প্রত্যাশা ডেস্ক : পৃথিবীকে ওপর থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য নতুন একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
স্পেসএক্স-এর রকেটে পাঠানো এ স্যাটেলাইটটির নাম ‘পেইস’। এর লক্ষ্য হল, পৃথিবীর সমুদ্র ও বায়ুম-ল নিয়ে জরিপ চালিয়ে জলবায়ু বিজ্ঞানে সহায়তা করা। মিশনটির পেছনে মোট খরচ পড়েছে ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালের আগেই ফ্লোরিডা থেকে ফ্যালকন রকেটে উৎক্ষেপিত হয় স্যাটেলাইটটি, যা পরবর্তীতে এক বিরল মেরুঅঞ্চলীয় কক্ষপথে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে উড়ে গেছে।
গবেষণার লক্ষ্যে ভূপৃষ্ঠ থেকে পৌনে সাতশ কিলোমিটার ওপর অন্তত তিন বছর সময় কাটাবে স্যাটেলাইটটি। প্রতিদিন দুটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র দিয়ে গোটা বিশ্বকে স্ক্যান করবে স্যাটেলাইটটি। আর প্রতি মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন খুঁটিনাটি পরিমাপ করবে আরেকটি যন্ত্র। “আমাদের গ্রহের অভুতপূর্ব দৃশ্য দেখাবে এটি,” বলেন প্রকল্পটিতে কাজ করা বিজ্ঞানী জেরেমি ওয়ারডেল।
গবেষণাটি হারিকেন বা অন্যান্য বিপজ্জনক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীতে ঘট পরিবর্তনের বিস্তারিত তথ্য দিতে ও পানিতে ক্ষতিকর শেওলার মাত্রা বেড়ে যাওয়া সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি শনাক্তে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। পৃথিবী পর্যবেক্ষণের জন্য এরইমধ্যে দুই ডজনের বেশি স্যাটেলাইট ও যন্ত্র কক্ষপথে পাঠিয়েছে নাসা। তবে, দূষিত প্রাকৃতিক গ্যাস, আগ্নেয়গিরির ছাই বা সামুদ্রিক অ্যালজি ও প্ল্যাঙ্কটন সম্পর্কে এর চেয়েও বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে পেইসের। “অন্যান্য পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইটের তুলনায় পেইস আমাদের কাজে নতুন মাত্রা যোগ করবে,” বলেন নাসার ভূ-বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ক্যারেন সেইন্ট জার্মেইন। পেইস-এর পূর্ণরূপ হল ‘প্ল্যাঙ্কটন, অ্যারোসল, ক্লাউড, ওশান ইকোসিস্টেম’, যা এখনপর্যন্ত সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সবচেয়ে আধুনিক মিশন। ওয়ারডেলের মতে, এ মূহুর্তে যেসব পৃথিবী পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইট মহাকাশ কক্ষপথে অবস্থান করছে, সেগুলো সাতটি বা আটটি রং দেখতে সক্ষম।
অন্যদিকে, পেইস দেখতে পারে দুইশটি রং, যা বিজ্ঞানীদেরকে বিভিন্ন সামুদ্রিক অ্যালজির পাশাপাশি বাতাসের বিভিন্ন উপাদান শনাক্ত করার সুযোগ করে দেবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, তারা এক বা দুই মাসের মধ্যেই এর ডেটা সংগ্রহ শুরু করতে পারবেন। এদিকে, এ বছর পৃথিবী পর্যবেক্ষক আরেকটি উন্নতমানের স্যাটেলাইট মহাকাশ কক্ষপথে পাঠাতে ভারতের সঙ্গে জোট বাঁধছে নাসা। ‘নিসার’ নামের এ স্যাটেলাইটটি রেডার ব্যবহার করে হিমবাহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব ও বরফগলিত এলাকাগুলোর অন্যান্য খুঁটিনাটি পরিমাপ করবে। ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করলেও নাসার পেইস প্রকল্পটি ঠিকই অগ্রসর হয়েছে। “এটা একটা দীর্ঘ ও অদ্ভুত এক অভিযান ছিল,” স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে বলেছেন ওয়ারডেল।