ঢাকা ০৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

প্রকৃতিতে বন্ধুত্বের ডাক: মানুষ আর পশুর মেলবন্ধন

  • আপডেট সময় : ০৯:২১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

শাহানা হুদা রঞ্জনা

অসংখ্য মনখারাপ করা খবরের মধ্যে কিছু খবর পড়লে মনটা ভালো হয়ে যায়। যেমন- সেদিন দেখলাম গাজীপুরে মানুষ ও শিয়ালের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিরল বন্ধুত্ব। নাম ধরে ডাকলেই জঙ্গল থেকে ছুটে আসে ‘লালু’ নামের শিয়ালটি। এক বছরের বেশি বয়স লালুর। সে রান্না করা ভাত, তরকারি, মাংস, পাউরুটি, বিস্কুট– সবই খায়। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায় গিয়াস উদ্দিনের উঠোনে কিংবা ঘরে। মাঝে মাঝে বনে গেলেও ‘লালু’ ডাক শুনলেই দৌড়ে ফিরে আসে।

কী অদ্ভুত ভালোবাসা গড়ে উঠেছে বন্য শিয়াল ও মানুষের মধ্যে। প্রায় এক বছর আগে বনে অসহায় অবস্থায় সদ্য চোখফোঁটা একটি শিয়ালছানাটিকে পেয়েছিলেন এক কৃষক। “লালুকে ছোটোবেলা থেকে পালছি। এখন সে আমার পরিবারের অংশ। খেতে বসলে পাশে থাকে, কাজ করতে গেলে পিছু নেয়।” শিয়াল সাধারণত বন্য প্রাণী বলে ঘরে পালন ঝুঁকিপূর্ণ। তবে পর্যাপ্ত খাদ্য ও যত্ন পেলে এ ধরনের সহাবস্থান সম্ভব।”

এদিকে বাউফলে দোকানি হেমায়েত উদ্দিনের কাছে ফিরে এসেছে তার পালিত সেই সাদা বকটি। এর দুইদিন আগে বন বিভাগের কর্মকর্তারা নুরাইনপুর বাজার-সংলগ্ন ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত একটি গাছে বকটি অবমুক্ত করেন। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পর থেকেই বকটি ছিল নীরব ও নিস্তেজ। খাবার না খেয়ে একাকী সময় কাটাচ্ছিল সে। অবশেষে দু-দিন পর নিজের প্রিয় মানুষ হেমায়েতের কাছে ফিরে আসে।

প্রায় চার মাস আগে ঝড়ের সময় নুরাইনপুর বাজার-সংলগ্ন খানবাড়ির একটি গাছ থেকে বকের ছানাটি পড়ে যায়। তখন একটি গুঁইসাপ সেটিকে আক্রমণ করলে স্থানীয় ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন সেটিকে উদ্ধার করেন। এরপর তিনি নিজের সন্তানের মতো যত্ন নিয়ে ছানাটিকে বড় করে তোলেন।

যেখানে ভালোবাসা দিয়ে বনের প্রাণীকে পোষ মানিয়ে নিজের কাছে রাখা যায়; সেখানে মানুষ মানুষকে হত্যা করে, আঘাত করে, ক্ষতি করে, সম্পদ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। মানুষ শুধু মানুষকেই হত্যা করে না; পশুপাখি, গাছপালা, ফসল সব নষ্ট করে বিনা কারণে, হিংসা ও লোভে। মানুষ যে কতটা নির্মম, সহিংস ও বিবেকহীন হতে পারে এর বহু প্রমাণ আমরা পেয়েছি।

কতটা নির্মম ও অশিক্ষিত হলে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিলুপ্তপ্রায় শুশুক ধরে ভিডিও প্রকাশ করতে পারে। ভিডিওটা পুরো দেখা যায় না। মৃত শুশুকটিকে দেখে মনখারাপ হয়ে গেল। ভিডিওটিতে এক ব্যক্তি কাঁধে একটি মৃত শুশুক নিয়ে দৌড়ে এসে বলেন- ‘পাইছি রে পাইছি, এইবার পদ্মা নদীতে আইসা সব ইলিশ খায়া ফেলছে। মানুষজন কোনো ইলিশ পাইতেছে না। তাই ধরিয়া আনছি।’

