অর্থনৈতিক ডেস্ক: দেশের তৃতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য পেট্রোবাংলাকে আহ্বান জানিয়েছে সামিট গ্রুপ। তারা বলেছে, এফএসআরইউ প্রকল্প বাতিল কিংবা বিলম্ব দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
গত বছরের ৩০ মার্চ সামিটের সঙ্গে দ্বিতীয় এফএসআরইউ প্রকল্পের জন্য একটি টার্মিনাল ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট (টিইউএ) ও আরেকটি ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (আইএ) স্বাক্ষর করে সরকার ও পেট্রোবাংলা।
তবে একই বছরের ৭ অক্টোবর পেট্রোবাংলা জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের এ প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পেট্রোবাংলা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, এসএলএনজি ২-এর সঙ্গে পূর্বে স্বাক্ষরিত একটি টার্মিনাল ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট (টিইউএ) নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার জারি করা সবশেষ এই নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, পূর্বনির্ধারিত ফরম্যাট অনুসরণ না করে সামিট এলএনজি ২-এর পরিবর্তে তার নিয়ন্ত্রণকারী স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, সামিট কর্পোরেশন লিমিটেড পারফরম্যান্স বন্ডটি (পিবি) জমা দিয়েছে। উপরন্তু এটি ৯০ দিনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জমা দেওয়া হয়নি। এর জবাবে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সিঙ্গাপুরের খ্যাতনামা আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হারবার্ট স্মিথ ফ্রিহিলস এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস জানায়, ইতোপূর্বে পেট্রোবাংলা পারফরম্যান্স বন্ড ব্যাংক গ্যারান্টি আকারে গ্রহণ করেছে, যার নিশ্চয়তা কোনো আকারেই কম নয়। তবুও, সৌহার্দ্যের অংশ হিসেবে পূর্বের পারফরম্যান্স বন্ডের পরিবর্তে এসএলএনজি ২ আবার তার নিজ নামে একটি ব্যাংক গ্যারান্টি (আকারে পারফরম্যান্স বন্ড) জমা দিতে প্রস্তুত।
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, টার্মিনাল ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট ৩০ দিনের একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা প্রদান করে, যার মধ্যে কোনো শর্তের ব্যত্যয় হলে পেট্রোবাংলা সেই বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারবে। অথচ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পেট্রোবাংলা কোনো আপত্তি তোলেনি। সামিট আইনজীবীদের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে যে, পেট্রোবাংলা যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাতিল করেছে তা চুক্তির পূর্বনির্ধারিত শর্তাবলির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। তারা জানিয়েছেন, টার্মিনাল ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী কোনো শর্ত ব্যত্যয় হলে, উভয় পক্ষের মধ্যে যেকোনো পক্ষ নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে সেই বিষয়ে লিখিত নোটিশ দিতে পারত। কিন্তু পেট্রোবাংলা সেটি করেনি। ফলে এই কারণবশত চুক্তি বাতিলের অধিকার পেট্রোবাংলার আর নেই।
পারফরম্যান্স বন্ড জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা ছিল গত বছরের ২৮ জুন । সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সুস্পষ্ট করে জানাতে চায়, ২০২৪ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ওইদিন ব্যাংক বন্ধ ছিল আর সেই কারণে পারফরম্যান্স বন্ডটি পরবর্তী ব্যাংকিং দিবস অর্থাৎ ৩০ জুন তারিখে জমা দেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী, কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত দিন যদি সংশ্লিষ্ট অফিস বন্ধ থাকে, তাহলে পরবর্তী কর্মদিবসে ওই কাজটি করা হলে, কাজটি যথাযথভাবে সম্পাদন হয়েছে বলে গণ্য করা হয়।
বাস্তবায়িত হলে এটি হতো সামিট গ্রুপের দ্বিতীয় এফএসআরইউ প্রকল্প, যা দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট রিগ্যাসিফিকেশন করতে সক্ষম। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) অঙ্গীকার ছিল।