প্রত্যাশা ডেস্ক: দেশে প্রতি বছর ৬ লাখ মানুষ নানাভাবে দগ্ধ হয়ে থাকে। বিপুলসংখ্যক এই পোড়া রোগীর একমাত্র ভরসা রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়া রোগীকে তাৎক্ষণিক বাঁচাতে স্কিনের প্রয়োজন পড়ে; যা স্কিন ব্যাংকে সংরক্ষিত স্কিন দিয়ে সহজে করা সম্ভব। আমাদের স্কিন ব্যাংকে অনেক বেশি স্কিন সংরক্ষিত থাকলে ৫০ শতাংশ পোড়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব হতো। ফলে পোড়া রোগীর জন্যে স্কিন ব্যাংকের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে ব্ল্যাড ব্যাংক, টিস্যু ব্যাংক, আই ব্যাংকের মতোই চালু হয়েছে স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম। সম্প্রতি ওই ব্যাংকের উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইদুল ইসলাম। ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউটের ‘স্কিন ব্যাংক’-এর কার্যক্রম চালু করতে সহযোগিতা করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটাল।
চার স্কিনদাতার চামড়ায় কেমন সুফল মিলল, জানতে হাসপাতালের ১০০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে কথা হয় শিশু মরিয়ম (৮) এর মায়ের সঙ্গে। শিশুটি ৬ ডিসেম্বর রাতে গ্যাসের চুলায় আগুন পোহাতে গিয়ে জামায় আগুন ধরে, সেখান থেকে শরীরের পেট-পিঠ, পা পুড়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শিশুটি ‘এইচডিও’ তে ছিল ২৮ দিন। স্কিন ব্যাংকের দ্বায়িত্বে থাকা নার্স ইন চার্জ তামান্না সুলতানা বলেন, শিশুটি ২৮ দিন ‘এইচডিও’তে ছিল মানে সে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় ছিল। তার সেপটিসেমিয়া ছিল, ইনফেকশন ছিল। স্কিন দেওয়ার পর শিশুটি সুস্থ বোধ করছে, ফলে তাকে এইচডিও থেকে বেডে দেওয়া হয়েছে।
অন্য একটি শিশুরোগী দুই বছরের হামিদা বাইরের মানুষ দেখলেই অঝোরে কাঁদছে। উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে শিশুটি। চাঁদপুরের নারায়ণপুর হামিদার গ্রামের বাড়ি। শিশুটির মা রাবেয়া বেবি বলেন, বড় ভাইয়ের গোসলের পানি ছিল গামলায়, সেখানে হামিদা হঠাৎ বসে পড়ে। এতে হামিদার বুক-পিঠ, উরু পুড়ে যায়। নার্স তামান্না সুলতানা জানান, শিশুটির শরীরে ৩৫২.৫ সে.মি. স্কয়ার চামড়া লাগানো হয়। এখন শিশুটির অবস্থা অনেকটা ভালো।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, অন্য অঙ্গ যেভাবে সংরক্ষণ করে রোগীর সুরক্ষার কাজে ব্যবহার হয়। ব্লাড ব্যাংক, কর্নিয়া ব্যাংকের মতোই ‘স্কিন ব্যাংক’। পোড়া রোগীদের সুরক্ষা দিতে মূলত এই স্কিনের প্রয়োজন পড়ে। আমরা রোগীর শরীর থেকেই মূলত স্কিন নিয়ে তার শরীরের পোড়া অংশ ঢেকে দেওয়ার কাজটা করতাম। কিন্তু অনেক রোগী এমন মুমূর্ষু অবস্থায় আসে যে, তখন ওই রোগীর শরীর থেকে স্কিন নেওয়া সম্ভব হয় না বা রোগীর শরীরের বেশির ভাগ অংশ পোড়া থাকে। ফলে তার শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব হয় না। তখন যদি আমাদের স্কিন ব্যাংকে চামড়া সংরক্ষিত থাকলে সেই চামড়া ব্যবহার করে আমরা রোগীকে অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা করতে পারি।
ডা. শাওন জানান, চামড়া দিয়ে রোগীর পোড়া অংশ ঢেকে দিতে পারলে, রোগীর শরীর থেকে ফ্লুয়িড, রক্ত বেড়িয়ে যায় না। ফলে রোগী মৃত্যুঝুঁকি ও ইনফেকশন ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তবে রোগী অন্য অনেক কারণে মারা যেতে পারে। প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে পোড়া রোগীকে স্কিন দিয়ে বাঁচানো সম্ভব। আমাদের দেশে এটিই একমাত্র স্কিন ব্যাংক। চামড়া সংরক্ষণে মাইনাস ৯ ডিগ্রি সে. গ্রে. সংরক্ষণ করতে হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে সিং হেলেথর সহায়তায় স্কিন ব্যাংকের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে আমরা ছয় জন চিকিৎসক ও দুই জন নার্স সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করি। এই আট জনই বাংলাদেশে আরও ১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেই। ঊরু, পা ও পিঠ থেকে চামড়া সংরক্ষণ করা যায়। মৃতব্যক্তি তার শরীরের অন্য অঙ্গ দানের মতো মরণোত্তর চামড়া দিতে পারেন। কিন্তু এখনো আমাদের দেশে সেটা হচ্ছে না। আমরা এখন লাইফ ডোনারদের কাছ থেকে চামড়া নিচ্ছি। একজন জীবিত ডোনার চামড়া দেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যেই তার স্ক্রিন আবার আগের জায়গায় ফিরে যায়। যাদের তলপেট ভারী থাকে তাদের ‘অ্যাবডোমিনো প্লাস্টি’ করে থাকি। এর মাধ্যমে আমরা চামড়া সংগ্রহ করছি।
স্কিন ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ক ও প্লাস্টিক সার্জন ডা. মাহবুব হাসান বলেন, স্কিন ডোনেটের ক্ষেত্রে আইনে কোনো বাধা নেই। একজন ব্যক্তি তার নিকটাত্মীয়কে স্কিন ডোনেট করতে পারেন। যেহেতু এটা দুই সপ্তাহের মধ্যে স্কিন আগের জায়গায় ফিরে আসে। এখন পর্যন্ত আমরা চার জনের চামড়া পেয়েছি; যারা ছিলেন ‘জীবিত স্কিনদাতা’। মরণোত্তর কর্ণিয়াদান, কিডনিদানে