ওইটা করে সেই লোক মনে করলো খুব মজার কিছু করেছে। মৃত শুশুকটি নিয়ে ভিডিও করে সে যে একটি অপরাধ করেছে এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এই বিষয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। লোকটা এর আগেও নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী ধরে তৈরি করা একাধিক ভিডিও পোস্ট করেছে।

শুশুক খুব সুন্দর, আনন্দপ্রিয় স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী। এটি ডলফিনের মতো দেখতে এবং মূলত মিঠা পানিতে বাস করে। বাংলাদেশে এটি ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২’-এর আওতায় সংরক্ষিত প্রজাতি। এই প্রাণী হত্যা, আটক বা বিক্রি আইনত দণ্ডনীয়।

বছরখানেক আগে বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষকের তোলা নিঝুম দ্বীপের একটি ছবি দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। ছবিতে দেখলাম, একটি ডলফিনকে দুইটি বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে করেছিলাম কোনো কাল্পনিক ছবি। পরে জানতে পারলাম- না, এটা কোনো কাল্পনিক দৃশ্য নয়, একেবারেই সত্যি।

সেই গবেষক জানালেন, এলাকাবাসী এই ডলফিনটিকে ধরে দুইটা বাঁশে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে, যেন ডলফিনটির শরীর থেকে তেল জমা হয় নিচে রাখা পাত্রে। আমার জীবনে এত কষ্টকর ছবি আর দেখিনি। অথচ এই নিঝুম দ্বীপকে ডলফিন ও শুশুকের জন্য অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র বা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বলেই জানি। এরপরও সেই তেল সংগ্রহের জন্য ডলফিন ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বিশ্বাস ডলফিনের তেল দিয়ে নারীদের রোগ সারানোর ওষুধ বানানো যায়। ভিত্তিহীন একটি ধারণার উপর বিশ্বাস করে একশ্রেণীর বর্বর মানুষ এই নৃশংস কাজটি চালিয়েই যাচ্ছে।

সেদিন পত্রিকায় দেখলাম একজন সরকারি কর্মকর্তা অবাধে পাখি শিকার করে আসছেন কয়েক বছর ধরে। কেউ দেখার নেই। তার বিরুদ্ধে কোনো একশনও নেয়া হয়নি। যেসব এলাকায় পাখির বিশেষ করে পরিযায়ী পাখির বিচরণ সেখানেই পাখি শিকারিদের ভিড়। অনেকে পাখি শিকার করে উপঢৌকন বা ঘুস হিসেবে ব্যবহার করেন।

বহুবছর আগে নীল মাছরাঙা পাখির দ্বিখণ্ডিত দেহ ও তার ডিমগুলোর ছবি যখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়, তখন নিজেকেই অপরাধী মনে হয়েছিল। কারণ, আমি দর্শক হয়ে পাখির ছবিটি দেখেছি। একজন অমানুষের জন্য মা পাখিটি বহু চেষ্টা করেও তার অনাগত সন্তানদের বাঁচাতে পারেনি। মাছরাঙা পাখিটির বাসায় হামলা চালিয়ে মা পাখিটির মাথা ছিঁড়ে আলাদা করে সেই হত্যাকারী এবং মাথাটি ডিমগুলোর পাশে রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে কেবল মানুষই পারে কোনো কারণ ছাড়া নিজের নির্মম চেহারা প্রকাশ করতে।

বাংলাদেশে বুনো পাখি শিকার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। এরপরও পাখি ধরা কিংবা বাজারজাতকরণ যেন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। পাখি গবেষকরা বলছেন, মাংসে ভিন্ন স্বাদের খোঁজে অনেকেই পাখি শিকার করে থাকেন; বরং গত কয়েক বছরে বিষ প্রয়োগ করে পাখি শিকারের ঘটনা বেড়েছে। এতে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পাখি মারা সম্ভব হচ্ছে। বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে যেসব পাখি শিকার করা হয়, এর মধ্যে পরিযায়ী পাখির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

