ঢাকা ১১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
সমস্যা কী, উত্তরণের উপায় কী

পেশা বদলাচ্ছেন শিক্ষকরা

  • আপডেট সময় : ০৯:২৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

প্রতিনিধিত্বকারী প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে অন্য ক্যাডারের প্রতি ঝুঁকছেন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অনেকেই। গত এক বছরে এই প্রবণতা বেড়েছে। এছাড়া বেসরকারি চাকরি ছেড়েছেন বা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বিদেশে পাড়িও জমিয়েছেন শিক্ষকদের কেউ কেউ। প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষকতার মতো একটি সম্মানজনক পেশা কেন ছাড়ছেন তারা।

আন্তক্যাডার বৈষম্য, পদোন্নতি বঞ্চনা, সম্মান-মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে অন্য ক্যাডারের প্রতি ঝুঁকছেন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পছন্দের ক্যাডার না পাওয়ার কারণেও অনেকে ক্যাডার ছাড়ছেন বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বাড়তি যোগ হয়েছে পেশাগত ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকসহ অনেক শিক্ষকই পেশা ছাড়ছেন বলে মনে করেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করার নির্দেশনা দিলেও প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্যের কারণে ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরে পর বছর। এই বঞ্চনার তালিকায় অন্যতম ছিল শিক্ষা ক্যাডার। আর সে কারণে ২০২২ সাল থেকে শিক্ষা কাডার ছেড়ে ভিন্ন ক্যাডারে যেতে থাকেন শিক্ষকরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শিক্ষকদের এই বঞ্চনা কমতে পারে- এমন সম্ভাবনার বিষয়টি সামনে উঠে এলেও বাস্তবে তা হয়নি। ফলে শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

গত এক বছরে শিক্ষকদের ওপর নানা রকম নিপীড়নের ঘটনা দেখা গেছে।
জোর করে পদ থেকে নামিয়ে দেওয়া, অপমান ও নির্যাতন।
‘মবের’ শিকার হয়েছেন অনেক শিক্ষক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত ৭ আগস্ট। গত এক বছরে শিক্ষকদের ওপর নানা রকম নিপীড়নের ঘটনা দেখা গেছে। জোর করে শিক্ষকদের পদ থেকে নামিয়ে দেওয়া, অপমান ও নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাও এই নিপীড়ন থেকে রেহাই পাননি। এ কারণেও মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে অন্য কোনো পেশায় চলে যেতে চাচ্ছেন।

যেসব কারণে শিক্ষা ক্যাডার ছাড়ছেন: আন্তক্যাডার বৈষম্য, শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা কম এবং যথাসময়ে পদোন্নতি না পাওয়া, গ্রেড-১-এর পদ কম এবং প্রথম গ্রেডে যেতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদ সোপান তৈরি না হওয়ায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ভেতরে চাপা ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। বর্তমান সরকারের সময়েও শিক্ষকদের জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই। উল্টো ‘মবের’ শিকার হয়েছেন অনেক শিক্ষক।

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের চাকরি স্থায়ী হতে চার থেকে ছয় বছর লেগে যায়। কোনো কারণে আটকে গেলে ১৬ বছর পর্যন্তও লাগে। আবার সময়মতো অনেকের পদোন্নতিও হয় না। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকদের বৈষম্য কমাতে দাবি জানালেও তা পূরণ হয়নি। ফলে এ পেশা ছেড়ে লাভজনক পেশায় চলে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। যাদের কোনো উপায় নেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই এই পেশায় থাকছেন।

কলেজ অধ্যক্ষরা অর্জিত ছুটিও পান না: সরকারি কলেজের বিদ্যমান অধ্যাপকদের পদটি চতুর্থ গ্রেডের। তবে ৫০ শতাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হতে পারেন। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধানদের পদও চতুর্থ গ্রেডের অধ্যাপক মর্যাদার।

বাড়তি কাজের চাপ: শিক্ষকরা জানান, একজন শিক্ষককে ক্লাসে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হয়। বেশি শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কারণে সব শিক্ষার্থীকে মনোযোগী করে তুলতে তাদের বেগ পেতে হয়। সমস্যা শুধু এখানেই নয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদান কর্মসূচি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন কাজে সারা বছর সম্পৃক্ত থাকেন শিক্ষকরা। অবশ্য এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ থাকে সারা বছর। আর ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিক্ষকদের নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিগত সময়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকরা এ ক্ষেত্রে যথাযথ সুবিধা ও নিরাপত্তা পান না।

