নারী ও শিশু ডেস্ক: প্রচ্ছদশিল্পী ফারিহা তাবাসসুম প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ থেকে কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে শুধু কাগজে বা ক্যানভাসে প্রচ্ছদ আঁকলেও এখন বিভিন্ন মিডিয়ায় কাজ করি। প্রচ্ছদের প্রয়োজন ও বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দিয়ে মিডিয়া নির্বাচন করি। ভালো লাগার ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমানে প্রচ্ছদ ডিজাইন একটি শৈল্পিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন বহু পাঠক লেখার পাশাপাশি প্রচ্ছদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বই কিনছেন। তাই ধীরে ধীরে কাজের ক্ষেত্র ও মাধ্যম বৈচিত্র্যময় হচ্ছে।
আমি কখনো এই কাজে বৈষম্যের শিকার হইনি; বরং দিনশেষে কাজের মান ও গুণ দিয়েই যোগ্যতা বিচার করতে দেখেছি। এক্ষেত্রে আসলে নারী-পুরুষ ভেদাভেদটা তেমন নেই। যার কাজ যত ভালো ও সূক্ষ্ম, তিনি তত বেশি কাজ করার সুযোগ পান। তবে শৈল্পিক কাজে শিল্পীর চিন্তার ও কাজের স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিলে দারুণ কিছু তৈরি করা সম্ভব। অনেক সময় শিল্পী কখনো এই স্বাধীনতা পান, কখনো পান না। বইমেলার সময়টাতে যেভাবে কাজ করা হয়, সারা বছর সেভাবে হয় না। কারণ বইমেলাকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ বই প্রকাশিত হয়। তাই প্রচ্ছদ অঙ্কনকে প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে স্বচ্ছন্দে জীবন কাটানোটা মনে হয় না সম্ভব। অদূর ভবিষ্যতে এই অসম্ভবটাও সম্ভবে পরিণত হতে পারে।
শিক্ষার্থী ও কার্টুনিস্ট শাফিয়ান রহমান জানান, নারী কার্টুনিস্টরা এখন বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন। অনেক কার্টুনিস্ট স্টোরি টেলিং বা গল্প বলাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এছাড়া বৈচিত্র্যময় চরিত্রগুলোকেও তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন- আমার মনে হয়, আগের তুলনায় বর্তমানে নারী কার্টুনিস্টরা বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন। তবে স্বাধীনতার কথা বলতে গেলে এখনো সমাজের অনেক কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। কার্টুন পিপল থেকে প্রকাশিত ‘জাদুর টানেল’ নামের বইতে আমি প্রথম কাজ করি। ক্রিয়েটিভিটির দিক থেকে মনে হয়, নারী হিসেবে আমাদের আলাদা অ্যাডভানটেজ আছে। নারীদের জীবনের নানান কমপ্লেক্স, মজাদার আর ইমোশনাল অভিজ্ঞতা তুলনামূলক বেশি থাকে। আমাদের দেশে পুরুষ কার্টুনিস্ট সংখ্যায় অনেক বেশি। এখন নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন এই ক্ষেত্রে। কিন্তু কাজের সময়, যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য অনেকে কিছতা পিছিয়ে আসেন। বৈচিত্র্যময় গল্পের কমিকস আঁকতেই আমার বেশি ভালো লাগে। এ ছাড়া চলমান ইস্যু নিয়েও কাজ করতে আনন্দ পাই। ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকার চেয়ে হাতে আঁকা বেশি কঠিন মনে হয়। সেই মাধ্যমে আঁকার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফটওয়্যারের সাহায্য নিয়ে আইডিয়াগুলোকে আমরা বিভিন্নভাবে এক্সপ্লোর করতে পারি। তবে ডিজিটালি হোক কিংবা হাতে আঁকা, একজন শিল্পীর কাছে তার কাজটা নিজের সন্তানের মতো। যেভাবেই হোক, সেটাকে তিনি নিজের মতো করে গড়ে নিতে পারেন।
প্রচ্ছদশিল্পী আভা তাজনোভা ইরা বলেন, বর্তমানে নান্দনিক প্রচ্ছদের চাহিদা বাড়ছে। আমি চারুকলায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছি প্রিন্ট মেকিং নিয়ে। জলরং এবং অ্যাক্রিলিক স্বচ্ছন্দের মাধ্যম হলেও বিভিন্ন প্রচ্ছদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু কিছু কাজ ডিজিটাল ড্রয়িং দিয়েও করতে হচ্ছে ইদানীং। সে ক্ষেত্রে আমার ডিজিটাল আর্টও করা হয় প্রচ্ছদের জন্য। ভাবতাম, এখন তো সবাই অনলাইনে লেখা পড়ে ফেলে। কাজ করতে এসে বুঝেছি, ধারণাটা ঠিক ছিল না। এখনো কাগজে ছাপা হয় অসংখ্য বই। আর একই সঙ্গে নান্দনিক প্রচ্ছদের চাহিদাও বাড়ছে। এই সেক্টরে। সত্যি বলতে, প্রচ্ছদের জগতে কাজ করতে এসে আমার কাজটাকে সবাই মূল্যায়ন করেছেন এখন পর্যন্ত। নারী শিল্পী হিসেবে লেখক, প্রকাশক বা প্রকাশনীর দিক থেকে সে রকম কোনো প্রতিবন্ধকতা আসেনি; বরং আমার মনে হয়েছে, সম্মানটাই বেশি পেয়েছি। বইমেলার কাজের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হচ্ছে, অনেক পরিশ্রমে করা কাজগুলোর এক রকম প্রদর্শনী হয়ে যায়। এটা খুব আনন্দ দেয়। আর বড় অসুবিধা হচ্ছে সময়ের সীমাবদ্ধতা। বইমেলা যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুরু ও শেষ হয়, তাই বইমেলাকেন্দ্রিক কাজের সময়সীমাটাও নির্দিষ্ট থাকে। একসঙ্গে যখন অনেক কাজ হাতে চলে আসে, তখন একটু হিমশিম খেতে হয়। তা ছাড়া একেকজন লেখকের একেক রকম চাওয়া থাকে প্রচ্ছদের ক্ষেত্রে। সেই চাওয়াটা বিবেচনায় রেখে নান্দনিকভাবে কাজটা তোলা কিছু সময় একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে দিন শেষে সফলভাবে কাজগুলো করা হয়ে গেলে আলাদা একধরনের তৃপ্তি আসে।