কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: রবি মৌসুম শুরু হওয়ায় মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে চারা লাগানোর কাজ। সবুজ চারা আর কৃষকদের নিরলস পরিশ্রমে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠেছে জেলার কৃষিজমি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের দাবি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ হওয়ায় এবার পেঁয়াজের উৎপাদন হবে ৭০ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে জেলার ৭ উপজেলায় ৪ হাজার ১৪৯ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ চাষ করে উৎপাদন হয় ৬৫ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ৪৩০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে।
কৃষকরা দলবদ্ধভাবে জমি প্রস্তুত করে সারি ধরে চারা রোপণ করছেন। কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ সার প্রয়োগ করছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত পানির সুবিধা থাকায় ভালো ফলনের আশায় আছেন তারা।
কৃষকরা জানান, মানিকগঞ্জ জেলার মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এটি এখানকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। বাজারে চাহিদা ভালো থাকলেও চলতি মৌসুমে সার সংকট ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে ফলন ভালো হলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি গ্রামের জিন্নাত আলী মোল্লা বলেন, ‘গত বছর তিন বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ করেছিলাম। অনেক খরচ হয়েছিল লস গুনতে হয়েছে। এবারো তিন বিঘা জমিতেই পেঁয়াজ চাষ করবো। কৃষিকাজ তো আর বাদ দেওয়া যাবে না। প্রতি বিঘায় কম হলেও ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে।’
কুটিরহাটখোলা গ্রামের হজরত ফকির বলেন, ‘আমাদের এই এলাকার পেঁয়াজ ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা পূরণ করে। তবে পেঁয়াজ চাষে লাভ নেই বললেই চলে। অনেক বেশি খরচ পেঁয়াজ চাষে।’
প্রতি বছর প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন হরিরামপুর উপজেলার জাকির হোসেন তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের যে বাজারমূল্য এই মুহূর্তে আছে, যদি এভাবে থাকে গত বছর যে লস হয়েছিল কৃষক ক্ষতিটা পুষিয়ে উঠতে পারবে। যদি এই ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তাহলে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে। এখন যে মৌসুম চলছে এটাকে আমরা হালি পেঁয়াজের মৌসুম বলি। এই মৌসুমে স্যারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। একজন কিছু হিসেবে সরকারের কাছে আমার আবেদন কৃষিপণ্য সার বীজ এগুলো যেন সহজলভ্য হয়।’
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৭ হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হালি বা চারা পেঁয়াজ ৪ হাজার ৪৫২ হেক্টর, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৩ হাজার ৩৮৬ হেক্টর এবং বীজ পেঁয়াজ ২৯ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হবে। এরই মধ্যে ৪৩০ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে বাকি জমিতেও আবাদ শেষ হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ হওয়ায় এবার পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছি।’
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ




















