ঢাকা ০৮:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজ চাষ নিয়ে হতাশায় কৃষক

  • আপডেট সময় : ০১:৪২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

ষি ও কৃষক ডেস্ক : জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজের প্রতি কেজি চারা গত বছর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের বীজ গত বছর ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবছর তা বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। এবার জেলায় লাল তীর কিং, মেটাল কিং, তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১ এবং কিং সুপার জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।
পাবনা জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর, বেড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ কুপিয়ে দিচ্ছেন, কেউ বা ক্ষেতে বালাইনাশক স্প্রে করছেন। অন্যদিকে কিছু কিছু কোম্পানির প্রতিনিধি এসে তাদের কীটনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। নতুন হালি পেঁয়াজ নিয়ে চাষিদের যেমনি স্বপ্ন তেমিন মুড়ি পেঁয়াজে স্বপ্ন ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। অভিজ্ঞ চাষিদের আক্ষেপ পেঁয়াজ চাষ করে তারা খুব কমই লাভের মুখ দেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে চাষিরা জানান, লাভ কম হলেও পৈত্রিক পেশা তারা ধরে রখেছেন। পেঁয়াজ চাষে কিছু লাভ থাকলে তারা স্বচ্ছলভাবে চলতে পারেন। লাভ না হলে তাদের ধার-দেনা করে চলতে হয়।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বড় পেঁয়াজের মাঠ কুমিরগাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় অন্য একরকম দৃশ্য। বিল গ্যারকা পাড়, বিল গাজনা পাড়, বামনডাঙ্গা, বামনদি ও ইসলামপুর মাঠে গিয়েও দেখা যায় পেঁয়াজের মাঠ সরগরম। চাষিরা কাজে বেশ ব্যস্ত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা পেঁয়াজ চাষের বিশাল খরচের হিসেব তুলে ধরছেন।
চাষিরা জানিয়েছেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চাষের খরচ বেড়েছে। সারের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয় কীটনাশকের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি আফতাব উদ্দিন, কুমিরগাড়ী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আরশেদ খাঁন ও কানু খাঁনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ বীজ কেনা, চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা ভাড়া করতে হয়।
জমি চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন তাদের বিঘা প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা লিজমানি জমি মালিককে দিতে হয়। এজন্য তাদের খরচ হয় আরও বেশি। এছাড়া অনেক চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন। পেঁয়াজ চাষ প্রধান এলাকা সাঁথিয়ার বিল গ্যারকা পাড়ের চাষি ইয়াজ উদ্দিন খাঁন জানান, পেঁয়াজের দাম বাড়লে জমির বার্ষিক লিজ মানিও বাড়ে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিল গ্যারকা পাড়ের জমিতে বার্ষিক লিজমানি এবছর প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকা। তারা জানান, এক বিঘায় পেঁয়াজের গড় ফলন হয় ৪০- ৫০ মণ। সে হিসেবে ৬০০-৭০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলে চাষির উৎপাদন খরচ ওঠে না।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ কেউ হিসেব করেন না, হিসেব করেন শুধু কত টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তারা বলেন, বছরের পর বছর ধরে পেঁয়াজের দাম কম থাকবে, এ ধারণাটা চাষিদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা মনে করছেন, দেশে সব কিছুর দাম বাড়ছে, জনগণের আয় বাড়ছে। তাই মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজের দামও প্রতিবছর বাড়লেই কেবল চাষিরা লাভবান হতে পারবেন।
সাঁথিয়ার পদ্মবিলা গ্রামের চাষি রতন আলী বলেন, তারা অন্যের জমি বার্ষিক লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন। পেঁয়াজ চাষ করে কোনো বছর লাভ আবার কোনো বছর ক্ষতি হয়। তিনি জানান, ক্ষতি হলে বছরে অন্য দুটি ফসল চাষ করে তারা সে ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করেন।
এবার অসময়ে দুই দফায় বৃষ্টিতে মাটি ভেজা থাকায় গাছে অতিরিক্ত শেকড়ে ভরে গেছে। এতে পেঁয়াজ আকারে ছোট হবে বলে তারা মনে করছেন। বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি আব্দুর রাজ্জাক ও হযরত আলী জানান, এবার অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পেঁয়াজের বেশ ক্ষতি হয়েছে। নতুন শেকড়ে ভরে গেছে। কিন্তু পেঁয়াজের আকার বাড়ছে না। এতে স্বাভাবিকভাবেই ফলন কমে যাবে। এতে চাষিদের ক্ষতি হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কৃষকরা এখন পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকদের অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ। এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষে উপযোগী। সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এবছর মৌসুমের শেষের দিকে চাষিরা হালি পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছেন। এজন্য কৃষকরা এবার পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।-