সাম্প্রতিক খতিয়ান: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ৬ আগস্ট দুই জন, ১২ আগস্ট একজন, ২৫ আগস্ট একজন, ২১ আগস্ট ৬ জনসহ মোট ১০ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাকে অন্যত্র চাকরির অনুমতি দিয়ে তাদের অব্যাহতি দেয়।

সম্প্রতি শিক্ষা ক্যাডার থেকে অব্যাহতি পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন গত ৬ আগস্ট কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মো. ফেরদৌস ইসলাম। তিনি শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নেওয়ার অনুমতি পান। একই দিনে অপর একটি আদেশে মাদারীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনুমতি পান। কবি নজরুল সরকারি কলেজের আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মুহা. আব্দুল হাদী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি করার অনুমতি পান ১২ আগস্ট। অপর এক আদেশে হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. ইউসুফ আলী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদানের জন্য অনুমতি পান। একই আদেশে আরো পাঁচ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন প্রশাসন ক্যাডারে এবং বাকি চার জনের মধ্যে দুই জন সহকারী কর কমিশনার, আর দুই জন সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে যোগদানের অনুমতি পান। গত দুই মাসে অর্ধশতাধিক শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ৪৪তম এবং ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুমতি পেয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আলাদা অফিস আদেশ জারি করা হয়।

চাকরি ছেড়েছেন মাধ্যমিকের শিক্ষকরাও: বিগত আওয়ামী লীগের সময় অসন্তোষ নিয়ে চাকরি ছেড়েছেন অনেক শিক্ষক। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট অন্যত্র চাকরি ছাড়ার অব্যাহতি পেয়েছেন ১৭ জন মাধ্যমিক শিক্ষক। চাকরি ছাড়ার এই প্রবণতা এখনও আগের মতোই রয়ে গেছে। বিগত সময় চাকরি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন অনেকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও রাজধানীর একজন প্রধান শিক্ষক চাকরি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন।

সমস্যা ও উত্তরণের সুপারিশ: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডাররা সঙ্গত কারণে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছেন। কারণ শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও মর্যাদার ক্ষেত্রে আমরা তেমন কিছুই করতে পারিনি। একজন অধ্যাপক সচিবের নিচে, তাহলে আমলা যে গ্রেড বা যে পদে থাকেন, সেসব পদে যেতে শিক্ষকদেরও ইচ্ছে হবেই। মেধাবীরা যেমন এই পেশায় আসবেন না, তেমনই সুযোগ পেলেই কেউ অন্য পেশায় চলে যাবেন।’

বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের চাকরি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের একটা নির্ধারিত বেতন কাঠামো আছে, বোনাস আছে, বৈশাখী ভাতা আছে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের এই সুবিধার কিছুই আমরা দিতে পারছি না। আর সে কারণে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না মেধাবীরা। বরং শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতির উত্তরণ জরুরি। একদিকে শিক্ষকরা পেশা ছাড়ছেন, অপরদিকে বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘মব ভায়োলেন্স’। স্বভাবতই শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যদিও এটি এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক তো কাটেনি।’ শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ হচ্ছে-শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনই পদোন্নতির ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ যাতে না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া সরকারের জন্য জরুরি।

পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন শিক্ষা কমিশন করতে হবে: শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো করা জরুরি মনে করেন রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য যেতে হয় আমলাদের কাছে। তারা শিক্ষা ছুটিও পান না। তাদের অভাব-অভিযোগ দেখেন আমলারা, তাতে সমাধান পান না শিক্ষকরা। ‘পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন শিক্ষা কমিশন’ হলে শিক্ষকদের অভাব অভিযোগ দেখভাল করার পাশাপাশি তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কাজটি করা যাবে কমিশনের মাধ্যমে। এতে শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা পাবে।’

পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কমিশন করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, ‘এটি ভিন্ন আলোচনা। যখন শিক্ষা সংস্কার করা সম্ভব হবে, তখন এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে। জেনারেল ক্যাডারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এখন কেউ কমিশনে যেতে চাইবে না।’

বেতন ও মর্যাদা বাড়াতে হবে: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, ‘আন্তক্যাডার বৈষম্যের কারণে শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ তৃতীয় গ্রেড থেকে নামিয়ে অধ্যাপকদের চতুর্থ করা হলেও আমরা কেউ কিছু করতে পারিনি। ষড়যন্ত্রের কারণে সব সরকারের সময় আমরা বঞ্চিত হয়েছি।’

শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করবে শিক্ষা ক্যাডার, এমনটি চান কিনা জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, ‘অবশ্যই। এটা সবাই চায়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আমরা পারিনি। ২০০৯ সালে প্রাথমিক অধিদফতরের সব পদ দখল করে নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডাররা।’

শিক্ষা ক্যাডারদের পেশায় ধরে রাখতে এবং শিক্ষা ক্যাডারসহ শিক্ষকতা পেশা মেধাবীদের আগ্রহী করার সুপারিশ করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক। মাসুদ রানা আরো বলেন, ‘যারা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাননি, অথচ এসে পড়েছেন- তারা ছেড়ে যাচ্ছেন বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য। সে কারণে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষকদের পেশাগত ও সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে হবে।’

বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের মব সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের কেউ আক্রমণ করলে তো শিক্ষকরা পাল্টা আক্রমণ করতে পারেন না। আর সে কারণেই এমনটা ঘটছে। যা অন্য পেশার ক্ষেত্রে ঘটছে না। ইচ্ছা করলেই যখন-তখন শিক্ষকদের যা খুশি বলা যায়, সম্মান না করলেও হয়।’ এই পরিস্থিতি দূর করারও সুপারিশ করেন তিনি।

নিয়োগ পদ্ধতি ভিন্ন হতে হবে: নিয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা চান শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। সরকারের দায়িত্বশীল কাজে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষাবিদ বলেন, জেনারেল ক্যাডারদের সঙ্গে এক না করে নিয়োগ পদ্ধতি ভিন্ন করতে হব। যাতে যারা শিক্ষকতা করতে চান, তাদেরই যেন নিয়োগ দেওয়া যায়। তারা পদোন্নতি থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। ক্ষমতাবানদের আত্মীয়-স্বজনরা বছরের পর বছর ঢাকায় থাকতে পারেন। কিন্তু যোগ্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর অপছন্দের জায়গায় থাকতে বাধ্য হতে হন। বদলির ক্ষেত্রে সুষম বণ্টননীতি না থাকায় চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় তারা মফস্বলে চাকরি করেন।

সানা/আপ্র/২৭/৮/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পেশা বদলাচ্ছেন শিক্ষকরা

সমস্যা কী, উত্তরণের উপায় কী

পেশা বদলাচ্ছেন শিক্ষকরা

আপডেট সময় : ০৯:২৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে অন্য ক্যাডারের প্রতি ঝুঁকছেন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অনেকেই। গত এক বছরে এই প্রবণতা বেড়েছে। এছাড়া বেসরকারি চাকরি ছেড়েছেন বা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বিদেশে পাড়িও জমিয়েছেন শিক্ষকদের কেউ কেউ। প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষকতার মতো একটি সম্মানজনক পেশা কেন ছাড়ছেন তারা।

আন্তক্যাডার বৈষম্য, পদোন্নতি বঞ্চনা, সম্মান-মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে অন্য ক্যাডারের প্রতি ঝুঁকছেন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পছন্দের ক্যাডার না পাওয়ার কারণেও অনেকে ক্যাডার ছাড়ছেন বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বাড়তি যোগ হয়েছে পেশাগত ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকসহ অনেক শিক্ষকই পেশা ছাড়ছেন বলে মনে করেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করার নির্দেশনা দিলেও প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্যের কারণে ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরে পর বছর। এই বঞ্চনার তালিকায় অন্যতম ছিল শিক্ষা ক্যাডার। আর সে কারণে ২০২২ সাল থেকে শিক্ষা কাডার ছেড়ে ভিন্ন ক্যাডারে যেতে থাকেন শিক্ষকরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শিক্ষকদের এই বঞ্চনা কমতে পারে- এমন সম্ভাবনার বিষয়টি সামনে উঠে এলেও বাস্তবে তা হয়নি। ফলে শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

গত এক বছরে শিক্ষকদের ওপর নানা রকম নিপীড়নের ঘটনা দেখা গেছে।
জোর করে পদ থেকে নামিয়ে দেওয়া, অপমান ও নির্যাতন।
‘মবের’ শিকার হয়েছেন অনেক শিক্ষক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত ৭ আগস্ট। গত এক বছরে শিক্ষকদের ওপর নানা রকম নিপীড়নের ঘটনা দেখা গেছে। জোর করে শিক্ষকদের পদ থেকে নামিয়ে দেওয়া, অপমান ও নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাও এই নিপীড়ন থেকে রেহাই পাননি। এ কারণেও মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে অন্য কোনো পেশায় চলে যেতে চাচ্ছেন।

