫০-৬০ জনকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসতে দেখে তাঁর দুই স্ত্রী তাঁকে পালিয়ে যেতে বলেন। আকসেদ সিকদার পালিয়ে গেলে প্রতিপক্ষের লোকেরা তাঁর ১৩ বছরের কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যান। এই মামলায় প্রতিপক্ষের ২০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলাটি প্রথমে থানা-পুলিশ এবং পরে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত করে। ডিবি পুলিশ ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালে ২০২২ সালের মে মাসে আদালত মামলাটি পুনঃ তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
রাজশাহী পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক খায়রুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, প্রতিপক্ষ নয়, আকসেদ সিকদারই তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছিলেন। এরপর তাঁর দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা সবকিছুই নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, এত দিন স্বামীর ভয়ে তাঁরা এ হত্যাকা- নিয়ে মুখ খুলতে পারেননি। আবুল কালাম আযাদ বলেন, পিবিআই নিজেদের মতো করেই তদন্ত করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আকসেদ ছাড়া অন্য কেউ জড়িত ছিলেন, সে রকম কোনো তথ্য পায়নি পিবিআই। আকসেদ সিকদার ২০১৯ সালে মারা যাওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা যাবে না। তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। তারপর আদালত এই মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ডিবি পুলিশ ও পিবিআইয়ের তদন্তের ফলাফল পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হওয়ার ব্যাপারে আবুল কালাম আযাদ বলেন, ‘আমাদের কাছে খটকা লেগেছিল যে বাড়িতে ৫০-৬০ জন হামলা করে শুধু ১৩ বছরের একটা মেয়েকে কেন হত্যা করল? এটা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, সে রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এখন সবার কাছে সবকিছু ধরা পড়বে, এমনটি নয়। ডিবি পুলিশ যা পেয়েছে, পিবিআই তা পায়নি। এমনও হতে পারে যে পিবিআই যা পাচ্ছে, অন্য কোনো তদন্ত সংস্থা তা পাচ্ছে না। অন্য কোনো তদন্ত সংস্থা এর চেয়েও বেশি কিছু পেতে পারে।’