পাখি গবেষক সারোয়ার আলম দীপ জানান, পরিযায়ী পাখির মধ্যে হাঁস ও সৈকত পাখিই উল্লেখযোগ্য। সৈকত পাখির মধ্যে গুলিন্দা, বাটাম, জিরিয়া প্রজাতির পাখি রয়েছে। হাঁসের মধ্যে রয়েছে ল্যাঞ্জা হাঁস, পিয়ং হাঁস, ভূতিয়া হাঁস, নীল-শির হাঁস, গিরিয়া, চখা-চখি উল্লেখযোগ্য। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও দেশী বক, ডাহুক, ঘুঘু, হরিতালের মতো দেশী বুনো পাখিও শিকার করা হয় (বিবিসি বাংলা)।

খবরে দেখছি হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা, বাইক্যার বিল ও চলনবিলে প্রচুর পাখি আসে শীতকালে। এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি শিকারও করা হয়। এখানে পাখি শিকারে বিষ প্রয়োগ করা হয়। ধান খায় বলে গ্রামে-গঞ্জেও বিষ দিয়ে পাখি মারা হয় শালিক, টিয়া, ঘুঘু। এর মধ্যে অনেক বিরল প্রজাতির পাখিও রয়েছে।

মানুষ কেন পাখি মারে? শৌখিন মানুষ দলবেঁধে পাখি শিকারে নামে। ভিন্ন স্বাদের মাংসের কারণেই পাখি মারা হয়। হোটেলগুলো এইসব পাখি কেনে এবং দাম দিয়ে বিক্রি করে। অনেকে এই পাখি শিকার ও পাখির মাংস খাওয়াটাকে স্ট্যাটাস বলে মনে করে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে পাখি অবমুক্ত করা হলেও, অপরাধীদের টুকটাক বিচার হলেও পাখি বিশারদরা বলছেন, যে পরিমাণ অপরাধের ঘটনা কর্তৃপক্ষের হিসাবে উঠে আসে তা মোট সংঘটিত অপরাধের এক দশমাংশেরও কম।

পথে কুকুর ও বিড়ালদের প্রতি অত্যাচার, নির্যাতনের কাহিনি আমরা সব সময় দেখছি। কুকুর বিড়ালকে পিটিয়ে মারা, গায়ে গরম পানি ঢেলে দেয়া, বিষ দিয়ে হত্যা করা, হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা, চোখ তুলে নেয়া খুব পরিচিত ঘটনা। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজধানীর ধানমন্ডি লেক ও এর আশপাশের এলাকা থেকে চারটি বিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে- যেগুলোর একটিরও চোখ নেই। আর ওই ঘটনাকে কোনো দুর্ঘটনা নয় বলেই মনে করছেন প্রাণিগুলোকে উদ্ধার ও পরিচর্যার দায়িত্ব নেওয়া ব্যক্তিরা। কিছু পশুপ্রেমী মানুষ এগুলোকে সেবা করছে। কিন্তু পথেপ্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো বিড়ালগুলো চিরতরে অন্ধ হয়ে গেল। এরা কার কী অসুবিধা করেছিল আমরা জানি না। কারা এই ভয়াবহ অপরাধ করছে তা খুঁজে বের করা দরকার।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক আহমেদ হেলালের মতে, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা কনডাক্ট ডিসঅর্ডার থেকে মানুষ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। তিনি বলেন, সাইকোপ্যাথ শব্দটা কমন টার্ম। মানসিক স্বাস্থ্যের জায়গাটাতে এই শব্দ ব্যবহার না করে আমরা দুটো শব্দ ব্যবহার করি। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যদি কনডাক্ট ডিসঅর্ডার থাকে, তখন তারা পশু-পাখিদের প্রতি নির্দয় হয় এবং আঘাত করে। আঘাত করে তারা হয়তো এক ধরনের গ্র্যাটিফিকেশন বা তৃপ্তি পায়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখহীন বিড়ালের ছবি ছড়িয়ে পড়লে অনেকে ক্ষোভ, ঘৃণা ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বগুড়ার একটি গ্রামে মাছ খাওয়ার অপরাধে এক বিড়ালকে গলা কেটে হত্যা করেছে এক নারী। নিজের মুখে এই হত্যার কথা স্বীকার করছে সে। বিড়াল রান্না করা মাছ খেয়েছে বলে সে বিড়ালটিকে মেরে ফেলেছে, তার সেই স্বীকারোক্তি ভাইরালও হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