যেসব কারণে শিক্ষা ক্যাডার ছাড়ছেন: আন্তক্যাডার বৈষম্য, শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা কম এবং যথাসময়ে পদোন্নতি না পাওয়া, গ্রেড-১-এর পদ কম এবং প্রথম গ্রেডে যেতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদ সোপান তৈরি না হওয়ায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ভেতরে চাপা ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। বর্তমান সরকারের সময়েও শিক্ষকদের জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই। উল্টো ‘মবের’ শিকার হয়েছেন অনেক শিক্ষক।

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের চাকরি স্থায়ী হতে চার থেকে ছয় বছর লেগে যায়। কোনো কারণে আটকে গেলে ১৬ বছর পর্যন্তও লাগে। আবার সময়মতো অনেকের পদোন্নতিও হয় না। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকদের বৈষম্য কমাতে দাবি জানালেও তা পূরণ হয়নি। ফলে এ পেশা ছেড়ে লাভজনক পেশায় চলে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। যাদের কোনো উপায় নেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই এই পেশায় থাকছেন।

কলেজ অধ্যক্ষরা অর্জিত ছুটিও পান না: সরকারি কলেজের বিদ্যমান অধ্যাপকদের পদটি চতুর্থ গ্রেডের। তবে ৫০ শতাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হতে পারেন। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধানদের পদও চতুর্থ গ্রেডের অধ্যাপক মর্যাদার।

বাড়তি কাজের চাপ: শিক্ষকরা জানান, একজন শিক্ষককে ক্লাসে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হয়। বেশি শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কারণে সব শিক্ষার্থীকে মনোযোগী করে তুলতে তাদের বেগ পেতে হয়। সমস্যা শুধু এখানেই নয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদান কর্মসূচি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন কাজে সারা বছর সম্পৃক্ত থাকেন শিক্ষকরা। অবশ্য এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ থাকে সারা বছর। আর ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিক্ষকদের নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিগত সময়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকরা এ ক্ষেত্রে যথাযথ সুবিধা ও নিরাপত্তা পান না।

সাম্প্রতিক খতিয়ান: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ৬ আগস্ট দুই জন, ১২ আগস্ট একজন, ২৫ আগস্ট একজন, ২১ আগস্ট ৬ জনসহ মোট ১০ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাকে অন্যত্র চাকরির অনুমতি দিয়ে তাদের অব্যাহতি দেয়।

সম্প্রতি শিক্ষা ক্যাডার থেকে অব্যাহতি পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন গত ৬ আগস্ট কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মো. ফেরদৌস ইসলাম। তিনি শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নেওয়ার অনুমতি পান। একই দিনে অপর একটি আদেশে মাদারীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনুমতি পান। কবি নজরুল সরকারি কলেজের আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মুহা. আব্দুল হাদী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি করার অনুমতি পান ১২ আগস্ট। অপর এক আদেশে হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. ইউসুফ আলী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদানের জন্য অনুমতি পান। একই আদেশে আরো পাঁচ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন প্রশাসন ক্যাডারে এবং বাকি চার জনের মধ্যে দুই জন সহকারী কর কমিশনার, আর দুই জন সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে যোগদানের অনুমতি পান। গত দুই মাসে অর্ধশতাধিক শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ৪৪তম এবং ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুমতি পেয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আলাদা অফিস আদেশ জারি করা হয়।

চাকরি ছেড়েছেন মাধ্যমিকের শিক্ষকরাও: বিগত আওয়ামী লীগের সময় অসন্তোষ নিয়ে চাকরি ছেড়েছেন অনেক শিক্ষক। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট অন্যত্র চাকরি ছাড়ার অব্যাহতি পেয়েছেন ১৭ জন মাধ্যমিক শিক্ষক। চাকরি ছাড়ার এই প্রবণতা এখনও আগের মতোই রয়ে গেছে। বিগত সময় চাকরি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন অনেকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও রাজধানীর একজন প্রধান শিক্ষক চাকরি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন।

