নিজস্ব প্রতিবেদক : অনলাইন কেনাকাটায় অগ্রিম অর্থ নিয়ে গ্রাহককে দীর্ঘ সময়ে পণ্য না দেওয়ার চলমান সঙ্কটের মধ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর বড় অঙ্কের টাকাও আটকে পড়েছে ‘পেমেন্ট গেটওয়ের’ কাছে। গ্রাহকদের পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার কয়েক মাস পরও অর্থ না পাওয়ায় এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যেমন ভোগান্তিতে পড়েছে, তেমনি তাদের পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্টগুলো রয়েছে বেকায়দায়। পেমেন্ট গেটওয়েগুলো থেকে যথাসময়ে টাকা বুঝে না পাওয়ার এমন অনেক অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি ই-ক্যাব। এক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, গ্রাহক পণ্য বুঝে পেল কি না তা যাচাইয়ের পর ই-কমার্স কোম্পানির কাছে পণ্যের দাম পৌঁছে দেওয়ার নতুন নিয়ম অনুসরণ করতে গিয়েই কিছুটা ‘বিলম্ব’ হচ্ছে। নিয়মের গ্যাড়াকলে পড়ে এখন উল্টো ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর কয়েক শত কোটি টাকা আটকে পড়েছে। গত ৪ জুলাই নতুন এই নিয়ম চালু করা হয়। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে মাসের পর মাস পণ্য সরবরাহ না করার অসংখ্য অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা’ তৈরি করে।
এ নির্দেশিকা অনুযায়ী, গ্রাহক সরাসরি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে টাকা দেবেন না। তাদের জমা দেওয়া অগ্রিম অর্থ থাকবে পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে। আর গ্রাহকের টাকা জমা দেওয়ার সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রাহক পণ্য বুঝে পেয়েছে এই নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই শুধু কোম্পানিগুলোর অধিকারে টাকা পাঠাতে পারবে পেমেন্ট গেটওয়েগুলো। আলেশা মার্ট, কিউকুমসহ অন্তত ১৬টি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ইক্যাবের কাছে পেমেন্ট গেটওয়েতে তাদের টাকা আটকা থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছে। ইক্যাবের মহাসচিব আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লেনদেন করতে গেলে একটি সমস্যার সমাধান হয়ে আরেকটি সমস্যার জন্ম দেবে। এখন বাস্তবে সেটাই হতে চলেছে।” সংগঠনের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, কিউকুম নামের একটি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম ৪০০ কোটি টাকা গেটওয়েতে আটকা পড়েছে বলে অ্যাসোসিয়েশনকে লিখিত আকারে জানিয়েছে। এমনকি গত জুলাই মাসে পণ্য ডেলিভারি করা হয়েছে এমন কিছু টাকা এখনও আটকে আছে বলে ইক্যাবকে জানায় কিউকুম। তবে কিউকুম লিখিত আকারে জানালেও বাকিরা জানিয়েছে মৌখিক। যেসব প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে, তাদের অনেকেই ইক্যাবের সদস্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস গেটওয়ের ডিজিএম রাফেজা আক্তার বলেন, জুলাই থেকে গ্রাহক পণ্য বুঝে পেয়েছে কিনা সেটা এখন ম্যান্যুয়াল পদ্ধতিতে যাচাই করা হচ্ছে। একারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেমস থেকে টাকা সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টা নতুন এখনও স্বয়ংক্রিয় কোনো সিস্টেম এখানে দাঁড়ায়নি। তাই টাকা আটকে রেখে বা টাকা দিচ্ছে না এই কথাটি সঠিক নয়। বর্তমান সিস্টেমে কিছু ক্ষেত্রে একটু ডিলে হতে পারে। তবে জুলাইতে চালু এই ম্যানুয়াল পদ্ধতির জায়গায় নতুন কোনো প্রযুক্তি প্রবর্তনের বিষয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরের (পিএসও) ভাবার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা ই-কমার্সের টাকা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ


