একটি সমাজে পিটিয়ে মারা বা জবাই করে হত্যা করার প্রচলনটা খুব খারাপ। আজ যারা কুকুর ক্ষতি করেছে বলে তাকে পিটিয়ে মারছে, কাল একজন মানুষ ক্ষতি করলে যে তাকে পিটিয়ে বা গলাটিপে মারবে না, তাতো নয়। ‘পিটিয়ে হত্যা’ এক ধরনের ভয়াবহ প্রবণতা। এই প্রবণতা আমাদের সমাজে দিন দিন বাড়ছে।

এ কথা আগেও লিখেছি যে, মানুষের প্রতি মানুষের ‘ভায়োলেন্স’ বা সহিংসতার সূত্রপাত হয় পশুপাখির প্রতি ‘ভায়োলেন্স’ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই একটা প্রতিবেদনে বলেছিল, তাদের দেশে অধিকাংশ সিরিয়াল কিলারদের ‘অ্যানিমেল অ্যাবিউজ’ করার ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ আছে। যদি ছোটোবেলা থেকে প্রাণীদের ওপর নির্যাতন করার প্রবণতা কারো থাকে এবং কেউ যদি এ নিয়ে শিশুকে সাবধান না করে, তাহলে তারা বড় হয়ে মানুষের প্রতিও অমানবিক আচরণ করে থাকে। বাংলাদেশেও অপরাধীদের সাইকোলজি নিয়ে গবেষণা করলে, এরকমই ফলাফল বেরিয়ে আসবে।

পশুপাখি, গাছপালা মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। অথচ আমরা অনেকেই জীবজগতকে ভালোবাসতে শিখিনি। এই একই কারণে মানুষকেও ঠিকমতো ভালোবাসতে পারিনি। আমাদের সমাজে ছোটোবেলা থেকে মানুষ, গাছপালা ও পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার কথা শেখানো হয় না। জীবের প্রতি দয়ার কথা আমাদের সেভাবে শেখানো হয় না বলেই অসংখ্য নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটছে মানব সমাজে এবং প্রকৃতিতে।

চোরা শিকারিদের কথা বলছি না। কারণ তারা ব্যবসার জন্য পশুপাখি হত্যা করে এবং চিহ্নিত অপরাধী। কিন্তু সেই তরুণ- যারা টিলার ওপর আশ্রয় নেওয়া পশুগুলোকে মারলো, যারা বন্যার সময় ঘরে আশ্রয় নেয়া হরিণটিকে খেয়ে ফেললো, যারা গন্ধগোকুল মাকে মেরে ফেলল, যারা কুকুরের হাত-পা ভেঙে দেয়, বিড়ালকে দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়, বিড়ালের চোখ তুলে ফেলে, বিষ খাইয়ে মাছ, বানর ও পাখি মেরে ফেলে- তরা সবাই খুনি। আজকে পশুপাখি খুন করছে, কালকে মানুষ খুন করবে এবং করেও।

এই চরম ভালোবাসাহীন পরিবেশেও আমরা দেখি মেকানিক সাত্তার ও বেজির বন্ধুত্ব। তিন বছর ধরে বেজিটিকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবেসে বড় করেছেন আব্দুল সাত্তার। নিজের সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও বেজিটিকে মাছ, মাংস, রুটি, কলা খেতে দেন। বেজিটি চারিদিকে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায়, বাজারের সব দোকানকে ইদুঁর মুক্ত রাখে, সাপের ভয় থেকেও দূরে রাখে মানুষকে। আজকে যে প্রকৃতি বিরূপ হয়ে উঠেছে আমাদের প্রতি, তা মানুষের অপকর্মেরই ফল। বিশ্বাস করতে চেষ্টা করি, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’।

লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/ কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

প্রকৃতিতে বন্ধুত্বের ডাক: মানুষ আর পশুর মেলবন্ধন

আপডেট সময় : ০৯:২১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

শাহানা হুদা রঞ্জনা

অসংখ্য মনখারাপ করা খবরের মধ্যে কিছু খবর পড়লে মনটা ভালো হয়ে যায়। যেমন- সেদিন দেখলাম গাজীপুরে মানুষ ও শিয়ালের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিরল বন্ধুত্ব। নাম ধরে ডাকলেই জঙ্গল থেকে ছুটে আসে ‘লালু’ নামের শিয়ালটি। এক বছরের বেশি বয়স লালুর। সে রান্না করা ভাত, তরকারি, মাংস, পাউরুটি, বিস্কুট– সবই খায়। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায় গিয়াস উদ্দিনের উঠোনে কিংবা ঘরে। মাঝে মাঝে বনে গেলেও ‘লালু’ ডাক শুনলেই দৌড়ে ফিরে আসে।

কী অদ্ভুত ভালোবাসা গড়ে উঠেছে বন্য শিয়াল ও মানুষের মধ্যে। প্রায় এক বছর আগে বনে অসহায় অবস্থায় সদ্য চোখফোঁটা একটি শিয়ালছানাটিকে পেয়েছিলেন এক কৃষক। “লালুকে ছোটোবেলা থেকে পালছি। এখন সে আমার পরিবারের অংশ। খেতে বসলে পাশে থাকে, কাজ করতে গেলে পিছু নেয়।” শিয়াল সাধারণত বন্য প্রাণী বলে ঘরে পালন ঝুঁকিপূর্ণ। তবে পর্যাপ্ত খাদ্য ও যত্ন পেলে এ ধরনের সহাবস্থান সম্ভব।”

এদিকে বাউফলে দোকানি হেমায়েত উদ্দিনের কাছে ফিরে এসেছে তার পালিত সেই সাদা বকটি। এর দুইদিন আগে বন বিভাগের কর্মকর্তারা নুরাইনপুর বাজার-সংলগ্ন ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত একটি গাছে বকটি অবমুক্ত করেন। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পর থেকেই বকটি ছিল নীরব ও নিস্তেজ। খাবার না খেয়ে একাকী সময় কাটাচ্ছিল সে। অবশেষে দু-দিন পর নিজের প্রিয় মানুষ হেমায়েতের কাছে ফিরে আসে।

প্রায় চার মাস আগে ঝড়ের সময় নুরাইনপুর বাজার-সংলগ্ন খানবাড়ির একটি গাছ থেকে বকের ছানাটি পড়ে যায়। তখন একটি গুঁইসাপ সেটিকে আক্রমণ করলে স্থানীয় ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন সেটিকে উদ্ধার করেন। এরপর তিনি নিজের সন্তানের মতো যত্ন নিয়ে ছানাটিকে বড় করে তোলেন।

যেখানে ভালোবাসা দিয়ে বনের প্রাণীকে পোষ মানিয়ে নিজের কাছে রাখা যায়; সেখানে মানুষ মানুষকে হত্যা করে, আঘাত করে, ক্ষতি করে, সম্পদ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। মানুষ শুধু মানুষকেই হত্যা করে না; পশুপাখি, গাছপালা, ফসল সব নষ্ট করে বিনা কারণে, হিংসা ও লোভে। মানুষ যে কতটা নির্মম, সহিংস ও বিবেকহীন হতে পারে এর বহু প্রমাণ আমরা পেয়েছি।

কতটা নির্মম ও অশিক্ষিত হলে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিলুপ্তপ্রায় শুশুক ধরে ভিডিও প্রকাশ করতে পারে। ভিডিওটা পুরো দেখা যায় না। মৃত শুশুকটিকে দেখে মনখারাপ হয়ে গেল। ভিডিওটিতে এক ব্যক্তি কাঁধে একটি মৃত শুশুক নিয়ে দৌড়ে এসে বলেন- ‘পাইছি রে পাইছি, এইবার পদ্মা নদীতে আইসা সব ইলিশ খায়া ফেলছে। মানুষজন কোনো ইলিশ পাইতেছে না। তাই ধরিয়া আনছি।’

