প্রযুক্তি ডেস্ক: প্রতি বছর ৪ সেন্টিমিটার করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। এই ধীরগতির প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চললেও, ভবিষ্যতে এর প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকার পেছনে চাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই চাঁদের অবস্থানে বড় কোনো পরিবর্তন হলে, পৃথিবীর পরিবেশ এবং জীবজগতে তার প্রতিক্রিয়া দেখা যেতেই পারে।
মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ডিকারবি বলেন, জোয়ার-ভাটার শক্তি এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতির ফলেই চাঁদ ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন, চাঁদের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হয়। এই জোয়ারের স্ফীতি পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি চাঁদের কক্ষপথের তুলনায় সামান্য এগিয়ে রাখে। ফলে পৃথিবীর গতি চাঁদকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়। এই ঠেলার ফলে চাঁদ অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করে এবং তার কক্ষপথ প্রসারিত হয়—অর্থাৎ, সে পৃথিবী থেকে আরও দূরে সরে যায়।
এদিকে, চাঁদও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীর ঘূর্ণনগতিকে ধীর করে দেয়। এর ফলস্বরূপ, দিনে সময় বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি শতাব্দীতে দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২.৩ মিলিসেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই পুরো প্রক্রিয়া পদার্থবিজ্ঞানের ‘কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষণ নীতি’-র উপর নির্ভরশীল। এই নীতি অনুযায়ী, একটি আবদ্ধ ব্যবস্থার মোট কৌণিক ভরবেগ অপরিবর্তিত থাকে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়ায় চাঁদের কক্ষপথের গতি বাড়ে এবং সে পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়।
চাঁদের এই দূরত্ব পরিবর্তন নির্ণয়ে বিজ্ঞানীরা ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠে প্রতিফলক স্থাপন করেন। সেই প্রতিফলক থেকে লেজার রশ্মি পাঠিয়ে প্রতি বছর চাঁদের দূরত্ব মেপে দেখা হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান গতি অনুযায়ী এই সরে যাওয়া কোনো তাত্ক্ষণিক বিপদের কারণ নয়। তবে কোটি কোটি বছর পর, পৃথিবীর দিন হবে আরও দীর্ঘ, আর সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার তীব্রতা কমে আসবে। এটি জীববৈচিত্র্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ক্যালটেক) গ্রহবিজ্ঞানী ডেভিড স্টিভেনসন বলেন, চাঁদের এই ধীর সরে যাওয়া সৌরজগতের ইতিহাস এবং পৃথিবী-চাঁদের সম্পর্ক বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে পৃথিবীর দিন ছোট ছিল, ভবিষ্যতে তা আরও দীর্ঘ হবে।
চাঁদ ও পৃথিবীর সম্পর্ক এক অদ্ভুত ভারসাম্যে বাঁধা। যদিও এই পরিবর্তন এতটাই ধীর যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোনো প্রভাব পড়ে না, কিন্তু মহাকালের বিচারে এটি একটি বড় ঘটনা।
ওআ/আপ্র/১৮/০৯/২০২৫