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পেঁয়াজ চাষ নিয়ে হতাশায় কৃষক

আপডেট সময় : ০১:৪২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ষি ও কৃষক ডেস্ক : জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজের প্রতি কেজি চারা গত বছর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের বীজ গত বছর ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবছর তা বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। এবার জেলায় লাল তীর কিং, মেটাল কিং, তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১ এবং কিং সুপার জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।
পাবনা জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর, বেড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ কুপিয়ে দিচ্ছেন, কেউ বা ক্ষেতে বালাইনাশক স্প্রে করছেন। অন্যদিকে কিছু কিছু কোম্পানির প্রতিনিধি এসে তাদের কীটনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। নতুন হালি পেঁয়াজ নিয়ে চাষিদের যেমনি স্বপ্ন তেমিন মুড়ি পেঁয়াজে স্বপ্ন ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। অভিজ্ঞ চাষিদের আক্ষেপ পেঁয়াজ চাষ করে তারা খুব কমই লাভের মুখ দেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে চাষিরা জানান, লাভ কম হলেও পৈত্রিক পেশা তারা ধরে রখেছেন। পেঁয়াজ চাষে কিছু লাভ থাকলে তারা স্বচ্ছলভাবে চলতে পারেন। লাভ না হলে তাদের ধার-দেনা করে চলতে হয়।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বড় পেঁয়াজের মাঠ কুমিরগাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় অন্য একরকম দৃশ্য। বিল গ্যারকা পাড়, বিল গাজনা পাড়, বামনডাঙ্গা, বামনদি ও ইসলামপুর মাঠে গিয়েও দেখা যায় পেঁয়াজের মাঠ সরগরম। চাষিরা কাজে বেশ ব্যস্ত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা পেঁয়াজ চাষের বিশাল খরচের হিসেব তুলে ধরছেন।
চাষিরা জানিয়েছেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চাষের খরচ বেড়েছে। সারের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয় কীটনাশকের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি আফতাব উদ্দিন, কুমিরগাড়ী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আরশেদ খাঁন ও কানু খাঁনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ বীজ কেনা, চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা ভাড়া করতে হয়।
জমি চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন তাদের বিঘা প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা লিজমানি জমি মালিককে দিতে হয়। এজন্য তাদের খরচ হয় আরও বেশি। এছাড়া অনেক চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন। পেঁয়াজ চাষ প্রধান এলাকা সাঁথিয়ার বিল গ্যারকা পাড়ের চাষি ইয়াজ উদ্দিন খাঁন জানান, পেঁয়াজের দাম বাড়লে জমির বার্ষিক লিজ মানিও বাড়ে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিল গ্যারকা পাড়ের জমিতে বার্ষিক লিজমানি এবছর প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকা। তারা জানান, এক বিঘায় পেঁয়াজের গড় ফলন হয় ৪০- ৫০ মণ। সে হিসেবে ৬০০-৭০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলে চাষির উৎপাদন খরচ ওঠে না।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ কেউ হিসেব করেন না, হিসেব করেন শুধু কত টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তারা বলেন, বছরের পর বছর ধরে পেঁয়াজের দাম কম থাকবে, এ ধারণাটা চাষিদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা মনে করছেন, দেশে সব কিছুর দাম বাড়ছে, জনগণের আয় বাড়ছে। তাই মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজের দামও প্রতিবছর বাড়লেই কেবল চাষিরা লাভবান হতে পারবেন।
সাঁথিয়ার পদ্মবিলা গ্রামের চাষি রতন আলী বলেন, তারা অন্যের জমি বার্ষিক লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন। পেঁয়াজ চাষ করে কোনো বছর লাভ আবার কোনো বছর ক্ষতি হয়। তিনি জানান, ক্ষতি হলে বছরে অন্য দুটি ফসল চাষ করে তারা সে ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করেন।
এবার অসময়ে দুই দফায় বৃষ্টিতে মাটি ভেজা থাকায় গাছে অতিরিক্ত শেকড়ে ভরে গেছে। এতে পেঁয়াজ আকারে ছোট হবে বলে তারা মনে করছেন। বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি আব্দুর রাজ্জাক ও হযরত আলী জানান, এবার অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পেঁয়াজের বেশ ক্ষতি হয়েছে। নতুন শেকড়ে ভরে গেছে। কিন্তু পেঁয়াজের আকার বাড়ছে না। এতে স্বাভাবিকভাবেই ফলন কমে যাবে। এতে চাষিদের ক্ষতি হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কৃষকরা এখন পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকদের অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ। এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষে উপযোগী। সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এবছর মৌসুমের শেষের দিকে চাষিরা হালি পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছেন। এজন্য কৃষকরা এবার পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।-