ওইটা করে সেই লোক মনে করলো খুব মজার কিছু করেছে। মৃত শুশুকটি নিয়ে ভিডিও করে সে যে একটি অপরাধ করেছে এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এই বিষয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। লোকটা এর আগেও নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী ধরে তৈরি করা একাধিক ভিডিও পোস্ট করেছে।

শুশুক খুব সুন্দর, আনন্দপ্রিয় স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী। এটি ডলফিনের মতো দেখতে এবং মূলত মিঠা পানিতে বাস করে। বাংলাদেশে এটি ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২’-এর আওতায় সংরক্ষিত প্রজাতি। এই প্রাণী হত্যা, আটক বা বিক্রি আইনত দণ্ডনীয়।

বছরখানেক আগে বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষকের তোলা নিঝুম দ্বীপের একটি ছবি দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। ছবিতে দেখলাম, একটি ডলফিনকে দুইটি বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে করেছিলাম কোনো কাল্পনিক ছবি। পরে জানতে পারলাম- না, এটা কোনো কাল্পনিক দৃশ্য নয়, একেবারেই সত্যি।

সেই গবেষক জানালেন, এলাকাবাসী এই ডলফিনটিকে ধরে দুইটা বাঁশে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে, যেন ডলফিনটির শরীর থেকে তেল জমা হয় নিচে রাখা পাত্রে। আমার জীবনে এত কষ্টকর ছবি আর দেখিনি। অথচ এই নিঝুম দ্বীপকে ডলফিন ও শুশুকের জন্য অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র বা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বলেই জানি। এরপরও সেই তেল সংগ্রহের জন্য ডলফিন ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বিশ্বাস ডলফিনের তেল দিয়ে নারীদের রোগ সারানোর ওষুধ বানানো যায়। ভিত্তিহীন একটি ধারণার উপর বিশ্বাস করে একশ্রেণীর বর্বর মানুষ এই নৃশংস কাজটি চালিয়েই যাচ্ছে।

সেদিন পত্রিকায় দেখলাম একজন সরকারি কর্মকর্তা অবাধে পাখি শিকার করে আসছেন কয়েক বছর ধরে। কেউ দেখার নেই। তার বিরুদ্ধে কোনো একশনও নেয়া হয়নি। যেসব এলাকায় পাখির বিশেষ করে পরিযায়ী পাখির বিচরণ সেখানেই পাখি শিকারিদের ভিড়। অনেকে পাখি শিকার করে উপঢৌকন বা ঘুস হিসেবে ব্যবহার করেন।

বহুবছর আগে নীল মাছরাঙা পাখির দ্বিখণ্ডিত দেহ ও তার ডিমগুলোর ছবি যখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়, তখন নিজেকেই অপরাধী মনে হয়েছিল। কারণ, আমি দর্শক হয়ে পাখির ছবিটি দেখেছি। একজন অমানুষের জন্য মা পাখিটি বহু চেষ্টা করেও তার অনাগত সন্তানদের বাঁচাতে পারেনি। মাছরাঙা পাখিটির বাসায় হামলা চালিয়ে মা পাখিটির মাথা ছিঁড়ে আলাদা করে সেই হত্যাকারী এবং মাথাটি ডিমগুলোর পাশে রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে কেবল মানুষই পারে কোনো কারণ ছাড়া নিজের নির্মম চেহারা প্রকাশ করতে।

বাংলাদেশে বুনো পাখি শিকার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। এরপরও পাখি ধরা কিংবা বাজারজাতকরণ যেন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। পাখি গবেষকরা বলছেন, মাংসে ভিন্ন স্বাদের খোঁজে অনেকেই পাখি শিকার করে থাকেন; বরং গত কয়েক বছরে বিষ প্রয়োগ করে পাখি শিকারের ঘটনা বেড়েছে। এতে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পাখি মারা সম্ভব হচ্ছে। বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে যেসব পাখি শিকার করা হয়, এর মধ্যে পরিযায়ী পাখির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

