নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রকৃতির ক্ষতি করে প্রকল্প নেওয়া যাবে না। হাওর, পানি, খাল-বিল, ছোট মাছ, ঘাস, লতাপাতা ও প্রকৃতির ডিস্টার্ব করে প্রকল্প নেওয়া যাবে না। এগুলোর যেন ক্ষতি করা না হয়। এছাড়া বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে ফসলের গুণগতমান ও পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরেন।
কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় হাওর ও চর এলাকায় ফসল উৎপাদনে জোর দিচ্ছে সরকার। এজন্য মঙ্গলবার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, পুষ্টিমান ও খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট ফসলের উৎপাদনশীলতা ৮ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা। নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল গ্রাম সৃজনের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে অবদান রাখা।
৪৯ জেলার ১৫৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকার গড় শস্যের নিবিড়তা বাড়ানো হবে। প্রকল্প এলাকায় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে বায়ো-ফর্টিফাইড ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত জাত/প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, নিরাপদ ফসল উৎপাদন বাড়বে। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসনের কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বড় পরিমাণে ফসল ফলাতে বলেছেন সরকারপ্রধান। ফসলের গুণগতমান ও পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করতে বলেছেন, সুগন্ধ নয়। ফসল সংরক্ষণে অন্য দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ফসল সংরক্ষণে প্রয়োজনে ডাচদের অনুসরণের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
পদ্মা, মেঘনা নামেই নতুন বিভাগ, প্রস্তাব উঠছে নিকারে : স্থানের নামে নয়, নদীর নামেই হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন দুটি বিভাগ। ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে নতুন দুই বিভাগের নামের প্রস্তাব প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) আগামী সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। নিকারের সায় পেলে দেশে বিভাগের সংখ্যা বেড়ে হবে ১০টি। বর্তমানে দেশে যত বিভাগ রয়েছে, তার সবই জেলার নামে। সেগুলো হল- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ। কুমিল্লা অঞ্চল নিয়ে নতুন বিভাগ মেঘনা এবং ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে নতুন বিভাগ পদ্মা হবে।
আগামী রোববার নিকার’র সভা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয় অনুবিভাগ) মো. রাহাত আনোয়ার, ওই সভায়ই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে পদ্মা ও মেঘনা প্রশাসনিক বিভাগ সৃজনের প্রস্তাব উঠছে। কুমিল্লা ও ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে নতুন দুটি বিভাগ করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু নতুন বিভাগের নাম কী হবে, তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি রয়েছে কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার রাজনৈতিক নেতাদের। সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা ও ফরিদপুরের প্রস্তাবিত বিভাগকে যথাক্রমে ‘মেঘনা’ ও ‘পদ্মা’ হিসেবে নামকরণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। একনেক পরবর্তী সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছিলেন, “বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে নতুন বিভাগ করতে চাই। এবং এই দুই বিভাগের দুই বড় নদীর নামে করতে চাই। একটি হবে মেঘনা, আরেকটি হবে পদ্মা।”
এর আগে গত ২১ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস ভবনের উদ্বোধনী আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ স্লোগানের আদলে নদীর নামে হবে এ বিভাগ দুটির নাম। ফরিদপুর বিভাগের নাম হবে ‘পদ্মা’ আর ‘মেঘনা’ হবে কুমিল্লা বিভাগের নাম। নতুন বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, থানা গঠন বা স্থাপনের প্রস্তাব বিবেচনা করে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি-নিকার। এছাড়া বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং থানার সীমানা পুনর্র্নিধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব বিবেচনা করাও হবে এর কাজ। নতুন সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বায়ক করে ২০১৯ সালে ২৯ জানুয়ারিতে ২৫ সদস্যের নিকার গঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেয়।
আলোচ্যসূচিতে আরও প্রস্তাব : দুটি বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আরও চার প্রস্তাব রয়েছে নিকার’র আলোচ্যসূচিতে। জন নিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাকে ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করে ‘ঝাউদিয়া থানা’ নামকরণ এবং কাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্পকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প’ হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব উপস্থাপনের কথা রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পৌরসভা গঠন; বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ও বোয়াইল ইউনিয়নের ‘বিরোধপূর্ণ’ অংশ বিয়োজন করে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সংযোজন করে মাদারগঞ্জ উপজেলার সীমানা পুনর্গঠন এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণের প্রস্তাব নিকারের আলোচ্যসূচির প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে।
প্রকৃতির ক্ষতি করে প্রকল্প নেওয়া যাবে না, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা
জনপ্রিয় সংবাদ