অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা : দই আবিষ্কার, দই তৈরির প্রক্রিয়া, প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, মধু এবং মানুষের দীর্ঘায়ু জীবনের একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশ্লেষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য উপস্থাপন করা হলো। দই সম্ভবত ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে মধ্য এশিয়া এবং মেসোপটেমিয়ায় নবপ্রস্তর যুগে আবিষ্কৃত হয়েছিল অথবা প্রথম দুধ উৎপাদনকারী প্রাণী গৃহপালিত হওয়ার সময় হয়েছিল বলে মনে করা হয়। প্রায় ৪ হাজার বছর আগে নোমাডিকদের দ্বারা দই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলেও তাদের একটা পর্যবেক্ষণ ছিল যে, দৈবক্রমে দুধ গাঁজন প্রক্রিয়ায় দইয়ে পরিণত হয়। মনে করা হয় গৃহপালিত পশুর দুধ বহন করার জন্য তারা প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি করা থলে ব্যবহার করতেন যা দুধের উপর ব্যাকটেরিয়ার বিপাকীয় কাজের আদর্শ পরিবেশ দিতে পেরেছিল। দুধের সাথে যুক্ত থেকে সেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গাঁজন প্রক্রিয়ায় থলেতে থাকা দুধ দই হয়ে যেত। মনে করা হয় সমসাময়িককালে একইভাবে হয়তো আরও কিছু অঞ্চলে দইয়ের উৎপত্তি ঘটেছিল। দই প্রথম কোথায় তৈরি হয়েছিল তার সঠিক তথ্য জানা না গেলেও বুলগেরিয়াকে দইয়ের দেশ বলে বিবেচনা করা হয়। বুলগেরিয়ানদের ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় খাবার ট্যারাটর নামের ঠান্ডা স্যুপ যা দই, শসা, আখরোট, লবণ, উদ্ভিজ্জ তেল এবং মশলা দিয়ে প্রস্তুত করা হতো।
১৯০৫ সালে বিশিষ্ট বুলগেরিয়ান চিকিৎসক এবং অণুজীববিজ্ঞানী স্ট্যামেন গিগভ গ্রিগোরভ (ঝঃধসবহ এরমড়া এৎরমড়ৎড়া) দই তৈরিতে ব্যবহৃত খধপঃড়নধপরষষঁং নঁষমধৎরপঁং নামক ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন। ১৯৫০ এর দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দই কোম্পানি একটি ‘অফিসিয়াল বুলগেরিয়ান দই’ তৈরি করতে ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেনের একটি নির্দিষ্ট মিশ্রণের প্যাটেন্ট করেন। এই মিশ্রণটি অনেক দেশে দই উৎপাদকদের কাছে রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দইয়ের উৎপত্তি অজানা থাকলেও বর্তমানে খধপঃড়নধপরষষঁং ফবষনৎঁবপশরর ংঁনংঢ়. নঁষমধৎরপঁং-এর জিনোম বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয় যে, নঁষমধৎরপঁং ব্যাকটেরিয়াটি গাছের বাকল বা পাতা থেকে দুধের সংস্পর্শে এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুধকে দইয়ে পরিণত করে থাকতে পারে। আবার অন্যদের মতে দুধ উৎপাদনকারী গৃহপালিত প্রাণীর শরীর থেকেও এই ব্যাকটেরিয়া দুধে স্থানান্তরিত হয়ে দইয়ে পরিণত করতে পারে। প্রাচীন গ্রিসের রন্ধনপ্রণালীতে অক্সিগালা নামে পরিচিত একটি দুগ্ধজাত পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ছিল দইয়েরই একটি সংস্করণ। সে সময় অক্সিগালার সাথে মধু খাওয়ার রীতি ছিল। যেমনটি ঘন গ্রিক দই আজও খাওয়া হয়। অনেকে মনে করেন যে কিছু ‘বর্বর জাতি’ জানতো কীভাবে ‘একটি সম্মত অম্লতাসহ দুধকে ঘন করতে হয়’। মধ্যযুগীয় তুর্কিদের দ্বারা দইয়ের ব্যবহারের কথা বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে। প্রথম দিকের দইগুলো সম্ভবত ছাগলের চামড়ার থলেই বন্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গাঁজনের মাধ্যমে তৈরি করা হতো।