পাখি গবেষক সারোয়ার আলম দীপ জানান, পরিযায়ী পাখির মধ্যে হাঁস ও সৈকত পাখিই উল্লেখযোগ্য। সৈকত পাখির মধ্যে গুলিন্দা, বাটাম, জিরিয়া প্রজাতির পাখি রয়েছে। হাঁসের মধ্যে রয়েছে ল্যাঞ্জা হাঁস, পিয়ং হাঁস, ভূতিয়া হাঁস, নীল-শির হাঁস, গিরিয়া, চখা-চখি উল্লেখযোগ্য। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও দেশী বক, ডাহুক, ঘুঘু, হরিতালের মতো দেশী বুনো পাখিও শিকার করা হয় (বিবিসি বাংলা)।

খবরে দেখছি হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা, বাইক্যার বিল ও চলনবিলে প্রচুর পাখি আসে শীতকালে। এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি শিকারও করা হয়। এখানে পাখি শিকারে বিষ প্রয়োগ করা হয়। ধান খায় বলে গ্রামে-গঞ্জেও বিষ দিয়ে পাখি মারা হয় শালিক, টিয়া, ঘুঘু। এর মধ্যে অনেক বিরল প্রজাতির পাখিও রয়েছে।

মানুষ কেন পাখি মারে? শৌখিন মানুষ দলবেঁধে পাখি শিকারে নামে। ভিন্ন স্বাদের মাংসের কারণেই পাখি মারা হয়। হোটেলগুলো এইসব পাখি কেনে এবং দাম দিয়ে বিক্রি করে। অনেকে এই পাখি শিকার ও পাখির মাংস খাওয়াটাকে স্ট্যাটাস বলে মনে করে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে পাখি অবমুক্ত করা হলেও, অপরাধীদের টুকটাক বিচার হলেও পাখি বিশারদরা বলছেন, যে পরিমাণ অপরাধের ঘটনা কর্তৃপক্ষের হিসাবে উঠে আসে তা মোট সংঘটিত অপরাধের এক দশমাংশেরও কম।

পথে কুকুর ও বিড়ালদের প্রতি অত্যাচার, নির্যাতনের কাহিনি আমরা সব সময় দেখছি। কুকুর বিড়ালকে পিটিয়ে মারা, গায়ে গরম পানি ঢেলে দেয়া, বিষ দিয়ে হত্যা করা, হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা, চোখ তুলে নেয়া খুব পরিচিত ঘটনা। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজধানীর ধানমন্ডি লেক ও এর আশপাশের এলাকা থেকে চারটি বিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে- যেগুলোর একটিরও চোখ নেই। আর ওই ঘটনাকে কোনো দুর্ঘটনা নয় বলেই মনে করছেন প্রাণিগুলোকে উদ্ধার ও পরিচর্যার দায়িত্ব নেওয়া ব্যক্তিরা। কিছু পশুপ্রেমী মানুষ এগুলোকে সেবা করছে। কিন্তু পথেপ্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো বিড়ালগুলো চিরতরে অন্ধ হয়ে গেল। এরা কার কী অসুবিধা করেছিল আমরা জানি না। কারা এই ভয়াবহ অপরাধ করছে তা খুঁজে বের করা দরকার।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক আহমেদ হেলালের মতে, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা কনডাক্ট ডিসঅর্ডার থেকে মানুষ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। তিনি বলেন, সাইকোপ্যাথ শব্দটা কমন টার্ম। মানসিক স্বাস্থ্যের জায়গাটাতে এই শব্দ ব্যবহার না করে আমরা দুটো শব্দ ব্যবহার করি। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যদি কনডাক্ট ডিসঅর্ডার থাকে, তখন তারা পশু-পাখিদের প্রতি নির্দয় হয় এবং আঘাত করে। আঘাত করে তারা হয়তো এক ধরনের গ্র্যাটিফিকেশন বা তৃপ্তি পায়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখহীন বিড়ালের ছবি ছড়িয়ে পড়লে অনেকে ক্ষোভ, ঘৃণা ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বগুড়ার একটি গ্রামে মাছ খাওয়ার অপরাধে এক বিড়ালকে গলা কেটে হত্যা করেছে এক নারী। নিজের মুখে এই হত্যার কথা স্বীকার করছে সে। বিড়াল রান্না করা মাছ খেয়েছে বলে সে বিড়ালটিকে মেরে ফেলেছে, তার সেই স্বীকারোক্তি ভাইরালও হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