সমস্যা ও উত্তরণের সুপারিশ: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডাররা সঙ্গত কারণে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছেন। কারণ শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও মর্যাদার ক্ষেত্রে আমরা তেমন কিছুই করতে পারিনি। একজন অধ্যাপক সচিবের নিচে, তাহলে আমলা যে গ্রেড বা যে পদে থাকেন, সেসব পদে যেতে শিক্ষকদেরও ইচ্ছে হবেই। মেধাবীরা যেমন এই পেশায় আসবেন না, তেমনই সুযোগ পেলেই কেউ অন্য পেশায় চলে যাবেন।’

বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের চাকরি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের একটা নির্ধারিত বেতন কাঠামো আছে, বোনাস আছে, বৈশাখী ভাতা আছে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের এই সুবিধার কিছুই আমরা দিতে পারছি না। আর সে কারণে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না মেধাবীরা। বরং শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতির উত্তরণ জরুরি। একদিকে শিক্ষকরা পেশা ছাড়ছেন, অপরদিকে বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘মব ভায়োলেন্স’। স্বভাবতই শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যদিও এটি এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক তো কাটেনি।’ শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ হচ্ছে-শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনই পদোন্নতির ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ যাতে না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া সরকারের জন্য জরুরি।

পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন শিক্ষা কমিশন করতে হবে: শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো করা জরুরি মনে করেন রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য যেতে হয় আমলাদের কাছে। তারা শিক্ষা ছুটিও পান না। তাদের অভাব-অভিযোগ দেখেন আমলারা, তাতে সমাধান পান না শিক্ষকরা। ‘পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন শিক্ষা কমিশন’ হলে শিক্ষকদের অভাব অভিযোগ দেখভাল করার পাশাপাশি তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কাজটি করা যাবে কমিশনের মাধ্যমে। এতে শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা পাবে।’

পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কমিশন করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, ‘এটি ভিন্ন আলোচনা। যখন শিক্ষা সংস্কার করা সম্ভব হবে, তখন এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে। জেনারেল ক্যাডারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এখন কেউ কমিশনে যেতে চাইবে না।’

বেতন ও মর্যাদা বাড়াতে হবে: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, ‘আন্তক্যাডার বৈষম্যের কারণে শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ তৃতীয় গ্রেড থেকে নামিয়ে অধ্যাপকদের চতুর্থ করা হলেও আমরা কেউ কিছু করতে পারিনি। ষড়যন্ত্রের কারণে সব সরকারের সময় আমরা বঞ্চিত হয়েছি।’

শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করবে শিক্ষা ক্যাডার, এমনটি চান কিনা জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, ‘অবশ্যই। এটা সবাই চায়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আমরা পারিনি। ২০০৯ সালে প্রাথমিক অধিদফতরের সব পদ দখল করে নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডাররা।’

শিক্ষা ক্যাডারদের পেশায় ধরে রাখতে এবং শিক্ষা ক্যাডারসহ শিক্ষকতা পেশা মেধাবীদের আগ্রহী করার সুপারিশ করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক। মাসুদ রানা আরো বলেন, ‘যারা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাননি, অথচ এসে পড়েছেন- তারা ছেড়ে যাচ্ছেন বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য। সে কারণে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষকদের পেশাগত ও সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে হবে।’

বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের মব সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের কেউ আক্রমণ করলে তো শিক্ষকরা পাল্টা আক্রমণ করতে পারেন না। আর সে কারণেই এমনটা ঘটছে। যা অন্য পেশার ক্ষেত্রে ঘটছে না। ইচ্ছা করলেই যখন-তখন শিক্ষকদের যা খুশি বলা যায়, সম্মান না করলেও হয়।’ এই পরিস্থিতি দূর করারও সুপারিশ করেন তিনি।

নিয়োগ পদ্ধতি ভিন্ন হতে হবে: নিয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা চান শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। সরকারের দায়িত্বশীল কাজে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষাবিদ বলেন, জেনারেল ক্যাডারদের সঙ্গে এক না করে নিয়োগ পদ্ধতি ভিন্ন করতে হব। যাতে যারা শিক্ষকতা করতে চান, তাদেরই যেন নিয়োগ দেওয়া যায়। তারা পদোন্নতি থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। ক্ষমতাবানদের আত্মীয়-স্বজনরা বছরের পর বছর ঢাকায় থাকতে পারেন। কিন্তু যোগ্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর অপছন্দের জায়গায় থাকতে বাধ্য হতে হন। বদলির ক্ষেত্রে সুষম বণ্টননীতি না থাকায় চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় তারা মফস্বলে চাকরি করেন।

সানা/আপ্র/২৭/৮/২০২৫