১৯০৭ সালে বুলগেরিয়াতে কাজ করার সময় নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী এলি মেচনিকফ (ঊষরব গবঃপযহরশড়ভভ) কৌতূহলী হয়ে পর্যবেক্ষণ করেন যে, বুলগেরিয়ান জনসংখ্যার নির্দিষ্ট বাসিন্দারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশিদিন সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকেন। এই ধারণা থেকেই তিনি শতবর্ষী ব্যক্তিদের বা ১০০ বছর পেরিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ওপর পর্যবেক্ষণে মনোযোগ দেন। তিনি তাদের অসাধারণ বয়স এবং তাদের জীবনযাত্রার মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এই গবেষণায় তিনি দেখেছিলেন ককেশাস পর্বতমালায় বসবাসকারী গ্রামবাসীরা প্রতিদিন গাঁজানো দুধ বা দই খেতেন। সেখান থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে গাঁজানো দুধে খধপঃড়নধপরষষঁং নঁষমধৎরপঁং নামক একটি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং তাদের আয়ু বাড়ায়। তার ধারণা সঠিক ছিল। এর পূর্বেই কারণ ১৯০৫ সালে স্ট্যামেন গ্রিগোরভ দই তৈরিতে ব্যবহৃত খধপঃড়নধপরষষঁং নঁষমধৎরপঁং নামক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করে ফেলেছেন। তার এই বিশেষ পর্যবেক্ষণের পর তিনি বিভিন্নভাবে প্রচার শুরু করেন এই বলে যে, ‘তোমরা নিয়ম বেঁধে প্রতিদিন দই খাও, তাহলে দীর্ঘায়ু পাবে’। তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের মধ্যে দই খাওয়ার সংস্কৃতি বৃদ্ধি পায়। ইদানীং কালে বাংলাদেশেও দই খাওয়ার সংস্কৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অবশ্যই এত একটি ভালো সংস্কৃতি।
দই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় বহুল প্রচলিত একটি দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য। এই ব্যাকটেরিয়া দুধের ল্যাকটোজ জাতীয় শর্করাকে ভেঙে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। অ্যাসিডের সংস্পর্শে দুধের প্রোটিন ক্যাসেইন-এর ওপর কাজ করে জেল বা অর্ধ শক্ত জাতীয় পদার্থ দইয়ে পরিণত করে এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত ‘টার্ট’ স্বাদ দেয়। দুধে প্রোটিন ‘ক্যাসেইন’ সাদা রঙ হওয়ায় দুধ এবং দই এর রঙও সাদা। দই তৈরিতে গরুর দুধ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, উট এবং ইয়াকের দুধও ব্যবহৃত হয়। ব্যবহৃত দুধ কাঁচা বা পাস্তুরিত হতে পারে। তবে আমাদের দেশে দুধকে ঘন করার জন্য পাস্তুরায়নের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা এবং বেশিক্ষণ ধরে তাপ প্রয়োগ করা হয়। সাধারণ পাস্তুরায়ন ৬০-৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট রেখে সম্পন্ন করা হয়। ফলে দুধের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর রোগজীবাণু ধ্বংস হয়। একই সাথে অন্যান্য সহনশীল জীবাণুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয় এবং অণুজীবের সংখ্যাবৃদ্ধি শ্লথ করে দেওয়া হয়।
সব ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংস করা যায় না বিধায় পাস্তুরিত দুধ নিম্ন তাপমাত্রায় (৪ড় সেলসিয়াসে) সংরক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়। দুধের ধরনের ওপর দইয়ের স্বাদও ভিন্ন হয়। ভোলা অঞ্চলে দই তৈরিতে মহিষের দুধ ব্যবহার করা হয়। মহিষের দুধ ঘন বিধায় দইয়ের টেক্সচারও ঘন হয় এবং স্বাদও একটু ভিন্ন ধরনের। দইকে ঘন করার জন্য অনেক সময় দুধের সাথে পাউডার দুধের গুড়া মেশানো হয়। সাধারণত ঝঃৎবঢ়ঃড়পড়পপঁং ঃযবৎসড়ঢ়যরষঁং এবং খধপঃড়নধপরষষঁং ফবষনৎঁবপশরর ংঁনংঢ়। ইঁষমধৎরপঁং নামক স্টার্টার ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে দই তৈরি করা হয়। এই দুটি ব্যাকটেরিয়ার বিশেষত্ব হলো এরা তাপ এবং অ্যাসিড সহনশীল ব্যাকটেরিয়া। যেটি দই তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দই তৈরির প্রথম ধাপে ঝঃৎবঢ়ঃড়পড়পপঁং ঃযবৎসড়ঢ়যরষঁং বেশি সক্রিয় থাকে এরপর গাঁজন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ল্যাকটিক এসিডের কারণে অমøত্ব (০.৫ শতাংশ) বৃদ্ধি পেলে এটির কার্যক্রম শ্লথ হয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে বেশি অমøতা সহনশীল খধপঃড়নধপরষষঁং নঁষমধৎরপঁং ল্যাকটিক অ্যাসিডের পরিমাণ ১ শতাংশের সমান বা বেশি না হওয়া পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। কখনো কখনো দই তৈরির সময় বা পরে খধপঃড়নধপরষষঁং-এর অন্যান্য প্রজাতি, যেমনÑ ইরভরফড়নধপঃবৎরঁস যোগ করা হয়। দইয়ের সাথে যুক্ত থাকা ব্যাকটেরিয়াকে প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বলা হয়।