একটি সমাজে পিটিয়ে মারা বা জবাই করে হত্যা করার প্রচলনটা খুব খারাপ। আজ যারা কুকুর ক্ষতি করেছে বলে তাকে পিটিয়ে মারছে, কাল একজন মানুষ ক্ষতি করলে যে তাকে পিটিয়ে বা গলাটিপে মারবে না, তাতো নয়। ‘পিটিয়ে হত্যা’ এক ধরনের ভয়াবহ প্রবণতা। এই প্রবণতা আমাদের সমাজে দিন দিন বাড়ছে।

এ কথা আগেও লিখেছি যে, মানুষের প্রতি মানুষের ‘ভায়োলেন্স’ বা সহিংসতার সূত্রপাত হয় পশুপাখির প্রতি ‘ভায়োলেন্স’ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই একটা প্রতিবেদনে বলেছিল, তাদের দেশে অধিকাংশ সিরিয়াল কিলারদের ‘অ্যানিমেল অ্যাবিউজ’ করার ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ আছে। যদি ছোটোবেলা থেকে প্রাণীদের ওপর নির্যাতন করার প্রবণতা কারো থাকে এবং কেউ যদি এ নিয়ে শিশুকে সাবধান না করে, তাহলে তারা বড় হয়ে মানুষের প্রতিও অমানবিক আচরণ করে থাকে। বাংলাদেশেও অপরাধীদের সাইকোলজি নিয়ে গবেষণা করলে, এরকমই ফলাফল বেরিয়ে আসবে।

পশুপাখি, গাছপালা মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। অথচ আমরা অনেকেই জীবজগতকে ভালোবাসতে শিখিনি। এই একই কারণে মানুষকেও ঠিকমতো ভালোবাসতে পারিনি। আমাদের সমাজে ছোটোবেলা থেকে মানুষ, গাছপালা ও পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার কথা শেখানো হয় না। জীবের প্রতি দয়ার কথা আমাদের সেভাবে শেখানো হয় না বলেই অসংখ্য নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটছে মানব সমাজে এবং প্রকৃতিতে।

চোরা শিকারিদের কথা বলছি না। কারণ তারা ব্যবসার জন্য পশুপাখি হত্যা করে এবং চিহ্নিত অপরাধী। কিন্তু সেই তরুণ- যারা টিলার ওপর আশ্রয় নেওয়া পশুগুলোকে মারলো, যারা বন্যার সময় ঘরে আশ্রয় নেয়া হরিণটিকে খেয়ে ফেললো, যারা গন্ধগোকুল মাকে মেরে ফেলল, যারা কুকুরের হাত-পা ভেঙে দেয়, বিড়ালকে দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়, বিড়ালের চোখ তুলে ফেলে, বিষ খাইয়ে মাছ, বানর ও পাখি মেরে ফেলে- তরা সবাই খুনি। আজকে পশুপাখি খুন করছে, কালকে মানুষ খুন করবে এবং করেও।

এই চরম ভালোবাসাহীন পরিবেশেও আমরা দেখি মেকানিক সাত্তার ও বেজির বন্ধুত্ব। তিন বছর ধরে বেজিটিকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবেসে বড় করেছেন আব্দুল সাত্তার। নিজের সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও বেজিটিকে মাছ, মাংস, রুটি, কলা খেতে দেন। বেজিটি চারিদিকে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায়, বাজারের সব দোকানকে ইদুঁর মুক্ত রাখে, সাপের ভয় থেকেও দূরে রাখে মানুষকে। আজকে যে প্রকৃতি বিরূপ হয়ে উঠেছে আমাদের প্রতি, তা মানুষের অপকর্মেরই ফল। বিশ্বাস করতে চেষ্টা করি, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’।

লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/ কেএমএএ