ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘পোষ্য কোটা’ নিয়ে রাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ধস্তাধস্তি, উত্তেজনা

  • আপডেট সময় : ০৯:২৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

শনিবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন -ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে বসেন নয় শিক্ষার্থী। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাইন উদ্দিন শনিবার আড়াইটায় প্রশাসনিক ভবনে আসলে শিক্ষার্থীরা গাড়ি আটকে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। শিক্ষার্থীরা এ সময় উপ-উপাচার্যের গাড়ির উপরে টাকা ছুড়ে দেন। পরে উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দিন ও প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান তার বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনে তালা দেয়। এ সময় উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীরা সামনে দাঁড়িয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকরা বিক্ষোভ উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তারা এগিয়ে যেতে চাইলে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ে যান। তাদের ডিঙ্গিয়ে শিক্ষকরা জুবেরী ভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দিনসহ শিক্ষকদের আটকে রেখে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় ‘এক দুই তিন চার, সব সালারা বাটপার’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, পোষ্য কোটা নো মোর’, ‘কোটা না ভিক্ষা, ভিক্ষা ভিক্ষা’, স্লোগান দেন।

এদিকে জুবেরি ভবনের বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একত্রিত হচ্ছেন। মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীরা। প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য স্যারকে অবরুদ্ধ করে তার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে আমরা জুবেরী ভবনের লাউঞ্জে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবারও আমাদের বাধা দেয়। আমরা ফিরে গিয়ে পুনরায় আসার পর ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা আবারও বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু আমার হাতের ঘড়ি ও ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।

এর আগে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন এক শিক্ষার্থী। পরে তার সঙ্গে প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নেন। ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ পোষ্য কোটা পুনর্বহাল না করা হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকালে ভর্তি কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের শর্তসাপেক্ষে ‘পোষ্য কোটা’য় ভর্তির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে এর প্রতিবাদ জানায়।

এর আগে ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য স্থায়ীভাবে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।

১৩ আগস্ট থেকে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালসহ আট দফা দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি অংশ কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে ২৪ আগস্ট প্রশাসনের আশ্বাসে তিন দিনের অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

সানা/কেএমএএ/আপ্র/২০/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘পোষ্য কোটা’ নিয়ে রাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ধস্তাধস্তি, উত্তেজনা

আপডেট সময় : ০৯:২৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে বসেন নয় শিক্ষার্থী। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাইন উদ্দিন শনিবার আড়াইটায় প্রশাসনিক ভবনে আসলে শিক্ষার্থীরা গাড়ি আটকে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। শিক্ষার্থীরা এ সময় উপ-উপাচার্যের গাড়ির উপরে টাকা ছুড়ে দেন। পরে উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দিন ও প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান তার বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনে তালা দেয়। এ সময় উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীরা সামনে দাঁড়িয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকরা বিক্ষোভ উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তারা এগিয়ে যেতে চাইলে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ে যান। তাদের ডিঙ্গিয়ে শিক্ষকরা জুবেরী ভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দিনসহ শিক্ষকদের আটকে রেখে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় ‘এক দুই তিন চার, সব সালারা বাটপার’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, পোষ্য কোটা নো মোর’, ‘কোটা না ভিক্ষা, ভিক্ষা ভিক্ষা’, স্লোগান দেন।

এদিকে জুবেরি ভবনের বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একত্রিত হচ্ছেন। মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীরা। প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য স্যারকে অবরুদ্ধ করে তার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে আমরা জুবেরী ভবনের লাউঞ্জে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবারও আমাদের বাধা দেয়। আমরা ফিরে গিয়ে পুনরায় আসার পর ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা আবারও বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু আমার হাতের ঘড়ি ও ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।

এর আগে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন এক শিক্ষার্থী। পরে তার সঙ্গে প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নেন। ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ পোষ্য কোটা পুনর্বহাল না করা হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকালে ভর্তি কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের শর্তসাপেক্ষে ‘পোষ্য কোটা’য় ভর্তির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে এর প্রতিবাদ জানায়।

এর আগে ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য স্থায়ীভাবে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।

১৩ আগস্ট থেকে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালসহ আট দফা দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি অংশ কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে ২৪ আগস্ট প্রশাসনের আশ্বাসে তিন দিনের অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

সানা/কেএমএএ/আপ্র/২০/০৯/২০২৫