অন্যান্য প্রবায়োটিকের মতো, ইরভরফড়নধপঃবৎরঁস এর স্ট্রেনগুলো অন্ত্রের সংক্রমণ এবং ক্যান্সারসহ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য কার্যকর। ইদানীং ব্যবহারিক ক্লাসে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দই পর্যবেক্ষণের সময় ব্যাকটেরিয়ার সাথে আরও একটি এককোষী প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং প্রবায়োটিক গুণ সম্পন্ন ছত্রাক ‘ইস্ট’ দেখা যায়। এটি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। দই তৈরিতে সাধারণত প্রতি মিলিলিটার দুধে কমপক্ষে ১ মিলিয়ন বা ১০৬ স্টার্টার ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োজন হয়। দই তৈরির নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ৪০-৪৫ক্কঈ এবং ৪-৮ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এখানে উল্লেখ্য উচ্চ তাপমাত্রায় দই দ্রুত পরিণত হলেও দইয়ের টেক্সচারে বা গঠনে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এতক্ষণ দই এবং দইয়ে বিদ্যমান প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বা ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখন দইয়ের সাথে মধুর উপস্থিতি এবং তার জৈবিক কার্যকারিতা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। আমরা সবাই কম বেশি অবহিত যে, নিয়মিত মধু সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দই এবং মধু একসাথে খেলে কেমন হয়?
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মধুসহ দই হজমের জন্য কার্যকর। সকালের নাস্তায় দই, মধু ও প্রবায়োটিক সংস্কৃতি হলো এ যুগের স্বাস্থ্য সংস্কৃতি। আমরা মধু এবং দই সম্বন্ধে জানলেও প্রবায়োটিক সম্বন্ধে ইদানীং জানতে শুরু করেছি মাত্র। প্রবায়োটিক হলো এক ধরনের জীবন্ত অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট)। যা পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে মানুষের অন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিয়ে থাকে। দই তৈরিতে যে স্টার্টার ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয় সেগুলো প্রবায়োটিক। দইয়ে বিদ্যমান ব্যাকটেরিওসিন-উৎপাদনকারী প্রবায়োটিক স্ট্রেন অন্ত্রের উপনিবেশের মাধ্যমে অন্ত্রের এপিথেলিয়াল কোষে রোগজীবাণুর বৃদ্ধি এবং কার্যক্রমে বাধা দেয়। ব্যাকটেরিওসিন হলো প্রবায়োটিক দ্বারা উৎপাদিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইড যৌগ যা সাধারণত অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে বাধা দেয় বা মেরে ফেলে। ব্যাকটিরিওসিন অ্যান্টিবায়োটিকের মতো হলেও কাজের পদ্ধতি অ্যান্টিবায়োটিকের থেকে আলাদা। এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কোষ ঝিল্লিকে ছিদ্র করে ঝিল্লির গঠনে পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কোষগুলো মেরে ফেলে।
অধিকন্তু ব্যাকটেরিওসিন রাইবোজম দ্বারা সংশ্লেষিত প্রোটিন হওয়ায়, বিদ্যমান প্রোটিওলাইটিক এনজাইম দ্বারা ভেঙে যায়। এ কারণে রোগজীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের মতো অন্ত্রে ব্যাকটিরিওসিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। অনেক সময় প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে ফুটবল খেলার মাঠে একজন আদর্শ রেফারির সাথে তুলনা করা হয়। খেলার মাঠে রেফারি যেমনভাবে ফাউল করা খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখিয়ে বের করে দেয় তেমনই প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ফাউল সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ব্যাকটেরিওসিন উৎপন্ন করে লাল কার্ড দেখিয়ে অন্ত্র থেকে বিতাড়িত করে। এখানে অন্ত্র হলো খেলার মাঠ এবং প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হলো রেফারি।
