জেন গিলবার্ট: ২০২১ সালের মে মাসে বিশ্বে প্রথম হিট অফিসার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মায়ামি শহরে নিয়োগ পান জেন গিলবার্ট। তার মূল কাজ প্রচ- তাপপ্রবাহের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় যে জায়গাগুলোতে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো নির্দিষ্ট করে খুঁজে বের করা। জেন পড়াশোনা করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে। পরবর্তীতে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
চিফ হিট অফিসার হিসেবে তার কাজ সম্পর্কে জেন জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কিংবা হারিকেনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও প্রচ- তাপপ্রবাহ জলবায়ু পরিবর্তনে মূখ্য ভূমিকা রাখছে। তারা প্রথমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন, তারপর টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য বিভাগ, জাতীয় আবহাওয়া সেবা, বিশ্ববিদ্যালয় খাত ও সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠনের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সভা-সেমিনারের আয়োজন করেন।
এলেনি মাইরিভিলি: ইউরোপে প্রথম ও বিশ্বের দ্বিতীয় চিফ হিট অফিসার হিসেবে গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্সের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এলেনি মাইরিভিলি। তিনি ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক চিফ হিট অফিসার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এলিসাভেট বারগিয়ান্নি: এলেনি মাইরিভিলি এ বছরের মার্চে জাতিসংঘের বৈশ্বিক চিফ হিট অফিসার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতে চলে গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হন এলিসাভেট বারগিয়ান্নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও আর্থিক খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে কাজ করে ইতোমধ্যে এলিসাভেট বেশ সমাদৃত হয়েছেন।
ইউজেনিয়া কার্গবো: আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউন শহরের তাপমাত্রা নানাবিধ কারণে ক্রমেই বাড়ছে। এ থেকে নিস্তারের জন্য ফ্রিটাউনে ২০২১ সালের নভেম্বরে চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ইউজেনিয়া কার্গবোকে।
কার্গবো তাঁর দুই সন্তানের মতো ফ্রিটাউনের সকল নাগরিককে মুক্তভাবে শহরের রাস্তায় হাঁটার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে চান। কোনো নাগরিকের যেন ঘরের বাইরে হিট স্ট্রোকের ভয় না থাকে, নগরে সেই পরিবেশ তিনি তৈরি করতে চান। সেকারণে প্রচ- তাপপ্রবাহ ঠেকাতে কার্গবো গাছ লাগানো থেকে শুরু করে বর্জ্য সংগ্রহ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত।
ক্রিস্টিনা হুইডুব্রো টর্নভাল: ২০২২ সালের নভেম্বরে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান ক্রিস্টিনা হুইডুব্রো টর্নভাল। পৌর ও আঞ্চলিক—উভয় স্তরেই পাবলিক পলিসি, নগর-পরিকল্পনা এবং স্থানীয় উন্নয়নে প্রকল্প সমন্বয় বিষয়ে ক্রিস্টিনা প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করে আসছেন। প্রতিবছর চিলির রাজধানী শহর সান্তিয়াগোতে প্রচ- দাবদাহের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। দাবদাহে মৃতের এই সংখ্যা অন্যান্য সম্মিলিত সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও সংখ্যায় বেশি। এ ছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টির কারণে শহরে চাহিদার তুলনায় পানির সরবরাহ কমে যায়। এসব বিষয়কে বিবেচনায় রেখে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সান্তিয়াগো শহরে ক্রিস্টিনাকে চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ক্রিস্টিনা মিলনে ও টিফানি ক্রফোর্ড: বিশ্বের অন্যান্য শহরে একজন করে চিফ হিট অফিসার থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বর্তমানে আছেন দুজন চিফ হিট অফিসার। তাঁদের একজনের নাম ক্রিস্টিনা মিলনে, অন্যজন টিফানি ক্রফোর্ড। মেলবোর্ন হচ্ছে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া বিশ্বের ষষ্ঠ শহর। মিলনে ও ক্রফোর্ড প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্তগুলো অর্জনের পাশাপাশি মেলবোর্নকে একটি প্রাণবন্ত ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণের শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।
বুশরা আফরিন: ২০২৩ সালের মে মাসে এশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসার পদে দায়িত্ব পান বুশরা আফরিন। বলাবাহুল্য, বুশরাকে চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অ্যার্ডিয়ান আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন’।
কানাডায় গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে লেখাপড়া করার পাশাপাশি শক্তি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে বুশরা আফরিনের। প্রচ- দাবদাহের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা এবং নগরে ‘হিট আইল্যান্ডের’ প্রভাব কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করাই বুশরা আফরিনের প্রধান কাজ। সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে, সকলের সহযোগিতায় ঢাকাকে তাপপ্রবাহ থেকে মুক্ত করে মানুষের বসবাসের জন্য তৈরি করার দৃঢ় প্রত্যয় জানালেন নতুন নিয়োগ পাওয়া বুশরা আফরিন।