প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বড্ড অভিমানী বিধায় অন্ত্রে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে না। তাই নিয়মিত দই গ্রহণে অন্ত্রে প্রবায়োটিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
এজন্যই অন্ত্রের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য প্রবায়োটিকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি একান্তভাবে দরকার এবং সকালের নাস্তায় নিয়মিত দই রাখা বাঞ্ছনীয়। আমরা যখন দই খাই, তখন জেনে অথবা না জেনে দইয়ের সাথে উপকারী প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াও খেয়ে থাকি। তাই দই খাওয়ার সঠিক সময়ের সাথে প্রবায়োটিকের কার্যকারিতার কথাও ভাবতে হয়। সকালে দই খাওয়া ভালো। কারণ পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে দইয়ে বিদ্যমান প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া তাদের যাত্রা শুরু করে। প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলো থেকে সর্বোচ্চ উপকার পেতে অন্ত্রের অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন। এ জন্য প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন দই সকালের নাস্তার সময় বা তার ঠিক পরে গ্রহণ করাই ভালো। কারণ আমাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ সকালে সর্বনিম্ন স্তরে থাকে এবং এই অ্যাসিডিটি পেটে খাবারের উপস্থিতির দ্বারা আরও বাফার হয়। এই অবস্থায় প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ভালোভাবে বেঁচে থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কার্যকর থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাস্তার সাথে এক চামচ মধু দিয়ে সাধারণ দইয়ের টক স্বাদকে মিষ্টি স্বাদে পরিণত করে সকালের নাস্তাকে সুস্বাদু করার একটি সহজ এবং উত্তম পদ্ধতি। এটি গাঁজনযুক্ত জনপ্রিয় দুগ্ধজাত পণ্য দইয়ে প্রবায়োটিক সংস্কৃতিকেও সমর্থন করে। নিয়মিত প্রবায়োটিক সেবনে হজমের স্বাস্থ্য এবং মলত্যাগকে আরামদায়ক করতে পারে। প্রবায়োটিক সেবনে মেজাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। গ্রীক দই এবং অন্যান্য দইতে প্রচলিত দই স্টার্টার ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি ইরভরফড়নধপঃবৎরঁস ধহরসধষরং-এর মতো প্রবায়োটিক স্ট্রেন রয়েছে। একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, দইয়ের সাথে থাকা মধু অন্ত্রে দইয়ের প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। একই সাথে আমাদের মনে রাখতে হবে যে মধু একটি অতিরিক্ত চিনি। সেক্ষেত্রে শরীরের ওজন বজায় রাখার জন্য ডায়েটে মধুর পরিমাণ সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। সেই বিবেচনায় টক দইয়ের কোনো বিকল্প নেই। তবে মাঝে মধ্যে চিনিবিহীন দইয়ে কিছুটা মধু যোগ করা স্বাদের যেমন পরিবর্তন ঘটাবে তেমনই প্রবায়োটিক সংস্কৃতিকে জোরদার করবে। তাই স্থূলতা এবং ডায়াবেটিকের সমস্যা না থাকলে নির্দ্বিধায় সকালের নাস্তার তালিকায় মধু মিশিয়ে টক দই রাখা নাস্তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেন।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, দইতে এক টেবিল চামচ মধু লাগালে এতে থাকা প্রবায়োটিকগুলো অন্ত্রে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এটি একটি জয়-জয় বা (রিহ-রিহ) সমন্বয় যা স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু উভয়ই। তাই আজ থেকেই স্থূলতা এবং ডায়াবেটিকের সমস্যা না থাকলে নির্দ্বিধায় সকালের নাস্তার তালিকায় মধু মিশিয়ে টক দই রেখে নাস্তা সংস্কৃতি বা ব্রেকফাস্ট কালচার গড়ে তুলতে পারেন।
লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়